reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ৩১ অক্টোবর, ২০১৮

ধর্মঘটের হুমকি

গত রবি ও সোমবার। এ দুই দিন পরিবহন শ্রমিকদের হাতে জিম্মি ছিল পুরো দেশ। টানা ৪৮ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘট। চরম ভোগান্তির মধ্যে কেটেছে প্রতিটি মুহূর্ত। আবারও হুমকি এসেছে। হুমকিদাতা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন। তারা বলেছে, আগামী ২১ দিনের মধ্যে সড়ক আইনের সংশোধনসহ ফেডারেশনের আট দফা দাবি সরকার না মানলে এবার ধর্মঘট হবে টানা ৯৬ ঘণ্টার। পরিবহন ধর্মঘটে মানুষের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হলেও, পরিবহন শ্রমিক নেতাদের মস্তিষ্কে তার বিন্দুমাত্র প্রতিফলন ঘটেনি। ইতিহাস বলছে, প্রতিফলন ঘটার কথাও নয়। মানুষের দেহ থেকে রক্ত ঝরানোই যাদের প্রাত্যহিক কাজের অংশ, তাদের কাছে প্রতিফলন প্রত্যাশা করা আর বোকার স্বর্গে বসবাস করা একই কথা।

দুই দিনের পরিবহন ধর্মঘটে গণমানুষের ভোগান্তির কথা বাদ দিয়েও বলা যায়, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কোনো কিছু দিয়েই পূরণ করা সম্ভব নয়। পোশাক রফতানি ব্যাহত হয়েছে ১৮২ মিলিয়ন ডলারের। হাসপাতালে যেতে বাধা দেওয়ায় পথিমধ্যে দুই শিশুর অপমৃত্যু। এসব মৃত্যুর দায় কার? এ প্রশ্নের জবাব কখনো মেলেনি। ধর্মঘটে চট্টগ্রাম বন্দর অচল হয়ে পড়ে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা না গেলেও অনুমান করা কঠিন নয়। রাজপথে পোড়া মবিল দিয়ে মানুষের ওপর হামলা ধর্মঘটের এক নতুন সংযোজন। যে হামলা থেকে স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরাও নিজেকে রক্ষা করতে পারেনি। প্রতিবাদে তারা মানববন্ধন করেছে। কিন্তু এ প্রতিবাদের ঢেউ বেশি দূর গড়াবে বলেও আশা করা যায় না। কেননা আমরা এর চেয়েও কঠিন প্রতিবাদ হতে দেখেছি। ফলাফল কখনো শূন্যের কোঠা পেরোতেও দেখিনি।

দেশের আমদানি-রফতানির ৯০ শতাংশই সড়কপথের সঙ্গে সম্পৃক্ত। ধর্মঘটের ফলে সড়ক পরিবহনের সঙ্গে অচল হয়ে পড়েছে বাণিজ্য-সহায়ক সব প্রতিষ্ঠান। সমুদ্রবন্দর কিংবা স্থলবন্দর থেকে দেশের কোথাও পণ্য চলাচল করতে পারেনি। থমকে গেছে মালামাল জাহাজীকরণের কাজ।

চট্টগ্রাম বন্দরেই সৃষ্টি হয়েছে ১৬ হাজার কনটেইনারজট। মোংলাসহ অন্যান্য স্থলবন্দর যুক্ত হলে এর পরিমাণ দাঁড়াবে ২০ হাজারেরও বেশি। এ ব্যাপারে বিজিএমইএ সভাপতি বলেছেন, জনগণ ও ব্যবসা-বাণিজ্যকে জিম্মি করে এমন নৈরাজ্য মোটেও কাম্য নয়। গত দুই দিনে যা হয়ে গেল তা নিঃসন্দেহে একটি স্থিতিশীল অর্থনীতির মুখে চপেটাঘাত। প্রশ্ন হচ্ছে-চপেটাঘাত করছেটা কে? এ প্রশ্নের জবাবটাও সবার জানা। তবে বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধার মতো শক্তিশালী কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না বলেই অপ্রতিরোধ্য এই শ্রমিক সংগঠন। রক্ষক যখন ভক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হবে, তখন ঘণ্টা বাঁধার মতো কাউকে না পাওয়াটাই স্বাভাবিক।

আমরা মনে করি, একটি স্থিতিশীল অর্থনীতির ওপর কেউ যদি অহেতুক আঘাত হানতে চায়; তাহলে এর বিপরীতে প্রত্যাঘাত জরুরি হয়ে পড়ে। আর এই প্রত্যাঘাতের দায়িত্ব সরকারের। সরকার যদি প্রত্যাঘাতে এগিয়ে আসে অথবা ইতিবাচক ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়; তাহলে নিশ্চিতভাবে বলা যায়, এ দেশের প্রায় প্রত্যেক মানুষ সরকারের পাশে থাকবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close