reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০১ অক্টোবর, ২০১৮

নির্বিঘ্ন করুন গতিপথ

বাংলাদেশ মূলত নদীমাতৃক দেশ। এ দেশের বুকজুড়ে রয়েছে শত শত নদী। এসব নদীর শাখা-প্রশাখাসহ বিপুল জলরাশি প্রায় ২৪ হাজার ১৪০ কিলোমিটার জায়গা দখল করে দেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে রয়েছে নদীর বিশাল অবদান। শুধু তা-ই নয়, একসময় এই নদীকে কেন্দ্র করেই সভ্যতার বিকাশ ঘটেছে। কিন্তু আজকের বাস্তবতা ভিন্ন। নদীর বুকচিড়ে যেভাবে বয়ে যাচ্ছে শত শত নৌযান, তেমনি নদীর ওপর নির্মিত হচ্ছে ছোট-বড় অনেক ব্রিজ-কালভার্ট। কিন্তু অপরিকল্পিতভাবে এসব ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের ফলে নদীর গতিপথ চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, পাল্টে যাচ্ছে নদ-নদীর গতি-প্রকৃতি। নদীর চিরায়ত ধারাকে গুরুত্ব না দিয়ে এসব ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের ফলে দেশব্যাপী নৌ-চলাচলে নাজুক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

নৌযান নির্বিঘ্নে চলাচলের জন্য নদীর ওপর নির্মিত স্থাপনাগুলো বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে করতে হয়। কিন্তু স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের তত্ত্বাবধানে নির্মিত অনেক ব্রিজ এসব নিয়ম মানেনি। ফলে নদীর ভারটিক্যাল অ্যান্ড হরাইজনটাল ক্লিয়ারেন্স ঠিক রাখা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনিয়মতান্ত্রিকভাবে জলপথের ওপর স্থাপনা নির্মাণের ফলে নদীর গতিপথে গরমিল হয়ে গেছে। কারণ, ওই প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের ব্যয় কমাতে গিয়ে নৌপথের গতিপথের ধ্বংস ডেকে এনেছে। ফলে নতুন করে নৌপথের শ্রেণিবিন্যাস হালনাগাদ করা প্রয়োজন, যাতে জলপথের ওপর স্থাপনা নির্মাণের ক্ষেত্রে ভারটিক্যাল অ্যান্ড হরাইজনটাল ক্লিয়ারেন্স ঠিক থাকে। গতকাল প্রতিদিনের সংবাদে প্রকাশিত ‘এলোমেলো নদীর গতি’ শীর্ষক একটি বিশেষ প্রতিবেদনে উল্লেখ করে বলা হয়, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ২০১০ সালে অভ্যন্তরীণ জলপথে স্থাপনা নির্মাণের ক্ষেত্রে ভারটিক্যাল ও হরাইজনটাল ক্লিয়ারেন্স-সংক্রান্ত ‘অভ্যন্তরীণ জলপথ ও তীরভূমিতে স্থাপনা নির্মাণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা-২০১০ প্রণয়ন করে। এ বিধিমালায় অভ্যন্তরীণ জলপথকে চার শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়। এতে বিভিন্ন শ্রেণির জলপথের সংজ্ঞা, জলপথের ওপর স্থাপনা নির্মাণের ক্ষেত্রে আনুভূমিক এবং উল্লম্ফ ছাড়ের পরিমাণ কত হবে, তা বিধিতে স্পষ্ট করা হয়। কিন্তু প্রণীত বিধিতে দেশের বিদ্যমান জলপথগুলোকে সুস্পষ্টভাবে শ্রেণিবিন্যাস না করায় জলপথের ওপর স্থাপনা নির্মাণকারী সংস্থাগুলোর নির্মাণব্যয় কমাতে ছাড় দেয় নৌ-মন্ত্রণালয়। এতেই সুযোগ বুঝে এলজিইডিসহ অনেকে জলপথের ওপর তাদের সুবিধা অনুযায়ী ব্রিজ নির্মাণ করে। ফলে এলোমেলো হয়ে যায় নৌপথ। এ পথে চলাচল করা নৌযান নির্বিঘেœ চলতে পারছে না। নদীর তলদেশ ভরাট হওয়ায় নদীর নাব্য সংকট কাটানো কঠিন হয়ে পড়েছে।

তবে নৌ-মন্ত্রণালয় নদী বাঁচাতে নৌপথের শ্রেণিবিন্যাস করা শুরু করেছে। এমনকি দেশের মৃতপ্রায় নদীগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করতে খাল-বিল-শাখা নদী খননসহ নানা ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সড়কের চেয়ে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে নদীকেন্দ্রিক যোগাযোগ ব্যবস্থাকে। আমরা আশা করি, সেতু নির্মাণে নদীর পানিপ্রবাহে বাধা সৃষ্টিকারী সনাতনী পদ্ধতি পরিত্যাগ করে আধুনিক পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। যাতে নদীর গতিপথ কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close