reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৯ অক্টোবর, ২০১৮

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মেলবন্ধন

গ্রামের নাম নরন্ডী। গত রোববার এই গ্রামে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল তাবলিগ জামাতের আমির মাওলানা সাদ কান্দলভীর অনুসারীদের জেলা ইজতেমা। কেরানীগঞ্জের শাক্তা ইউনিয়নের একটি গ্রাম এটি। এই গ্রামে গত রোববার যে ঘটনা ঘটে গেল, তাকে বাংলাদেশের হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতির ইতিহাসে একটি মাইলফলক বললে বেশি বলা হবে না।

মন্দিরের প্রাঙ্গণজুড়ে মুসল্লিদের ভিড়। কেউ অজু করছেন, কেউ সারিবদ্ধ দাঁড়িয়ে আছেন শৌচাগারের সামনে। পাশেই মন্দির। ধূপের আবছায়ায় বসে আছেন পুরোহিত। কাঁসার ঘণ্টা বাজছে। চলছে প্রাত্যহিক পূজার আয়োজন। মুসল্লিরা চলছেন ইবাদত-বন্দেগিতে। এ এক অপূর্ব মেলবন্ধন। ইজতেমায় অংশ নিতে এখানে জড়ো হয়েছিলেন তাবলিগ জামাতের আমির মাওলানা সাদ কান্দলভীর ঢাকা জেলার অনুসারীরা। এখানে সহস্রাধিক মুসল্লি খোলা আকাশের নিচে শামিয়ানা টাঙিয়ে দুদিন ধরে ইজতেমায় উপস্থিত ছিলেন। পানি আর শৌচাগারের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় আশপাশের সব ধর্মের লোকজনই তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসেন। বিশেষ করে মাঠের একপাশে থাকা রাধামাধব মন্দিরের বিশেষ ভূমিকার কথা কান্দলভীর অনুসারী এবং এলাকাবাসী মনে রাখবে দীর্ঘদিন। মন্দিরটি খুলে দিয়েছিল তাদের সিংহ দরোজা।

মন্দিরটির জমি খুব একটা বেশি নয়। তবে চিন্তা ও চেতনার ব্যপ্তি ছিল আকাশসমান। ইজতেমার মুসল্লিদের জন্য মন্দির প্রাঙ্গণ উন্মুক্ত করে দেওয়ার বিষয়ে পুরোহিত বলেছিলেন, ‘হিংসা-বিদ্বেষের মধ্যে কিছু নেই। যার যার ধর্ম তার তার কাছে। এই মানুষগুলো এখানে এসে পানি পাচ্ছিল না ঠিকমতো। শৌচাগারের তেমন সুব্যবস্থাও ছিল না। সবকিছুর ঊর্ধ্বে হলো মানবসেবা। তাই পুরো প্রাঙ্গণ উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।’

একজন মুসল্লি বলেছেন, ‘মন্দিরের লোকজন তাদের যে সহযোগিতা দিয়েছেন, প্রকৃত অর্থেই তা একটি বিরল ঘটনা। মন্দিরের লোকজনই তাদের পানির ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। মন্দিরের শৌচাগার ব্যবহার করতে বলেছেন। এ ধরনের ঘটনা সচরাচর তিনি ঘটতে দেখেননি। তার দেখা ও জানা মতে এ দেশে এটাই অনন্য সম্প্রীতির ঘটনা।

মন্দির কমিটির সদস্য রাধা গোবিন্দ ম-ল বলেছেন, ‘মানবসেবাই হচ্ছে বড় ধর্ম। মুসল্লিদের পাক-পবিত্রতার জন্য পানির প্রয়োজন ছিল। দূরদূরান্ত থেকে মুসল্লিরা এখানে এসে কিছুটা বিপাকে পড়েন। আমরা সে সময় তাদের পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আর এটুকু করতে পেরে আমরা আনন্দিত।

কয়েকটি মন্তব্য এবং একটি সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে নরন্ডী গ্রামের হিন্দু-মুসলিম আবার নতুন করে প্রমাণ করতে সমর্থ হয়েছে বাংলাদেশ কতটা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এ দেশ লালনের-হাসনের। এ দেশ বারো আউলিয়ার।

এ দেশের মাটির সঙ্গে মিশে আছে পাললিক সুর। যে সুর কেবল ভালোবাসার কথা বলতে শিখেছে। আমরা মনে করি, বিশ্বের মাঝে এমন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মহামিলন শুধু এখানেই পাওয়া যেতে পারে। অন্য কোথাও নয়। এখানেই আমাদের অহংকার, আমাদের গর্ব।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close