আবু আফজাল মোহা. সালেহ

  ৩০ অক্টোবর, ২০১৮

মতামত

সম্ভাবনাময় পর্যটনশিল্প

পর্যটনে সম্ভাবনাময় একটি দেশ হচ্ছে আমাদের বাংলাদেশ। একটু নজর দিলে এ খাত থেকে প্রচুর আয় করা সম্ভব। এটিকে বলা হয় অদৃশ্য অর্থনৈতিক শক্তি। পর্যটন হচ্ছে বিশ্বের অন্যতম আয়ের খাত। অনেক উন্নয়নশীল দেশের অন্যতম আয়ের খাত হচ্ছে পর্যটন। পর্যটনশিল্প অনেক উন্নয়নশীল দেশের জন্য ‘খরভব ইষড়ড়ফ’ হিসেবে কাজ করে ওইসব দেশের অর্থনীতি ও সামাজিক ব্যবস্থার মূল চালিকাশক্তিতে পরিণত হয়েছে।

বিদেশি পর্যটক যে দেশে যত বেশি আসে, সে দেশের পর্যটন থেকে আয়ও তত বেশি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বিদেশিদের আনাগোনা অনেক বেশি। তাই এসব দেশে পর্যটন থেকে আয়ের পরিমাণও বেশি। এশিয়ার মধ্যে থাইল্যান্ডে পর্যটন খাত থেকে আয়ের পরিমাণ বেশি হওয়ার কারণও কিন্তু বিদেশি পর্যটক। আমাদের এই অঞ্চলে ভারত বা শ্রীলংকায় পর্যটন আয় সবচেয়ে বেশি। কারণ, তাদের পরিকল্পিত চিন্তাভাবনা। তবে সম্ভাবনায় থাইল্যান্ডের চেয়ে ভারতের পর্যটন অবস্থা ভালো হলেও বিদেশি পর্যটকের সংখ্যার/অবস্থানের ওপর আয়ের দিক থেকে থাইল্যান্ড অনেক এগিয়ে। ছোট রাষ্ট্রসমূহ যেমন হংকং, সিংগাপুর, ম্যাকাউ, মালদ্বীপ, ফিজি কিন্তু পর্যটন খাত থেকে প্রচুর আয় করে শুধু বিদেশিদের আগমনের জন্যই। চীন, জাপান, মালয়েশিয়া পর্যটন খাত থেকে প্রচুর আয় করে দেশি পর্যটকের চেয়ে বিদেশি-পর্যটকের জন্য।

দেখা যায়, খরচ করার ক্ষেত্রে চীনারা অনেক উদার। তাদের বেশির ভাগই বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। তাই রামুসহ বৌদ্ধ স্থাপনাগুলোয় উন্নয়ন করতে হবে। ইউরোপের বেশির ভাগ পর্যটক খ্রিস্টান ধর্মের। তাই খ্রিস্টান স্থাপনাগুলোয়ও উন্নয়ন ও নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে, যাতে ইউরোপীয় পর্যটকরা আকৃষ্ট হয়। আর যেহেতু মধ্যপ্রাচ্যের পর্যটকদের বেশির ভাগই মুসলিম। তাই শাহজালাল বা শাহপরানের মাজার, ষাটগম্বুজ মসজিদের পারিপার্শ্বিক অবস্থার আরো উন্নয়ন করতে হবে। শাহজালাল (র.)-এর মাজারে স্থান কম (সিলেট শহরের প্রাণকেন্দ্রে) হলেও শাহপরান (র.)-এর মাজারের পাশে অনেক খোলা জায়গা আছে। এখানে পরিকল্পনা করে এগিয়ে যাওয়া দরকার। কক্সবাজার যাওয়ার পথে ডুলাহাজরা সাফারি পার্কের আরো উন্নয়ন করতে হবে। পার্বত্যাঞ্চলের বন ও পাহাড়ি অঞ্চলে প্রাকৃতিক-পরিকল্পিত পার্ক করা দরকার। আমরা হয়তো ডুয়ার্সের অবস্থা আনতে পারব না, তবে কাছাকাছি যেতে পারব। এতে কক্সবাজার যাওয়ার পথে বিদেশিরা এসব স্থানে বেড়িয়ে যাবেন। দেশের কথা তাদের দেশে প্রচার করবে, এতে আমাদের দেশের মুখ উজ্জ্বল হবে, সঙ্গে সঙ্গে আয় ও কর্মসংস্থান বাড়বে। কারণ পর্যটন একটি শিল্প এবং তা শ্রমঘনশিল্প।

