reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৩ নভেম্বর, ২০১৮

একটি শুভ উদ্যোগ

জেনেভা ক্যাম্পে বসবাসরত বিহারিদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। নিঃসন্দেহে এটি একটি শুভ উদ্যোগ। আমরা সরকারের এই মানবিক সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। চাই যত দ্রুত সম্ভব এই পুনর্বাসন প্রকল্পের সফল বাস্তবায়ন। কারণ দীর্ঘদিন ধরে এই ক্যাম্প এলাকায় সাড়ে ১৪ একর জমির ওপর প্রায় ৮ হাজার ৮০০ পরিবারের ৩৫ হাজার মানুষ অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন করছে। প্রতিটি পরিবার মাত্র চার বর্গমিটারের একটি কক্ষে থাকা-খাওয়াসহ আনুষঙ্গিক পারিবারিক কার্যক্রম সম্পন্ন করছে। বলতে গেলে এসব অমানবিক দিক বিবেচনা করেই তাদের উন্নতমানের আবাসন দেওয়ার লক্ষ্যে ফ্ল্যাটসহ আনুষঙ্গিক সুবিধাদি নির্মাণের জন্য একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ। এরই অংশ হিসেবে প্রথম পর্যায়ে ৫টি ২০-তলা ভবন নির্মাণ করে ১৫২টি পরিবারকে দীর্ঘ মেয়াদে মাসিক কিস্তিতে ফ্ল্যাট দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। পরে পর্যায়ক্রমে সবাইকে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। এ জন্য প্রকল্প প্রস্তাবনা তৈরি করেছে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ।

সাতচল্লিশের দেশভাগের পর ভারত থেকে লাখ লাখ বিহারির তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান অর্থাৎ বর্তমান বাংলাদেশের প্রধান প্রধান শহরের সরকারি খাসজমিতে বসবাসের সুযোগ দেওয়া হয়। ১৯৫৮ সালে তৎকালীন সরকার ‘হাউজিং উইং’ প্রতিষ্ঠা করে বিহারিদের পুনর্বাসনের কার্যক্রম গ্রহণ করে। কিন্তু একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে পাকিস্তানের পক্ষে অবস্থান নেয় এসব উর্দুভাষী বিহারি। ফলে তাদের বিতর্কিত ভূমিকার কারণে মুক্তিযুদ্ধের পর থেকেই তারা বাংলাদেশে আটকেপড়া পাকিস্তানি হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। অন্যদিকে পাকিস্তান তাদের ফিরিয়ে নিতে বারবারই অনীহা প্রকাশ করে। এমতাবস্থায় প্রায় চার দশক ধরে তারা ক্যাম্পগুলোয় মানবেতর জীবনযাপন করছে। কয়েক প্রজন্ম এ দেশে বসবাস করলেও তাদের সন্তানরা শিক্ষা ও নাগরিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। জেনেভা ক্যাম্প হিসেবে পরিচিত বিহারি ক্যাম্পগুলোয় ছোট ছোট ঘরে ঠাঁসাঠাঁসি করে বসবাসরত এসব মানুষের মানবেতর জীবনযাপনের চিত্র আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও প্রচারিত হয়েছে। জেনেভা ক্যাম্পে বসবাসরতদের আটকেপড়া পাকিস্তানি বলা হলেও তাদের বেশির ভাগই নিজেদের ভারতীয় বংশোদ্ভূত উর্দুভাষী বাংলাদেশি নাগরিক বলে দাবি করে। কিন্তু তাদের নিয়ে অনেক রাজনীতি হলেও কোনো সরকারই তাদের রাজনৈতিক স্বীকৃতি, পুনর্বাসন ও নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেয়নি। আর সে কারণেই বর্তমান সরকারের এই পুনর্বাসন পরিকল্পনাকে অনেকে স্বাগত জানিয়েছেন। আমরাও এই উদ্যোগের সাফল্য কামনা করছি।

চলতি অর্থবছর থেকেই এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ শুরু করার লক্ষ্য রয়েছে। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই মনে রাখতে হবে, অনেক দেরিতে হলেও বর্তমান সরকার বিহারিদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিয়েছে, যা একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক থাকতে

হবে। যাতে এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে সত্যিকারের প্রতিনিধিত্বশীল উর্দুভাষী বিহারিরা সম্পৃক্ত হতে পারে এবং শান্তিপূর্ণভাবে এই পুনর্বাসন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close