reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৬ অক্টোবর, ২০১৮

দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা জরুরি

পাহাড়ধসে প্রাণহানির ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে। স্থানীয় প্রভাবশালীদের সর্বগ্রাসী থাবার কাছে বারবারই অসহায় আত্মসমর্পণ করছে মানুষ। কিন্তু এর কি কোনো প্রতিকার নেই? গত শনিবার রাতে ঘূর্ণিঝড় তিতলির প্রভাবে ভারী বর্ষণের পর চট্টগ্রাম নগরে পাহাড়ধসে মা-মেয়েসহ একই পরিবারের তিনজন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া দেয়ালধসে আরো একজন নিহত হয়েছেন। কিন্তু আমরা জানি, পাহাড়ধসের পেছনে একশ্রেণির মানুষের অবৈধভাবে পাহাড় ও এর গাছপালা কাটা, দখল ও বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহারই দায়ী। সচেতনতার অভাবে পাহাড়ের পাদদেশে বসতি স্থাপন করে দরিদ্ররা খেসারত দিচ্ছেন প্রতিনিয়ত। অথচ, পাহাড় কাটা বন্ধ এবং ঝুঁকিপূর্ণ বাসিন্দাদের উচ্ছেদ কিংবা পুনর্বাসন কার্যকর করার কোনো জোরালো উদ্যোগ নেই।

গত ১০ বছরে পাহাড়ধসে কমপক্ষে ২৩৫ জন নিহত হয়েছে চট্টগ্রাম নগর ও আশপাশের এলাকায়। কিন্তু প্রাণহানির পরও থামছে না পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস। পরিবেশ অধিদফতর বলছে, চট্টগ্রাম নগরে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় রয়েছে ৩০টি। অন্যদিকে জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, পাহাড়ের ২৮টি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় ৬৮৪টি পরিবার বসবাস করছে। তবে বাস্তবে এ সংখ্যা অনেক বেশি। গতকাল প্রতিদিনের সংবাদে প্রকাশিত ‘প্রাণহানিতেও থামছে না পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস’ শীর্ষক বিশেষ প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, পাহাড় কাটার ফলে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে চট্টগ্রামের বেশ কিছু পাহাড়। এ ছাড়া গত কয়েক বছরে চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় হাজার হাজার একর পাহাড় দখলের পর তা কেটে পরিণত করা হয়েছে সমতল ভূমিতে। সীতাকু-ে পাহাড় কেটে সমতল ভূমিতে পরিণত করে তৈরি করা হচ্ছে বিভিন্ন শিল্পকারখানা। জঙ্গল সলিমপুর এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে চলছে পাহাড় কাটার মহোৎসব। পাহাড়ে অবৈধভাবে বসবাস, পাহাড় কর্তন ও করণীয় সম্পর্কে গত ২০ ফেব্রুয়ারি বিভাগীয় কমিশনার বরাবরে চট্টগ্রামের তৎকালীন জেলা প্রশাসক একটি প্রতিবেদন জমা দেন। প্রতিবেদনে পাহাড়ধসে প্রভাবশালী ব্যক্তি, সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের দুর্বৃত্তায়নকেই দায়ী করা হয়েছে। বলা হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিকে কাজে লাগিয়ে যেকোনো মূল্যে পাহাড় কাটা বন্ধ করতে হবে। পাহাড়ধসে ভৌগোলিক কারণ কিছুটা দায়ী হলেও এর চেয়ে বড় দায়ী নির্বিচারে পাহাড় কর্তন, পাহাড় ব্যবস্থাপনায় নীতিমালা না থাকা, পাহাড় নিয়ন্ত্রণে শক্তিশালী সংস্থা কিংবা প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির অনুপস্থিতি। এর বিপরীতে যুক্ত হয়েছে প্রভাবশালী ব্যক্তি, সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের দুর্বৃত্তায়ন।

এটা কারো অজানা নয়, পাহাড় ও পাহাড়ি বন কেটে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করার জন্য কিছু অসাধু মানুষ দায়ী। এদের অপকর্মের শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। পাহাড়ধসে শুধু প্রাণহানির আশঙ্কা তৈরি হয় না, এটি ভূমিকম্পের মতো ভয়াবহ দুর্যোগের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দেয়। ফলে পাহাড় কাটা রোধ ও পাহাড়ে বসবাসের বিপক্ষে সচেতনতা তৈরিতে বিলম্ব করার কোনো অবকাশ নেই। পাহাড়ধসে প্রাণহানি রোধের জন্য পাহাড় কাটা বন্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার পাশাপাশি পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের উচ্ছেদ ও পুনর্বাসনে সরকারকে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close