reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৯ নভেম্বর, ২০১৮

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন

থমকে গেছে প্রত্যাবাসন। এ মুহূর্তে তাদের আর নিজভূমে ফেরা হচ্ছে না। যদিও ফেরার একটি সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু মিয়ানমার সরকারের স্বদিচ্ছার অভাবে তা কার্যকর হতে পারেনি। কেবল জাতিসংঘের অভিমতই নয়, প্রত্যাবাসন প্রশ্নে বাংলাদেশ সরকারও সেই একই অভিমত ব্যক্ত করেছে। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, রোহিঙ্গাদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো হবে না। জাতিসংঘও সেই একই কথা বলেছে। তাদের বক্তব্যে বলা হয়, প্রথমে তাদের নাগরিকত্ব নিশ্চিত করতে হবে। ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। ফিরিয়ে দিতে হবে তাদের জীবনের নিরাপত্তা। সর্বোপরি নিজভূমে বসবাস করার মতো উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে হবে। এর বাইরে প্রত্যাবাসন সম্ভব নয়। তারা আরো বলেন, জেনেশুনে জাতিসংঘ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আবার একটি গণহত্যার মুখে ঠেলে দিতে পারে না।

সম্প্রতি প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়, মিয়ানমারে গত ১৪ মাসে ৬৬৯ শিশুকে হত্যা করা হয়েছে। এদের বেশির ভাগই রোহিঙ্গা। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাই রাজ্যে বর্বর সেনা অভিযানের পর থেকে বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে মিয়ানমার শিশুরা। মিয়ানমারে যে হত্যা, ধর্ষণ ও বিকলাঙ্গ করে দেওয়ার মতো নৃশংসতা চলছে, তা সম্প্রতি প্রকাশিত প্রতিবেদটিতেও উল্লিখিত হয়েছে।

এ ছাড়া রোহিঙ্গা নিপীড়ন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের নিন্দা জানিয়ে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে জাতিসংঘ আবার একটি নিন্দা প্রস্তাব পাস করে গত শুক্রবার। প্রত্যাবাসন থমকে যাওয়ার পর এটি জাতিসংঘের দ্বিতীয় দফায় নিন্দা প্রস্তাব। প্রস্তাবে রোহিঙ্গাদের টেকসই ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন এবং প্রত্যাবাসনের পর তাদের নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গে বসবাসের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। ইইউ ও ওআইসি যৌথভাবে প্রস্তাবটি উত্থাপন করে এবং ১৪২-২৬ ভোটে প্রস্তাবটি পাস হয়। চীন, রাশিয়া, কম্বোডিয়াসহ ১০টি দেশ প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেয়।

এদিকে জাতিসংঘ কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য রোহিঙ্গাদের ওপর হত্যা ও নির্যাতনের অভিযোগে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মানবতাবাদী অপরাধ তদন্তের পদক্ষেপ নেবে বলে আভাস পাওয়া গেছে। জাতিসংঘের তৃতীয় কমিটি এ লক্ষ্যে নিরপেক্ষ ম্যাকানিজম প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। এ সময় তারা বলেছে, মিয়ানমারের স্বাধীনতার অনেক আগে থেকেই রোহিঙ্গারা রাখাইনে বসবাস করে আসছে। নিপীড়নকারীদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আনার কথা উল্লেখ করে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে বলা হয়, রোহিঙ্গাদের নিরাপদে এবং মর্যাদার সঙ্গে রাখাইনে ফেরত যাওয়ার পথ প্রশস্ত করতে হবে।

এ কথা সত্য, রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দীর্ঘদিনের নৃশংসতার কারণে বিভিন্ন সময়ে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসতে বাধ্য হয়েছে। সর্বশেষ গত বছর ২৫ আগস্ট সেনাবাহিনীর নৃশংস হত্যাযজ্ঞের পর সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। আমরা মনে করি, জাতিসংঘের এই ভূমিকাকে ইতিবাচক হিসেবে গ্রহণ করে বাংলাদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। একইসঙ্গে বিদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের মধ্য দিয়ে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়াতে হবে এবং এ চাপকে নিষেধাজ্ঞায় পরিণত করতে পারলেই বাংলাদেশ সাফল্যের দরোজায় কড়া নাড়তে সক্ষম হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close