reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৮

মূর্খ নই তবে স্বার্থপর

দেশের কর্ণধারদের কি আমরা মূর্খ বলতে পারি! কখনোই না। তবে কি স্বার্থপর বলা যায়? যায়। মানুষ মাত্রেই স্বার্থপর। সে কারণে তিনি বা তারা স্বার্থপর হলেও হতে পারেন। কিন্তু সবাই এক রকম নয়। হাতের পাঁচ আঙুলের মতো কেউ কম, কেউ বেশি। যারা স্বার্থপরতার ঊর্ধ্বে তারা ব্যতিক্রম। সংখ্যায় এরা অনেক কম হলেও, এরা আছেন। আর আছেন বলেই সম্ভবত সমাজব্যবস্থা এখনো ভেঙে পড়েনি। কিন্তু এভাবে আর কত দিন!

বেশি দিন নয়। এভাবে চলতে থাকলে দ্রুতই হারিয়ে যাবে নৈতিকতা। আমরা হারিয়ে ফেলব আমাদের ন্যায়নীতির পঙ্্তিমালা। বর্ণমালা হারিয়ে যাবে। হারাবে ঐতিহ্যময় ইতিহাস। যেভাবে হারাতে বসেছে মাদারীপুরের সমাদ্দার ব্রিজ-সংলগ্ন বধ্যভূমিটি। এটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হলেও তা থেকে গেছে সংরক্ষণের বাইরে। স্মৃতিস্তম্ভের পাশে সংরক্ষিত হয়েছে বাজারের ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়। এলাকাজুড়ে গরু-ছাগলের চারণভূমি।

রক্ষণাবেক্ষণের জন্য গত বছর এই বধ্যভূমি পেয়েছিল ১১ লাখ টাকা। কিন্তু সে টাকা দিয়ে কতটুকু রক্ষণাবেক্ষণ হয়েছে, তা জানা যায়নি। রক্ষণাবেক্ষণ হয়ে থাকলে আজকে এই বেহাল দশা কেন? ২০০৪ সালে ৩৫টি বধ্যভূমিতে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের জন্য একটি বিশেষ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। ২০০৮ সাল পর্যন্ত এই প্রকল্পে ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দও দেওয়া হয়। কিন্তু তথ্য-উপাত্ত ও পরিসংখ্যান বলছে, বেশির ভাগ বধ্যভূমিতে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়নি। যেগুলো করা হয়েছে, সেগুলোর অবস্থাও নাজুক। ২০১০ সালে বর্তমান সরকার আবার বধ্যভূমি সংরক্ষণের প্রকল্প হাতে নেয়। কিন্তু গত আট বছরে ঘুম ভাঙেনি কুম্ভকর্ণের।

গত বছর ১১ সেপ্টেম্বর সরকার আবার ২৭১টি বধ্যভূমি সংরক্ষণের জন্য ৪৪২ কোটি টাকার প্রকল্প একনেকে পাস হয়। ২০২১ সালের মধ্যে তা বাস্তবায়ন করা হবে। তবে এখানে একটি প্রশ্ন উত্থাপিত হতে পারে। ২০১০ সালে প্রকল্প হাতে নেওয়ার পর তা পাস হয়ে আসতে আট বছর লাগলে ৪৪২ কোটি টাকার প্রকল্প শেষ হতে কত বছর লাগবে? এ প্রশ্নের জবাব আমাদের হাতে নেই। আমরা কেবল তথ্য-উপাত্তের কথা বলতে পারি। ২০০৮ সালে নেওয়া ৬০ কোটি টাকার প্রকল্পের বাস্তবতা আমরা জানি। ঘর পোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলেই ভয় পাবে এবং এটাই স্বাভাবিক। আজ আমাদের সঙ্গে ঘর পোড়া গরুর কোনো পার্থক্য নেই। অন্তত বাস্তবতা সেই কথা বলছে।

শুধু কি মাদারীপুর বধ্যভূমির অবস্থাই ভঙ্গুর! বাংলাদেশের সর্বত্রই সেই একই দৃশ্য। কেবল বধ্যভূমিই নয়; আমাদের স্মৃতিসৌধেরও একই দশা। বছরের একটি দিনের জন্য এ সৌধগুলো সাজগোজের সুযোগ পায়। বাকি সময়টা থাকে অনাদরে-অবহেলায়। শুরুতেই বলেছি, আমরা মূর্খ নই, স্বার্থপর। নিজের বাইরে ভাবার সময় কোথায়! নিজের স্বার্থ সংরক্ষণ করতে গিয়ে সর্বজনীন স্বার্থকে বিসর্জন দিতে হচ্ছে। আর সে কারণেই আমরা মনে করি, এসব স্মৃতিস্তম্ভগুলোকে পর্যটনের আওতায় এনে একে অনেক বেশি নান্দনিক করে গড়ে তুলে তা বছরভিত্তিক সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক এবং প্রতিটি স্মৃতিসৌধের ইতিহাস সংরক্ষণ ও প্রচারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। তাহলে হয়তো আমরা দাবি করতে পারব, ‘ মূর্খ হলেও আমরা স্বার্থপর নই’।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close