দিলীপ কুমার আগরওয়ালা

  ৩১ অক্টোবর, ২০১৮

মতামত

আইনগত ব্যবস্থা নিন

দেড় কোটি মানুষের মহানগরী ঢাকায় সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা খুব একটা বেশি নয়। যানজটের কারণে যানবাহন চলাচল বেশির ভাগ সময় হয় স্তব্ধ থাকে অথবা ধীরগতিতে চলে। তবে সুযোগ পেলেই গণপরিবহনের চালকরা যে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন, এটি একটি ওপেন সিক্রেট। বিশেষ করে বাসচালকরা একে অন্যের সঙ্গে পাল্লা দেওয়াকে তাদের কৃতিত্ব বলে ভাবে। এমন ধরনের পাল্লা দেওয়ার ঘটনায় প্রায়ই দুর্ঘটনা অনিবার্য হয়ে ওঠে। বলা যায়, রাজধানীতে যেসব সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে তার বেশির ভাগই হয় পাল্লাপাল্লির অশুভ প্রবণতার কারণে।

গত ২২ অক্টোবর সোমবার নিরাপদ সড়ক দিবসে ঢাকা মহানগরীর যাত্রাবাড়ীতে রাস্তা পার হওয়ার সময় দুই বাসের মাঝে চাপা পড়ে দুই পথচারী মর্মান্তিকভাবে প্রাণ হারিয়েছেন। দুই বাসের পাল্লাপাল্লির শিকার হয়ে তাদের জীবন দিতে হয়েছে। এ বছরের এপ্রিলে দুই বাসের এমনই এক পাল্লা দেওয়ার নির্মম প্রতিযোগিতার শিকার হয়েছেন বাসযাত্রী এক কলেজছাত্র। রাজধানীর বাংলামোটর ও কারওয়ান বাজারের মাঝামাঝি পান্থকুঞ্জে বেসরকারি স্বজন পরিবহনের একটি বাস দোতলা একটি বাসকে ওভারটেক করার জন্য বাঁ দিকে গা ঘেঁষে এগিয়ে যায়। এ সময় দোতলা বাসের পেছনের ফটকে দাঁড়িয়ে থাকা কলেজছাত্র রাজীব হোসেনের হাত থেঁতলে যায়। দুই বাসের প্রচন্ড চাপে হাতটি শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পথচারীরা দ্রুত গুরুতর আহত রাজীবকে পান্থপথের শমরিতা হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু চিকিৎসকরা বিচ্ছিন্ন সেই হাতটি তার শরীরে জুড়ে দিতে পারেননি। গরিব ঘরের সন্তান রাজীব হোসেন তিতুমীর কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। যাত্রাবাড়ীর মীরহাজিরবাগের একটি মেসে থেকে তিনি পড়াশোনা করেন। তার পড়াশোনার খরচ চালান স্বজনরা। দুর্ঘটনার পর পুলিশ বাস দুটি এবং দোতলা বাসের চালককে আটক করে। মূল অপরাধী স্বজন পরিবহনের চালক পালিয়ে যেতে সক্ষম হন।

সড়ক দুর্ঘটনা দিন দিন বেড়ে চলেছে। এটি এখন প্রতিদিনের দুঃসংবাদ। দেশে প্রতি বছর সড়ক দুর্ঘটনায় গড়ে ৫ হাজার ১৬২ জনের মৃত্যু ঘটছে। এর মধ্যে ঘটনাস্থলেই মারা যাচ্ছেন ৩ হাজার ১৬৭ জন। এটা সত্য যে, কোন গাড়ি মৃত্যুদূত হিসেবে সক্রিয়তার নজির রাখলে দোষী করা হয় সংশ্লিষ্ট গাড়িচালককে। এখানে যুক্তি হলো গাড়িচালকের অবহেলা বা অদক্ষতার কারণে তার গাড়ি দুর্ঘটনায় পতিত হয়েছে। অনেক সময় মাদক সেবনের পর গাড়ি চালনারও অভিযোগ ওঠে চালকের বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগের কিছুটা সত্যতা তো অবশ্যই রয়েছে। যেহেতু একটি গাড়ি দুর্ঘটনা ঘটিয়ে মানুষের প্রাণ হরণের মতো কান্ডের জন্ম দিতে পারে। তাই গাড়ি এবং গাড়িচালকের সুস্থতার গ্যারান্টি খুব জরুরি। সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা হলে প্রশাসনের ওপর অনেক সময় অন্যায্য চাপ প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। আদালত অপরাধীকে শাস্তি প্রদান করলে ধর্মঘট আহ্বানের মাধ্যমে অরাজকতাও সৃষ্টি করা হয়।

রাজধানীতে চলতি বছর সড়ক দুর্ঘটনায় যেসব মৃত্যু ঘটেছে তার এক বড় অংশের জন্য দায়ী বাসের পাল্লাপাল্লির ঘটনা। বাসচালকদের বেপরোয়া আচরণের কারণেই একের পর এক প্রাণ ঝরছে। পাল্লাপাল্লির পাশাপাশি রাস্তার ওপর বাস থামিয়ে যাত্রী নেওয়া তাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। অভিন্ন রুটে চলাচলকারী বাসগুলো প্রায়ই অসুস্থ প্রতিযোগিতায় মেতে ওঠে। বাস মালিকদের সঙ্গে ট্রাফিক কর্তৃপক্ষের অলিখিত সমঝোতা থাকায় তারা যা ইচ্ছা তাই করার ধৃষ্টতা দেখায় এমন একটি রটনা রয়েছে। আমরা আশা করব, যাত্রাবাড়ীর সড়ক দুর্ঘটনায় দায়ী দুই বাসচালকের দৃষ্টান্তমূলক সাজার ব্যবস্থা করা হবে। রাজধানীতে বাসচালকদের পাল্লাপাল্লি বন্ধে এর মূল কারণ চুক্তিতে বাস চালানোর পদ্ধতি বন্ধে উদ্যোগ নিতে হবে। নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে বাস মালিক সমিতির পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল চুক্তিতে বাস চালানো বন্ধ হবে। কিন্তু তা বাস্তবায়ন হয়নি। বাসচালকদের পাল্লাপাল্লির কান্ডজ্ঞানহীনতা অব্যাহত থাকার পেছনে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের দায় কম নয়। বাস মালিকদের সম্বিত ফেরাতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সচেতন হবেÑ এমনটিই প্রত্যাশিত।

লেখক : পরিচালক, এফবিসিসিআই

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close