reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

বালুখাদকের কবলে সুরমা

‘সর্বভুক’ একটি শব্দ, যা কয়েকটি ব্যঞ্জন বর্ণের সমাহারে নির্মিত। আকার এবং আয়তন ক্ষুদ্র হলেও ক্ষমতা অনেক। শব্দটির অর্থ যে বা যারা পৃথিবীর সবকিছুই অবলীলায় ভক্ষণ করতে পারে। স্বাভাবিক কারণে প্রশ্ন উঠতেই পারে, প্রাণী অথবা জীবকুলের মধ্যে কে বা কারা এ ক্ষমতার অধিকারী। উত্তরটা সবারই জানা। তবে, যাদের জানা নেই, তাদের জন্য বলা যেতে পারে, মানুষই হচ্ছে একমাত্র সেই প্রাণী যে সর্বভুক। বিশ্বব্রহ্মা-ে সর্বভুকের তালিকায় আর কোনো প্রাণীর নাম নেই। আবার এই সর্বভুকের মধ্যে কেউ কেউ আবার সর্বগ্রাসী সর্বভুক। পৃথিবীতে এমন কিছু নেই, যা এদের খাদ্য তালিকার বাইরে। বাংলাদেশে এরা আবার খাদক হিসেবে পরিচিত। এ রকম একটি খাদকের দল খুবলে খাচ্ছে সুরমা, খোয়াই, জাদুকাটা,

নয়াভাঙ্গুলী ও কীর্তনখোলা নদীর হৃৎপি-। এ সময় নদীর বালুই

হচ্ছে এদের প্রধান খাদ্য।

সিলেটের প্রাণ হিসেবে চিহ্নিত সুরমা নদীকে কুরে কুরে খাচ্ছে এই বালুখাদকরা। নদী রক্ষার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষ থাকলেও ব্যবস্থা সুরক্ষিত নয়। দখল ও দূষণের পাশাপাশি অবৈধভাবে যথেচ্ছ বালু উত্তোলনের মধ্য দিয়ে নদীর প্রাণস্পন্দনকে থামিয়ে দেওয়া হচ্ছে। দুঃখজনক হলেও সত্য, প্রশাসনের নাকের ডগায় অবাধে চলছে এসব অপকর্ম। অন্যদিকে নদীবেষ্টিত বরিশালের নদীরাও ভালো নেই। তারাও খাদকদের কবলে পড়ে বেঁচে থাকার জন্য চতুর্দিকে আবেদন করে চলেছে। হিজলা ও মুলাদী উপজেলার মধ্যবর্তী নয়াভাঙ্গুলী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের কীর্তনখোলার কাছে শাখা নদী থেকে নিয়মিত ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন চলছে। অথচ ওই দুই নদীতে প্রশাসনের তালিকাভুক্ত কোনো বালুমহাল নেই। অভিযোগ রয়েছে, প্রশাসনকে ম্যানেজ করে অসাধু বালু ও ড্রেজার ব্যবসায়ীরা বছরের ১২ মাসই এসব নদীতে বালু উত্তোলন করে চলেছে। এই বালুখাদকদের বিরুদ্ধে পত্র-পত্রিকা ও মিডিয়ার বিভিন্ন অংশে ইতোমধ্যেই সংবাদ প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়েছে। সমালোচিত হয়েছে প্রশাসন। তারপরও থেমে থাকেনি সর্বভুকদের খাদক প্রক্রিয়া।

বিষয়টি বাস্তবতার বাইরে নয়। যে দেশের প্রশাসন দুর্নীতিতে আক্রান্ত-সে দেশে এটাই ঘটবে এবং এটাই স্বাভাবিক। আমরা এ স্বাভাবিকতার বাইরে যেতে চাই। নদীখাদকদের হাত থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করতে চাই। রক্ষার জন্য যা কিছু প্রয়োজন, তা কার্যকর করাটা এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। নদীকে রক্ষা করতে না পারলে এ দেশকে রক্ষা করা খুব কঠিন হয়ে পড়বে। আর ঠিক এ কারণেই প্রশাসনকে সততার মধ্য দিয়ে কঠোর থেকে কঠোরতর হওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। অথবা প্রশাসনের খোলনলচে বদলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ এবং সমৃদ্ধ প্রশাসনের হাতে দায়িত্ব তুলে দিতে হবে। অন্যথায় আমরা একটি মহাসংকটের মুখোমুখি হব, যা কখনোই প্রত্যাশিত নয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close