শতাব্দী জুবায়ের

  ০৩ নভেম্বর, ২০১৮

মতামত

এই কালি আমার মুখে

‘ধর্মঘট’ একটি যৌক্তিক শব্দ। যদি তার পেছনের উদ্দেশ্য মহৎ হয়, হয় জনবান্ধব। ধর্মঘট যে কেউ করতে পারে, তার অধিকার আদায় করতে বা তার দাবি আদায়ের যৌক্তিকতা প্রশাসনকে জানান দিতে। বাংলাদেশে এটা হয়ে আসছে এবং ভবিষতেও হবে। সরকারকে নিজেদের জানান দিতে জনবান্ধন না হয়ে কেন জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করতে? যৌক্তিক দাবি সরকারের সামনে উপস্থাপন করতে ধর্মঘটে যেতে হবে কেন? সরকার কেন আগেই কানে নেবে না? এই অসভ্য, বর্বরতা থেকে আমাদের বের হওয়া দরকার। সারা দেশের মানুষকে জিম্মি করে আপনাদের ক্ষমতা দেখিয়েছেন। ভালো কথা কিন্তু দেশের যে হাজার কোটি টাকা ক্ষতি করেছেন। সেটা ভেবেছেন একবার?

আপনারা পরিবহন নিয়ে রাস্তায় নামবেন না এটা ভালো কথা। কিন্তু কেন প্রাইভেট গাড়ি চলতে দেওয়া হলো না, চালকদের মুখে কেন কালি মেখে দেওয়া হলো? দৃঢ় প্রত্যয়ে বলতে চাই, এই কালি শুধু চালকদের মুখে নয় বরং আমি, আপনি, পুরো দেশের মুখে, জাতির মুখে লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। সবচেয়ে বেশি কষ্ট পেয়েছি হাসপাতালে পৌঁছাতে না পারার কারণে ছয় মাসের শিশু মারা গেছে। এই নিষ্পাপ শিশুর কী দোষ ছিল? জবাব আছে আপনাদের কাছে? অসুস্থদেরও আপনারা ছাড় দেন নাই। এটা সম্পূর্ণ নৈরাজ্যের মধ্যে পড়ে। এটা আপনারা করতে পারেন না। এটা হয় না সত্যিকার অর্থে। শুধু তা-ই নয়, এমনকি পথচারীদের কান ধরে ওঠবস করানো হয়েছে। এ কেমন আচরণ, বর্বরতা। আপনি পরিবহন চালাবেন না। তাই বলে অন্যরা নিজেদের ব্যক্তিগত গাড়ি চালালে সেটা বাধা দেবেন! কান ধরে ওঠবস করাবেন! সেটা নৈরাজ্যের চরম পর্যায়।

আরো কষ্ট পেয়েছি স্কুলছাত্রীর গায়ে মবিল দেওয়া হয়েছে। তার মানে আপনারা শিশুদেরও স্কুলে যেতে দেবেন না! দেবেন না শিক্ষা গ্রহণ করতে। আপনাদের উচিত ছিল নিজেদেরর পরিবহন বন্ধ রেখেছেন এটুকুতেই সীমাবদ্ধ থাকা, এর চেয়ে বেশি কিছু না করা। আপনারা সীমালঙ্গন করেছেন। সম্পূর্ণ অন্যায় কাজ করেছেন।

বলছি না কারো ধর্মঘট করার অধিকার নেই। গণতান্ত্রিক দেশে অবশ্যই আন্দোলন করার অধিকার রয়েছে। কিন্তু সাধারণ মানুষ হিসেবে আমার হাসপাতালে যাওয়ার অধিকার রয়েছে, চিকিৎসা নেওয়ার অধিকার রয়েছে, শিশুর স্কুলে যাওয়ার অধিকার রয়েছে। এই আন্দোলন চলাকালীন যত নৈরাজ্য সৃষ্টি করা হয়েছে, তার দায়দায়িত্ব তো বাংলাদেশ পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনকেই নিতে হবে। তা কোনোভাবেই ফেডারেশন অগ্রাহ্য করতে পারে না। আইনটি যখন প্রণয়ন হলো, তখন এই কমিটির সদস্য ছিলেন এই ফেডারেশনেরই নেতারা। পাসকৃত সেই আইনে তাদের স্বাক্ষরও রয়েছে। আইনে তাদের দাবির দু-এক জায়গায় একুটু এদিক-সেদিক হয়েছে আর তারা দেশের সাধারণ মানুষকে জিম্মি করা শুরু করলেন, পরিবহন ধর্মঘটের নামে নৈরাজ্য সৃষ্টি করলেন! কোনো দাবি আদায় করতে শুধু ধর্মঘট কর্মসূচি দিলেই হবে না। শ্রমআইন অনুযায়ী নিয়মতান্ত্রিকভাবে কর্মসূচি দেওয়ার বিষয়ে সংগঠনের নেতাকর্মীরা বসে ভোটাভুটির মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, ধর্মঘট দিতে হবে, নাকি অন্য কোনো কর্মসূচি। আমি গাড়ি চালাবো না, এটা আমার গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু যারা নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছে, তারা তো আইন পরিপন্থী কাজ করেছে। এটা ফৌজদারি অপরাধ।

পরিবহন ধর্মঘটের নামে ৪৮ ঘণ্টা দেশে যা হয়েছে, তা রীতিমতো এক নৈরাজ্য। এই নৈরাজ্যের মধ্যে ১৬ কোটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ছয় বছর বয়সের শিশুর মৃত্যু হয়েছে। স্কুলগামী ছাত্রীর ইউনিফর্মে কালি মাখানো হয়েছে। যখন ধর্মঘটের নামে একজন সাধারণ মানুষের মুখে কালি মাখানো হয়, তখন আমার মুখেও কালি লাগে। আর এমন নৈরাজ্য না ঘটুক। দেশের ক্ষতি না হোক। বর্তমান সরকারের নেতৃত্বে দেশ যেমন করে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে, এই এগিয়ে যাওয়াতে বাধা দেবেন না। আপনারা আলোচনায় বসুন। সরকার পরিবহন শ্রমিকদের যৌক্তিক দাবি মেনে নিন। কৃষক, শ্রমিক, চাকরিজীবী সবাইকে নিয়েই আমাদের সোনার বাংলাদেশ। এই দেশটাকে আমরা অন্যায়, নৈরাজ্য করে পিছিয়ে না দিই।

লেখক : কলামিস্ট

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close