reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ৩০ অক্টোবর, ২০১৮

ভোগান্তির অবসান হোক

সংসদে পাস হওয়া সড়ক পরিবহন আইনের কয়েকটি ধারা সংশোধনসহ আট দফা দাবিতে রোববার সকাল থেকে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে গণপরিবহন শ্রমিকদের ৪৮ ঘণ্টার যে ধর্মঘট শুরু হয়েছে, তা গতকালও অব্যাহত ছিল। এ ধর্মঘটকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে নৈরাজ্য, দুর্ভোগ ও হেনস্তার ঘটনা ঘটেছে। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে পরিবহন শ্রমিকরা ব্যক্তিগত গাড়ি ও সিএনজি অটোরিকশা চলাচলে বাধা দেয়। এমনকি ওষুধের গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্সও চলাচল করতে দেওয়া হয়নি। সংবাদকর্মীদের হেনস্তা করা হয়েছে। ব্যক্তিগত গাড়ির চালক এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে যাত্রীদেরও শ্রমিকদের উচ্ছৃঙ্খল আচরণের শিকার হতে হয়েছে। কোথাও কোথাও পোড়া মবিল লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে যাত্রী ও গাড়িচালকদের মুখে। সংবাদমাধ্যমে সেসব ছবি প্রকাশিত হয়েছে। শ্রমিকদের ধর্মঘটের দিন রাজধানীবাসীর অবলম্বন ছিল বিআরটিসির বাস, রিকশা, অটোরিকশা, অ্যাপসভিত্তিক যানবাহন। কিন্তু এসব যানবাহনও আটকে দেয় পরিবহন শ্রমিকরা।

তবে নানা প্রাসঙ্গিকতায় এ কথা বলতে দ্বিধা নেই, সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতেই সরকার সড়ক পরিবহন আইনের কয়েকটি ধারায় সংশোধনী আনে। যেখানে জননিরাপত্তার বিষয়টিকে খুবই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কারণ, দেশের পরিবহন খাতের বিশৃঙ্খলা এমন একপর্যায়ে পৌঁছায়, যেখানে সাধারণ মানুষ সর্বদা নিরাপত্তাহীন। বলতে গেলে, দেয়ালে তাদের পিঠ ঠেকে গেছে, যা থেকে পরিত্রাণের জন্য সরকার চলমান আইন সংস্কার করতে বাধ্য হয়। ফলে আইনের কয়েকটি ধারা বাতিলের জন্য শ্রমিকদের এ আন্দোলনকে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিশ্লেষকরা পর্যন্ত অযৌক্তিক বলে মনে করছেন। তাদের মতে, দেশবাসীকে জিম্মি করে, পরিবহন শ্রমিকরা আইনের ধারা সংশোধনের নামে সরকারের ওপর যে চাপ সৃষ্টি করছে, তা সম্পূর্ণ অন্যায্য ও অনৈতিক। যারা প্রতিনিয়তই দেশের বিভিন্ন স্থানে জন্ম দিচ্ছে একের পর এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। এসব দুর্ঘটনার পেছনে রয়েছে তাদের স্বেচ্ছাচারিতা এবং বেপরোয়া গতিতে যান চালনা। পরিসংখ্যান মতে, ২০১৬ সালের তুলনায় ২০১৭ সালে সড়ক দুর্ঘটনা ১৫ থেকে ২২ ভাগ পর্যন্ত বেড়েছে। আবার ২০১৮ সালের অক্টোবর পর্যন্ত দেশের সড়ক দুর্ঘটনা এবং হতাহতের সংখ্যাও কম নয়।

তবে দুঃখজনক হলো, সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী চালকদের তেমন শাস্তি হয় না। কিংবা ক্ষতিপূরণও যে আদায় হয়, তাও বলা যাবে না। হয় তো এবার কিছুটা হলেও টনক নড়েছে। পরিবহন আইনের সংশোধনীতে যানবাহন চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে শিক্ষাগত যোগ্যতার বিধান রাখা হয়েছে ন্যূনতম অষ্টম শ্রেণি এবং সহকারীর পঞ্চম শ্রেণি পাস। দুর্ঘটনা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে হলে ৩০২ ধারা প্রযোজ্য হবে। যাতে শাস্তি মৃত্যুদ-। তবে খুন নয়, এমন ঘটনায় ৩০৪ ধারা অনুযায়ী সাজা দেওয়া যাবে যাবজ্জীবন। আর শুধু সড়ক দুর্ঘটনার জন্য ৩০৪(খ)-এর জন্য তিন বছরের কারাদ-। অথচ পরিতাপের বিষয়, সাধারণ মানুষের সুরক্ষায় গৃহীত সরকারের এই আইনকে তোয়াক্কা করছে না পরিবহন শ্রমিকরা। বরং সর্বক্ষেত্রে তারা তাদের স্বেচ্ছাচারিতাকেই বহাল রাখতে চাচ্ছে। আমরা মনে করি, মালিক-শ্রমিকের চাপের কাছে সরকার পিছপা হলে সড়কে কখনো শৃঙ্খলা ফেরানো যাবে না। অন্যদিকে, যত দ্রুত সম্ভব সড়কে সাধারণ মানুষের ভোগান্তির অবসান হোকÑএটাই প্রত্যাশা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close