অ্যাড. শেখ সালাহউদ্দিন আহমেদ

  ০৬ ডিসেম্বর, ২০১৮

মতামত

গণতন্ত্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

দশম সংসদ দেশ-বিদেশে সর্বজনস্বীকৃত হতে পারেনি। অতঃপর আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচন যাতে অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হতে পারেÑএ ধরনের একটি আকাঙ্খা তৈরি হয়েছে সর্বসাধারণের মধ্যে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, এ নির্বাচন নিয়ে জনমনে সংশয় দূর হচ্ছে না। নির্বাচনটি আদৌ অংশগ্রহণমূলক হবে কি নাÑ হলে তা কতটা অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে, সে প্রশ্নও রয়েছে জোরালোভাবে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আগামী দিনগুলোর রাজনীতিও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

আমরা একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেখতে চাই। রাজনৈতিক দলগুলোর ইতিবাচক মনোভাবের প্রতিফলন দেখতে চাই। রাজনৈতিক সহিংসতা নয়, সহিষ্ণুতার পরিচয় প্রতিফলিত হোক আজকের নির্বাচনে। নির্বাচন কমিশন নির্বাচনী ব্যবস্থাপনায় নিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক মনোভাবের মাধ্যমে যাতে দায়িত্বশীল আচরণ করতে পারে, সে জন্য সরকারি দলকেই অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করে।

দলীয় সরকারের অধীনে হতে যাচ্ছে এবারের জাতীয় নির্বাচন। আমাদের দেশে দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর কখনোই ইতিবাচক অবস্থানে ছিল না। এর কারণ ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আস্থা ও বিশ্বাসের সংকট। কেউ কাউকে বিশ্বাস করে না। ফলে অতীতে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করা নিয়ে অনেক আন্দোলন-সংগ্রাম হয়েছে এবং সেসব নির্বাচন হতে দেওয়া হয়নি।

দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হওয়া নিয়ে নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষ অবস্থানে থেকে অত্যন্ত কঠোর ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া কাম্য। কারণ এবারের নির্বাচন সংসদ বহাল রেখে দলীয় সরকারের অধীনে হওয়া নিয়ে এমনিতেই নানা মহলে শঙ্কা কাজ করছে। এর কারণ ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে বহু আগে থেকেই অভিযোগ উঠেছে, তারা তাদের মতো করে প্রশাসন সাজিয়েছে এবং দলীয়করণ করেছে। এ অবস্থায় একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন হওয়া নিয়ে বেশির ভাগ মানুষের মধ্যে সন্দেহ রয়েছে। এ সন্দেহ দূর করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের।

গণতন্ত্রে নির্বাচনের মাধ্যমেই কোনো রাজনৈতিক দল ক্ষমতাসীন হয়। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জনগণই ক্ষমতার মূল উৎস। জনগণই রাজনৈতিক ক্ষমতার মালিক-মোক্তার। যারা ক্ষমতাসীন হলেন জনগণের সম্মতি নিয়েই, ক্ষমতাসীন হলেন নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। ওই সময় অতিক্রান্ত হলে জনগণের কাছেই ফেরত যেতে হয়। নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণই নির্ধারণ করে, কারা ক্ষমতাসীন হবেন সেই সুনির্দিষ্ট সময়ের জন্য। তাই বলা হয়, সবচেয়ে উত্তম পন্থা হলো নির্বাচনকে সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গ্রহণযোগ্য করা। জনগণের দ্বারা নির্বাচিত কোনো ব্যক্তি বা সংস্থা বা জাতীয় সংসদ (আমাদের ক্ষেত্রে) সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী নয়। এ কথা সব সময় স্মরণযোগ্য।

প্রশাসন যাতে নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারে নির্বাচন কমিশনের সে ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া অত্যাবশ্যক। নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্য কমিশনাররা বক্তব্য দেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। এমন কোনো বক্তব্য দেওয়া উচিত নয়, যাতে মানুষের মনে তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা ও সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। তাদের উচিত কথার চেয়ে কাজে বেশি মনোযোগ দেওয়া। নির্বাচনকে সুষ্ঠু করার জন্য যত ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার, তা যথাযথভাবে নেওয়া। তাদের মনে রাখতে হবে, আগামী জাতীয় নির্বাচনটি দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং গণতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তারা যদি তা সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য করে তুলতে না পারেন, তবে তারা যেমন ব্যর্থ হিসেবে পরিগণিত হবেন, তেমনি দেশও গভীর সংকটের মধ্যে পড়বে। এর পুরো দায়িত্ব তাদের ওপরই বর্তাবে।

নির্বাচনে সমতল ভূমি তৈরির দায় সর্বাগ্রে সরকারেরই। দলীয় কিংবা ব্যক্তিগতভাবে হারজিতের প্রশ্নটি মুখ্য নয়। মুখ্য হলো গণতন্ত্রের জয়ের বিষয়টি। গণতন্ত্র জয়ী হলে বাকি সবকিছু এমনিতেই সুন্দর ও স্বচ্ছ হবে।

লেখক : অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close