reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৯ অক্টোবর, ২০১৮

নিরাপত্তাহীনতার আবর্তে...

সভ্যতা সব সময়ই প্রযুক্তিনির্ভর। আর এই প্রযুক্তিনির্ভর সময়ে অসুখের মাত্রাও প্রযুক্তির উন্নয়নের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যেন এগিয়ে চলেছে। প্রযুক্তির বেশির ভাগই মানব কল্যাণের কথা স্মরণ করেই তৈরি করা হয়েছে। তবে সব সময় প্রযুক্তি মানব কল্যাণে আসতে পারেনি। মাঝেমধ্যে নয়, বর্তমান সময়ে প্রায়শই মানুষের নিরাপত্তাকে বিঘিœত করছে প্রযুক্তি। বিশেষ করে আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে। এ ক্ষেত্রে শতভাগ দোষ প্রযুক্তির ওপর চাপানোও যুক্তিযুক্ত হবে না। ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমাদের অজ্ঞতা ও দাম্ভিকতাও অনেকাংশে দায়ী।

বাংলাদেশে গত ১৫ বছরে চার লাখেরও বেশি যানবাহন জ্বালানি সাশ্রয় করতে গিয়ে সিএনজিতে (রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস) রূপান্তর করা হয়। এসব যানবাহনে প্রতিস্থাপিত সিলিন্ডার পাঁচ বছর পর পর পরীক্ষা-নিরীক্ষার নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। পরিসংখ্যান বলছে, বর্তমানে আড়াই লাখেরও বেশি যানবাহনের গ্যাস সিলিন্ডার প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই ব্যবহার হচ্ছে। আর এ কারণে প্রায়শই শোনা যাচ্ছে সিলিন্ডার বিস্ফোরণে আরোহীদের জীবননাশের ঘটনা। সড়কে নানাবিধ দুর্ঘটনার মড়ক তো লেগেই আছে। এরপর সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ। এখানে নিরাপত্তাহীনতার মাত্রা যেন আরো কিছুটা বাড়ল। পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে বলা যায়, বিস্ফোরণজনিত কারণের পেছনে প্রযুক্তির কোনো দোষ নেই। ত্রুটিবিচ্যুতি যাই যেটুকু আছে, তার পুরোটাই বর্তায় অজ্ঞতা, অসচেতনতা এবং উদাসীনতার ওপর। অর্থাৎ আমরা যারা ব্যবহার করছি, তাদের ওপর। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমরা জেনেশুনেই এ কাজ করছি। যাকে সভ্যতা নয়, বর্বরতার চরম বহিঃপ্রকাশ হিসেবে চিহ্নিত করলে বেশি করা হবে না। সুতরাং, সরকারকে এ ব্যাপারে শুধু আইন করে বসে থাকলে চলবে না; যথাযথ এবং কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। অনেকেই এই সিলিন্ডারকে সুপ্ত আগ্নেয়গিরির সঙ্গে তুলনা করেছেন। তারা বলছেন, মেয়াদোত্তীর্ণ এসব গ্যাস সিলিন্ডার যেন প্রাণঘাতী চলন্ত বোমা। এই চলন্ত বোমার কারণে চালক এবং যাত্রীর জীবন রয়েছে মৃত্যুঝুঁকিতে।

রিটেস্টিং বিহীন চরম ঝুঁকিপূর্ণ তিন লক্ষাধিক সিলিন্ডার বিভিন্ন গাড়িতে সংযুক্ত অবস্থায় রয়েছে এবং তা যথারীতিই চলছে সড়কে। যেকোনো মুহূর্তে বিস্ফোরণ ডেকে আনতে পারে জানমালের ক্ষয়ক্ষতিসহ ভয়াবহ বিপর্যয়। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, মেয়াদোত্তীর্ণ সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হলে এর ভয়াবহতা তাজা বোমার চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। আর সে কারণেই যানবাহনে ব্যবহৃত গ্যাস সিলিন্ডার নিয়মিত পরীক্ষা করে এর যোগ্যতা যাচাই জরুরি। সিএনজি চালিত এসব যানবাহনের নিরাপত্তার স্বার্থে ব্যবহৃত সিলিন্ডার প্রতি পাঁচ বছর পর পর রিটেস্ট করা বাধ্যতামূলক করাটাও আজ সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। আমরাও মনে করি, বিশ্ব আজ এক সমুদ্র নিরাপত্তাহীনতার মাঝে বাস করতে করতে হাঁপিয়ে উঠেছে। আমরাও তার অংশীদার। এখান থেকে বেরিয়ে আসার স্বপ্নেই আমাদের পথচলা। আর সেই স্বপ্নকে ধারণ করে নিজেদের অসতর্কতা এবং অসততার দুর্গে কামান দাগার প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। সরকার প্রস্তুত থাকলে আমরাও সরকারের পাশে থাকব- কথা দিলাম।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close