reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০২ অক্টোবর, ২০১৮

উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন

ক্যানসার একটি মরণব্যাধী। এর থেকে আক্রান্তদের রক্ষা পাওয়া নিঃসন্দেহে বিরল ঘটনা। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় ও পর্যাপ্ত চিকিৎসায় তা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। কিন্তু বাংলাদেশ ক্যানসার চিকিৎসায় অনেক পিছিয়ে। হাসপাতালগুলোয় প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, জনবল ও শয্যাসংখ্যার ঘাটতি রয়েছে। তা ছাড়া অর্থনৈতিক সমস্যাও এ চিকিৎসার ক্ষেত্রে বিশাল বাধা। পাশাপাশি পরিবেশের পরিবর্তন, ধূমপান, মদ্যপান, জাঙ্ক ফুড, আধুনিক জীবনযাত্রা সবকিছুর প্রভাবেই এ সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে মনে করেছেন বিশেষজ্ঞরা। দেশে বর্তমানে ক্যানসার রোগীর সংখ্যা ২০ লাখেরও বেশি। প্রতি বছর নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছে আরো দুই লাখ। আর বছরে মৃত্যু হচ্ছে দেড় লাখ মানুষের। বাংলাদেশে মৃত্যুর ষষ্ঠ প্রধান কারণও এ ক্যানসার। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোয় ক্যানসার চিকিৎসার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ও অত্যন্ত ব্যয়সাধ্য উপকরণ সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনা একটি অপরিহার্য শর্ত। এমনকি এ রোগের বিশাল খরচ কমাতে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি সামাজিক সহযোগিতাও দরকার।

দেশে ক্যানসারের চিকিৎসা এখনো অপ্রতুল। চিকিৎসকদের দক্ষতা বৃদ্ধি পেলেও অপর্যাপ্ত অবকাঠামো ও মেডিকেল উপকরণ এবং ব্যয়বহুল হওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে ক্যানসারের চিকিৎসা। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের বিদ্যমান চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দেশে বছরে ৫০ হাজার রোগীকে চিকিৎসাসেবার আওতায় নিয়ে আসা গেলেও আড়ালে থেকে যায় আরো প্রায় আড়াই লাখ রোগী। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, মানদ- অনুযায়ী প্রতি ১০ লাখ মানুষের জন্য একটি ক্যানসার কেন্দ্র প্রয়োজন; সে হিসেবে বাংলাদেশে দরকার ১৭০টি। কিন্তু সরকারি পর্যায়ে ৯টি এবং বেসরকারি পাঁচটিসহ মোট ১৪টি কেন্দ্র রয়েছে। আর সারা দেশে ক্যানসার চিকিৎসার জন্য ৩০০ রেডিওথেরাপি মেশিনের জায়গায় আছে মাত্র ১৭টি। ক্যানসার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আছেন ১৫০ জন। নেই অনকোলজিস্ট ও বিশেষজ্ঞ নার্স। শয্যাসংখ্যা মাত্র এক হাজার। ক্যানসর চিকিৎসার জন্য কয়েকটি ধাপ আছে, যেমন সার্জারি, কেমোথেরাপি, রেডিও থেরাপি। নিয়মিত ওষুধ সেবন বা ওরালথেরাপিও একটি ধাপ। এগুলোর ভেতর রেডিও থেরাপি বিশেষ ধরনের চিকিৎসা, যার জন্য বিশেষায়িত টেকনিশিয়ান দরকার। কিন্তু বাংলাদেশে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে রেডিও থেরাপিস্টদের সংকট রয়েছে। বাংলাদেশে মেডিকেল ফিজিসিস্ট একটা নতুন বিষয়। কিন্তু অবাক করা বিষয় হচ্ছে, আমাদের দেশে এই বিষয়ে কোনো ডিগ্রিধারী ব্যক্তি নেই। এটা অনস্বীকার্য যে, সরকারি হাসপাতালে উচ্চ প্রযুক্তির যে রেডিওথেরাপি মেশিনগুলো আসছে, সেগুলোয় মেডিকেল ফিজিসিস্ট যখন নেওয়া হবে, তখনই হয়তো উন্নতমানের ক্যানসার চিকিৎসা পাওয়া সম্ভব হবে।

ক্যানসার মরণব্যাধী হলেও তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তবে তা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য মানুষেরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন। যেমন : ফুসফুসের ক্যানসারজনিত মৃত্যুর ৯০ শতাংশই ঘটে ধূমপানের কারণে। শুধু ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য সেবন করা থেকে বিরত থাকলে বাংলাদেশের ৪০ শতাংশ ক্যানসার কমানো যাবে। এ ছাড়া দেশে প্রতি বছর প্রায় ১২ হাজার নারী জরায়ুমুখের ক্যানসারে আক্রান্ত হয় এবং সাড়ে ছয় হাজারের বেশি মৃত্যুবরণ করে। এটি প্রতিরোধযোগ্য একটি ক্যানসার। তাই ক্যানসার হলেই মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী, এমন ধারণা এখন আর ঠিক নয়। সচেতনতা ও সতর্কতার পাশাপাশি উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে ক্যানসার প্রতিরোধ সম্ভব। বাঁচাতে পারে অসংখ্য মানুষের প্রাণ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close