তথ্যপ্রযুক্তি মূল কাজটি করে ফেলেছে। সরকার তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটানোর সঙ্গে সঙ্গে যুবকদের আলাদা একটি শক্তির জোগান করে দিয়েছে, তা দ্যর্থহীন ভাষায় বলা যায়। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গ্রাফ যেভাবে ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে, তা সত্যিই আমাদের জন্য এখন গর্বের। দুর্নীতি ও নেশার জায়গায় গিয়ে যুবশক্তির অবনমের যে ব্যাপারটিতে আমরা হোঁচট খেয়ে বারবার থেমে যাই, ঠিক সেখানটাতেই সবচেয়ে বড় উন্নয়নের জায়গা রয়েছে, যদি শুধু যুবকদের একটি নির্দিষ্ট গতিতে ঘুরিয়ে কোনো কর্মমুখী কাজে তাদের সম্পৃক্ত করা যায় তবে। একটু খেয়াল করলেই দেখবেন সব যুবই চায় কাজ এবং এ প্রতিফলন দেশের কৃষি খাত, শিল্প খাত ও দেশের একেবারে মূল জায়গাগুলোতেও।

গতকালকের আগের দিনই দেখলাম জয়বাংলা ইউথ এওয়ার্ড এবং সেখানে যুবদের জয়জয়কার। সরকার যেভাবে চাইছে যুবদের কাজে লাগাতে, এটা সত্যিই বড় বেশি প্রশংসার। যুবরাও চাইছে নিজেদের কাজে লিপ্ত করতে। পাঠাও এবং উবারের মতো সাধারণ একটি গাড়ি চালানোর কাজেও এখন তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার। আধুনিকতা ও তথ্যপ্রযুক্তি আমাদের যেখানে নিয়ে গেছে সেখানে দক্ষ ও সচেতন মানুষ প্রয়োজন। যুবকরাই করছে এই কাজগুলে। কৃষিক্ষেত্রেও যুবকদের অবদান চোখে পড়ার মতো।

আমারই ছোট ভাই আছে একজন। তিনি উচ্চশিক্ষিত ও সংবাদ কর্মী। গড়ে তুলেছেন টার্কি মুরগির ফার্ম, গরুর খামার ও দেশি মুরগির খামার। আরেককজন অধিক ভালো মানুষ ও উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক । তিনি গাজীপুরের শ্রীপুরের সিংগারদীঘি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তিনি একজন ভালো খামারিও। মাছ, ডিম, ঘাস উৎপাদন থেকে শুরু করে তিনি সব কাজ করে থাকেন যুব উন্নয়ন অফিসের মাধ্যমে এবং তা থেকে তিনি পুরস্কারও গ্রহণ করেছেন।

এবার আসি নিজের ঘরের উদাহরণে। আমার স্ত্রী উচ্চশিক্ষিত একজন যুবা। তিনি বাইরে কাজ করতে আগ্রহী না। কারণ সন্তানদের দেখাশোনা। কিন্তু তার ইচ্ছে অর্থনৈতিক কাজে নিজের স¤পৃক্ততা। দেশি মুরগি পালন, বিভিন্ন ফসল উৎপাদন তার নেশায় পরিণত হয়েছে। দিনশেষে একবার কৃষিকাজ তার নিত্য রুটিন এখন। পরিকল্পনা করছেন উন্নত কৃষি নিয়ে উদ্যোক্তা হওয়ার।