এ শিল্পের সঙ্গে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে অনেক শিল্প নির্ভর করে। পর্যটন একটি বহুমাত্রিক ও শ্রমঘনশিল্প। সবচেয়ে দ্রুত সম্প্রসারণশীল ও বৃহৎ বাণিজ্যিক কর্মকান্ড হিসেবে এ শিল্প বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি লাভ করেছে। প্রচুর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয় পর্যটন খাত থেকে। পর্যটনশিল্পের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন সেক্টর। যেমন : পরিবহন, হোটেল, মোটেল, রেস্তোরাঁ, রিসোর্ট, এয়ারলাইনস ও অন্যান্য যোগাযোগের মাধ্যম থেকে পৃথিবীর অনেক দেশ প্রতি বছর প্রচুর রাজস্ব আয় করে, যা অন্য যেকোনো বড় শিল্প থেকে পাওয়া আয়ের চেয়ে বেশি। আমাদের সম্ভাবনাও প্রচুর রয়েছে। ভৌগোলিক অবস্থান এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ বাংলাদেশের পর্যটনশিল্পের জন্য অত্যন্ত অনুকূল।

বিদেশিদের জন্য আমরা আলাদা জোন করতে পারি। সেখানে আবাসিক ও বিনোদনের ব্যবস্থা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে বিদেশিরা যেমন স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন, তেমনই বিপুল পরিমাণ খরচ করবেন তারা। এতে আমরাই লাভবান হব। ভারতে দেখেছি ট্রেনে বিদেশিদের জন্য আলাদা টিকিটের ব্যবস্থা আছে। আমরাও তা করতে পারি। রেলসুবিধা বাড়াতে হবে, যাতে বিদেশিরা আরামদায়ক বোধ করে। যে পর্যটন এলাকাগুলোয় রেললাইন নেই, সেখানে রেললাইন সম্প্রসারণ করতে হবে। বাংলাদেশে পর্যটনশিল্পের উন্নয়নে জাতীয় পরিকল্পনায় পর্যটনশিল্পকে আগ্রাধিকার প্রদান, জাতীয় বাজেটে বরাদ্দ রাখা, ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করা, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, পর্যটন পুলিশ গড়ে তোলা, পরিকল্পিত প্রচারণা চালানো, দেশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠা এবং পরিকল্পিত বিনিয়োগ প্রয়োজন। পর্যটন স্থানগুলোর যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটানো আবশ্যক। নিরাপত্তার অভাব, চুরি বা ছিনতাই, রাস্তা বা ট্যুরিস্ট স্পটের নোংরা পরিবেশ ইত্যাদি বিদেশিদের কাছে চিন্তার কারণ। অনেক স্পটে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো নয়। ট্রেন যোগাযোগ বিদেশিরা পছন্দ করেন। এটি আরামদায়ক। দক্ষগাইডের অভাব বাংলাদেশে। ইংরেজি বা বিদেশি ভাষায় দক্ষ গাইড বিদেশিদের সন্তুষ্ট করতে পারবে। এগুলো করতে পারলে বিদেশিদের আকৃষ্ট করা যাবে।

সুষ্ঠু পরিকল্পনা গ্রহণ করে বাংলাদেশও পর্যটন খাত থেকে প্রচুর আয় করতে পারবে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ, যানবাহনগুলোয় সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়ে আমরা বিদেশি পর্যটক আকর্ষণ করতে পারি। ফেবুতে বা ইন্টারনেট/গণমাধ্যম বা দূতাবাসের মাধ্যমে আমাদের পর্যটন এলাকা নিয়ে লিফলেট, প্রামাণ্যচিত্র, ভিডিও ইত্যাদির মাধ্যমে বিশ্বদরবারে তুলে ধরতে পারি। আমাদের সম্ভাবনাময় পর্যটন খাতকে জাগিয়ে তুলতে পারলেই অর্থনৈতিকভাবে আমরা অনেক শক্তিশালী হয়ে যাব। উন্নত দেশের দিকে বাংলাদেশে এগিয়ে নিতে হলে এ খাতে আমাদের গুরুত্ব বা নজর দিতে হবে। আর বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে পারলে অনেক সহজ হবে।

লেখক : উপপরিচালক (বিআরডিবি) লালমনিরহাট

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close