দিলীপ কুমার আগরওয়ালা

  ২১ অক্টোবর, ২০১৮

মতামত

দারিদ্র্যবিমোচনে বাংলাদেশ

দারিদ্র্যদূরীকরণে বাংলাদেশের সাফল্য দুনিয়ার অন্য সব দরিদ্র দেশের জন্য অনুকরণীয় মডেলে পরিণত হয়েছে। গত আট বছরে দেশের ১ কোটি ১৫ লাখ মানুষ দারিদ্র্যসীমার শেকল ছিন্ন করে বেরিয়ে আসতে পেরেছে। এ সাফল্যকে বুকে ধারণ করে বুধবার বাংলাদেশেও পালিত হয়েছে আন্তর্জাতিক দারিদ্র্যদূরীকরণ দিবস। বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতির দেশ। স্বাধীনতার পর গত ৪৭ বছরে দেশের জনসংখ্যা ৭ কোটি থেকে বেড়ে ১৭ কোটি ছোঁয়ার পথে। তারপরও বাংলাদেশ দারিদ্র্যবিমোচনে নজরকাড়া সাফল্য দেখাতে সক্ষম হয়েছে। এর পাশাপাশি স্বীকার করতে হবে দেশে এখন হতদরিদ্রের হার ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ। সংখ্যার হিসাবে ৩ কোটি ৮৮ লাখ মানুষ এখনো দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ খানা আয়-ব্যয় জরিপে হতদরিদ্রের তথ্য উঠে এসেছে। ২০১০ সালের জরিপে দেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ৩১ দশমিক ৫ শতাংশ। সংখ্যায় হিসাব করলে প্রায় পাঁচ কোটি। আর সর্বশেষ ছয় বছরের ব্যবধানে দারিদ্র্যের হার কমেছে ৭ দশমিক ২ শতাংশ। অবশ্য দারিদ্র্য কমার এই হার আগের ছয় বছরের চেয়ে কম। অর্থনীতিবিদদের মতে, গত ছয় বছরে যে হারে দারিদ্র্য কমেছে, সে হারে কর্মসংস্থান হয়নি। এ সময়ে মানুষের মধ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্য বেড়েছে। একই সঙ্গে প্রবাসী আয়ও কমে গেছে। অন্যথায় দারিদ্র্যবিমোচনের চিত্র সে অন্য রকম হতে পারত, তা সহজে অনুমেয়। সরকারের তথ্য অনুসারে ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধির জন্য জিডিপির ৩৫ শতাংশ বিনিয়োগ দরকার। অথচ বিনিয়োগ এখন ৩১ দশমিক ২৩ শতাংশ। এর মধ্যে বেসরকারি বিনিয়োগ ২৩ দশমিক ২৬ শতাংশ। দারিদ্র্যবিমোচনে সাফল্য অর্জিত হলেও বেসরকারি বিনিয়োগ আশাব্যঞ্জক না হওয়ায় তা কতটা টেকসই সেটি সংশয়ের ঊর্ধ্বে নয়। কর্মসংস্থানের সুযোগ কাক্সিক্ষত হারে বৃদ্ধি না পাওয়ায় এ ক্ষেত্রে হতাশা থেকেই যাচ্ছে। দেশে সরকারি খাতের বিনিয়োগ মোটামুটি সন্তোষজনক হলেও বেসরকারি খাতে সন্তুষ্টির অবকাশ কম। দারিদ্র্যবিমোচনে প্রত্যাশিত সাফল্য পেতে হলে বেসরকারি কর্মসংস্থানে গতি সৃষ্টি করতে হবে। বিনিয়োগবান্ধব নীতি প্রণয়ন শুধু নয়, বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও তার প্রতিফলন যাতে হয়, সে বিষয়টিও জরুরি।

বাংলাদেশের মানুষ অপরিসীম ক্ষমতার অধিকারী। অপরিসীম তাদের ধৈর্য, সৃজনশীলতা এবং সংগ্রাম করার মনোবল ও উদ্যম। আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবেই, কেউ আমাদের আটকাতে পারবে না। বাংলাদেশকে নিয়ে আমরা স্বপ্ন দেখি। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে। সত্তর দশকের ‘ষড়যন্ত্রমূলক’ তলাবিহীন ঝুড়ি, নব্বই দশকের তুলনামূলক অচেনা বাংলাদেশ এখন বিশ্বব্যাপী এক বিস্ময়ের নাম। সম্ভাবনার দিগন্তে পত পত করে উড়ছে পতাকা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তত্ত্বাবধানে দেশের উন্নয়ন প্রকল্প একের পর এক পেখম মেলে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। চার লেন মহাসড়ক, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, পানগাঁও নৌ-টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প, গ্যাস সংকট নিরসনে এলএনজি টার্মিনাল প্রকল্প, মেট্রোরেল প্রকল্প, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্প, পায়রা সমুদ্রবন্দর, রাজধানীর চারপাশে স্যুয়ারেজ ট্যানেল নির্মাণের মতো অবকাঠামো গড়ে তোলা হচ্ছে।

উন্নয়নের এ কর্মযজ্ঞে যোগ হয়েছে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প এবং দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার-ঘুমধুম প্রকল্প। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠনের কাজ চলছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি অঞ্চলের কাজের উদ্বোধনও করা হয়েছে। চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্রবন্দরের সক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনও বৃদ্ধি পেয়েছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ নিরাপদ এবং পণ্য পরিবহন-খালাস সহজীকরণ করতে নেওয়া আরো কিছু অবকাঠামোর সংস্কার হচ্ছে। একই সঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তি খাতেও এগিয়েছে দেশ। ১৬ কোটি মানুষের দেশে কয়েক বছরে সক্রিয় মোবাইল ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ কোটি আর ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সম্ভাবনার নবদিগন্তে বাংলাদেশ সংখ্যা সাড়ে পাঁচ কোটি। দেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট’ মহাকাশে উৎক্ষেপণ হয়েছে। এর মাধ্যমে দেশের সব মানুষ যোগাযোগ ও সম্প্রচার সুবিধার আওতায় আসবে। এর দুর্যোগপ্রবণ বাংলাদেশে নিরবচ্ছিন্ন টেলিযোগাযোগ সেবা নিশ্চিত হবে। এমনকি স্যাটেলাইটের বর্ধিত ফ্রিকুয়েন্সি ভাড়া দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রাও উপার্জন করা যাবে।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জনের পর ১২ জানুয়ারি শেখ হাসিনা তৃতীয়বারের মতো গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। এই সাড়ে চার বছরে আওয়ামী লীগ সরকার ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে।

লেখক : পরিচালক, এফবিসিসিআই

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close