এ রকম আরো যুবক রয়েছে যারা নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। তার প্রমাণ দেখলাম ইউথ এওয়ার্ডেও। এটাই ভালো লাগার ব্যাপার। নিজের কাছের যুবদের উদাহরণগুলো টেনে আনলাম এ কারণে যে, সবাই চাচ্ছে নিজেদের অর্থনৈতিক কাজে স¤পৃক্ত করতে। দেশের ছয় কোটি যুবককে যদি সঠিকভাবে কাজে লাগানো যায়, তবে এ দেশে একটি মানুষও বঞ্চনার কথা শুনবে না বা জানবে না। এজন্য যুবদের সংগঠনগুলোকে আরো শক্তিশালী করা প্রয়োজন। এলাকাভিত্তিক যুব সংগঠনের সঙ্গে সঙ্গে পুরো দেশভিত্তিক সংগঠনগুলোকেও কাজে লাগানো যেতে পারে। জাতীয় যুব সংসদ বাংলাদেশ নামে একটি সংগঠন কাজ করছে কিছুদিন যাবৎ। এই সংগঠনটি যুবকদের মেধাবিকাশ, লিডারশিপ বিল্ডআপ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, জঙ্গিবাদকে ঘৃণা করার প্রত্যয় ও যুবদের আত্মনির্ভরশীল হওয়ার পথ সৃষ্টিতে কাজ করে যাচ্ছে। এমন সংগঠনগুলোকে যদি সরকার উন্নয়ন ভাবনার সঙ্গে একই সরলরেখায় নিয়ে আসতে পারে। তবে যারা চাচ্ছে নিজেদের উন্নয়নের জায়গায় নিয়ে যেতেÑ এমন যুব তারা আরো সহজে নিজেদের ভাবনাগুলোকে পৌঁছে দিতে পারবে সবার কাছে।

এলাকাভিত্তিক সংগঠনগুলোর কাজও কিন্তু চোখে পড়ার মতো। গাজীপুরের শ্রীপুরে গড়ে ওঠা যুব ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে একটি সংগঠন স্টুডেন্ট অ্যান্ড হিউম্যান লিংক। একটি এলাকার অনেক সমস্যা নিয়ে কাজ করতে দেখেছি এদের এবং দেখেছি শিক্ষা প্রসারেরও কাজ করতে। এখন এই সংগঠনটির মতো সংগঠনগুলো যদি সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পায়, তবে কিন্তু এর ব্যাপ্তি বাড়বে এবং এখানে এক ধরনের সমবায় সৃষ্টি হবে; যা অর্থনৈতিকভাবেও স্বাবলম্বী করে তুলতে পারে যুবসমাজকে।

শিক্ষাকে নিশ্চিতকরণে সরকার যেভাবে মনোযোগী হয়েছে, ঠিক সেভাবে কারিগরি শিক্ষার বিকাশ এবং যুবকদের নিজেদের কিছু করার প্রয়াশের সমন্বয়েই যুবকদের এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে আর তা সম্ভব এলাকা ও দেশভিত্তিক যুব সংগঠনগুলোর সঠিক দিকে চলনের মাধ্যমে। বাংলাদেশের জনসংখ্যাই বড় স¤পদ। এ স¤পদকে কাজে লাগানোর জন্য প্রয়োজন সামষ্টিক পরিকল্পনা আর এই পরিকল্পনার বাস্তবায়নকারীই হবে যুব সংগঠনগুলো। প্রয়োজনে সরকার একটি এলাকার কর্মঠ যুবকদের ডেকে নিয়ে সংগঠন গঠন করে দিক, তবে তারা একসময় এই সংগঠনকে সামনে নিয়েই তাদের জীবিকা নির্বাহের পথ বের করে নিয়ে আসতে পারবে।

গতিশীল পৃথিবীতে যুবকদের শক্তিই সবচেয়ে বেশি অপ্রতিরোধ্য। তাদের গতি যদি সততা ও কর্মের দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া যায়, তবে এ দেশের তারুণ্যের জয়গান দেখবে সারা বিশ্ব। আমি সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রতি বিনীত অনুরোধ করছি, যেন যুব সংগঠনগুলোকে তাদের নৈতিক কাঠামোর মধ্যে রেখে চালানোর নিমিত্তে অনুমোদন দেওয়া হয় এবং তার মাধ্যমে যুবকদের সব উন্নয়ন কাজে ব্যবহারের পথ সুগম করা যায়। আশা করি, এ ব্যাপারে আরো অগ্রসরমান ভূমিকা গ্রহণ করবেন।

লেখক : প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট

"