মুহাম্মদ হাসান মাহমুদ

  ১৯ নভেম্বর, ২০১৮

মতামত

অস্তিত্ব সংকটে শিক্ষার্থীরা

মানুষ স্বাধীনভাবে স্বাধীন সত্তা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। দার্শনিক ইমানুয়েল কান্টের দর্শনে ও পাওয়া যায় যদি কোনো অসত্য জোর করে স্বাধীন সত্য সত্তার ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়, তবে সেটা মানা সম্ভব নয়। আপনা থেকেই সে তার এ শৃঙ্খল থেকে বেরিয়ে আসতে চেষ্টা করে। কখনো সে এটাকে মেনে নিতে পারে না। তাকে এভাবে বেঁধে রাখা সম্ভব হয় না। কারণ সে পরাধীনতার গ্লাানিকে সহ্য করতে পারে না। প্রত্যেকের একটি স্বতন্ত্র ব্যক্তি সত্তা আছে। সে সত্তাকে কেউ বিসর্জন দিতে চায় না। পারে না। আর সেটা যদি সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত হয়, তাহলে তো কোনো কথাই নেই।

মূল প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে আরো একটি কথা বলে নেওয়া যাক। আমরা সাধারণত প্রতিটি ক্ষেত্রে একটি পক্ষে এবং একটি বিপক্ষ গ্রুপ দেখি। যেমন : সরকারি দলবিরোধী দল, মামলা-মোকাদ্দমায় বাদী-বিবাদী। এ রকমভাবে প্রতিটি ক্ষেত্রে রয়েছে দুটি গ্রুপ। তবে এটি থাকা ভালো যদি এটা আলাদাভাবে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে আলাদাভাবে থাকে। কিন্তু সেটা নিজের একদল হিসেবে একটি প্রাণ যাকে বিবেচনা করা হয়, সেখানে যদি গ্রুপ থাকে, বিচ্ছিন্নতা থাকে, ফাটল থাকে, তবে এর লক্ষ্যবস্তু কী? এ রকম একটি প্রাণে আলাদা উদ্দেশ্য, আলাদা বৈশিষ্ট্য থাকলে কখনো মূল লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব হয় না। যদি একজন ডানে যাওয়া স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন আর অন্য জন্য বামে। তখন কীভাবে শান্তি আসতে পারে একটি প্রাণের সব অঙ্গে!

আমরা জানি, সমস্যা সেটিকে বলা হয় যার সমাধান আছে। কিন্তু যার সমাধান নেই, সেটাকে কী বলা যেতে পারে? তবে কখনো কি বিরোধ মিটিয়ে এক করা সম্ভব? এতক্ষণ বলছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং সাত কলেজ বিরোধের কথা। ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সাতটি কলেজকে (ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহারাওয়ার্দী কলেজ, মিরপুর সরকারি বাংলা কলেজ, সরকারি তিতুমীর কলেজ, বেগম বদরুন্নেছা সরকারি মহিলা কলেজ, কবি নজরুল কলেজ) অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তখন থেকে সমস্যার শুরু। শুরু হয় ঢাবি বনাম সাত কলেজ ম্যাচ। যদিও এসব প্রতিষ্ঠানে সব মেধাবী চান্স পায়। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে আলাদা এক ইতিহাস, আলাদা এক গর্ব। যেখানে চান্স পাওয়া সবারই স্বপ্ন থাকে। আর এ স্বপ্নপূরণের জন্য আবার অনেকে অবৈধ পন্থা অবলম্বন করে হলেও চান্স পেতে চায়। যদিও এরা সফল হতে পারে না। যে চান্স পায় অনেক কষ্ট করে পড়াশোনা করে চান্স পেতে হয়। তাই মূল কথা হলো, যে ছেলেটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে সে কখনো চায় না যে অন্য কেউ এখানে চান্স না পেয়েও, না পড়েও তার সমকক্ষ হোক, তার সমান সুযোগ-সুবিধা পাক, যা তাদের ইগোতে খুবই বাঁধে। আর বাঁধারই কথা। গত ১৫ নভেম্বর ২০১৮ বিশ্ব দর্শন দিবস ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সাত কলেজ সে অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ করে। মজার ব্যাপার হলোÑসেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে সাত কলেজের এক ম্যাম জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘তুমি কোন কলেজের?’ এভাবে হয়তো জিজ্ঞেস করতে পারতেন যে তুমি কি এখানকার? ঢাবির না কলেজের? কিংবা কোথাকার শিক্ষার্থী? তা না করে একজন ম্যাম হয়েও তিনি তা করেননি। আবার অন্যদিকে যেসব শিক্ষক আমাদের আগে ক্লাস নিয়েছেন, এখন রিটায়ারে আছেন বা ডিপার্টমেন্টে অন্যদের ক্লাস নেন আমাদের এখন ক্লাস নেন না তাদের সঙ্গে দেখা হওয়ায় সালাম দিলে তারাও বলে বসেন, ‘তোমরা কি আমাদের? নাকি সাত কলেজের?’ এখন এমন অবস্থা হয়েছে যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে এখন আর এক নামে কেউ চেনে না। প্রশ্ন চলে আসে সাত কলেজ কি না? ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যেমনটি তার ইউনিক পরিচিতি হারাচ্ছে, তার সুনাম ক্ষুণœ হচ্ছে। অন্যদিকে সাত কলেজ ও কিছু ক্ষেত্রে সুবিধা পেলেও অনেক ক্ষেত্রেই বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। তারাও তেমন ভালো নেই, যদিও এখন তারা ঢাবির নাম বিক্রি করতে পারেন।

অতএব কেউ ভালো নেই। আর অন্য কোনো বিকল্প পথ না বের করলে, সমাধান না হলে এমনটি আজীবন চলবে। উভয় পক্ষের শিক্ষার্থীরা আজ খুবই অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে। আমি শুধু আমার ডিপার্টমেন্টের কথা বলছি, তার মানে এটা শুধু আমাদের সঙ্গে হচ্ছে তা নয়। যদি পরিসংখ্যান করা হয়, তবে দেখা যাবে ৯৯ শতাংশের ওপরে শিক্ষার্থীর সঙ্গে এটি ঘটছে। ফেসবুক টাইমলাইনে এ সমস্যাটি নিয়ে পোস্ট দিচ্ছে। আগেও এ বিষয়টির সমাধানের জন্য অনেক আন্দোলন হয়েছে। কিছু সমাধানও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আসল সমস্যা রয়েই গেছে।

লেখক : শিক্ষার্থী, দর্শন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close