আজহার মাহমুদ

  ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

পর্যালোচনা

পরিবর্তন জরুরি

এ যেন এক আলো-আঁধারের মহাকাব্য। সাড়ে ৫০০ এলইডি বাতির আলোতে ঝলমল করছে পুরো চট্টগ্রাম। হ্যাঁ, আমি জাম্বুরি পার্কের কথা বলছি। যাত্রা শুরু করল চট্টগ্রামের সবচেয়ে আধুনিক নজরকাড়া জাম্বুরি পার্ক। আগ্রাবাদ ১০ তলা ভবনের সামনে সাড়ে আট একর জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন এবং নজরকাড়া এই উদ্যান। এ উদ্যান তৈরি করতে ব্যয় হয়েছে সাড়ে ১৮ কোটি টাকারও বেশি। এতদিন সরকারি এই জমি পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকায় মাদকসেবীদের জন্য ছিল মাদকের অন্যতম আড্ডাস্থল। সেখানে গেলেই মিলত অবাধে মাদক আর মাদক। গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের উদ্যোগে খুব দ্রুত গড়ে তোলা হয়েছে এ পার্ক। ৮ সেপ্টেম্বর বিকেলে পার্কের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন মাননীয় মন্ত্রী। প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছিল ২০১৫ সালে। স্থাপত্য অধিদফতরের নকশায় ৮ দশমকি ৫৫ একর জমির ওপর রোপণ করা হয়েছে ৬৫ প্রজাতির ১০ হাজার গাছের চারা। এর মধ্যে আছে সোনালু, নাগেশ্বর, চাঁপা, রাধাচূড়া, বকুল, শিউলি, সাইকাস, টগর ও জারুলসহ বিভিন্ন প্রজাতির ফলদ এবং বনজ বৃক্ষ। খোলা চত্বরে লাগানো হয়েছে বিভিন্ন জাতের সবুজ ঘাস। পার্কে বসার সুযোগও রাখা হয়েছে সুন্দরভাবে। আর শুধু হাঁটার জন্য রাখা হয়েছে ৮ হাজার ফুট রাস্তা। ৫০ হাজার বর্গ ফুট জলাধার ও দৃষ্টিনন্দন ফোয়ারা যে কারো নজর কাড়বে। নিরাপত্তার জন্য বসানো হয়েছে ১৪টি ক্লোজসার্কিট ক্যামেরা। জলাধারের পাশে রয়েছে দুটি পাম্প হাউস। বৃষ্টি ও জোয়ারের পানির বিপদ থেকে রক্ষার জন্য পুরো পার্ক সড়ক থেকে তিন ফুট উঁচু করা হয়েছে। পানি নিষ্কাশনের জন্য রয়েছে অভ্যন্তরীণ মাস্টার ড্রেন। পার্কে প্রবেশের জন্য রয়েছে ছয়টি গেট। উত্তর পাশে দুটি, দক্ষিণ পাশে দুটি, পূর্বপাশে ১০ তলা ভবনের সামনে একটি, পশ্চিম পাশে আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালের সামনে একটি বড় গেট আছে। নাগরিকদের জন্য উত্তর-পূর্বকোণ ও দক্ষিণ পশ্চিমকোণে রাখা হয়েছে আধুনিক গণশৌচাগার।

পার্কে প্রবেশে নির্দিষ্ট কিছু নিয়মকানুন বেঁধে দিয়েছে পার্ক কর্তৃপক্ষ। ছুটির দিনসহ প্রতিদিন সকাল থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে এ পার্ক। সেখানে খাবার নিতে নিষেধ আছে। জলাধারে গোসল করা যাবে না। গাছের ক্ষতি করা যাবে না। পার্কে প্রবেশের জন্য কোনো ধরনের ফি রাখেনি কর্তৃপক্ষ। তবে এখানকার সবচেয়ে সুন্দর মুহূর্ত সন্ধ্যার পর। আলো-আঁধারের ঝলকানি যে কারো ভালো লাগবে। আগামী কয়েক বছর সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচর্যা করা হলে নতুন পর্যটন স্পট হয়ে উঠতে পারে এটিও। জাম্বুরি পার্ক মূলত শরীর চর্চার জন্য প্রশস্থ ও দীর্ঘ জগিং ট্র্যাক। একইসঙ্গে এটি হয়ে উঠেছে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের প্রশান্তির উন্মোক্ত উদ্যান। সবাই বলছেন এক কথা, ‘বান্ধবী নিয়ে আসেন, কবিতা পড়েন কিংবা আড্ডা দেন, কিন্তু পার্ক নষ্ট করবেন না।’ এত সুন্দর বক্তব্য এবং অনুরোধের পরও এ পার্কের অবস্থা নোংরা করে ফেলছে পার্কে আসা দর্শনার্থীরা। অনেকের মতে, পার্কের গাছগুলোকে বাড়তে দেওয়া হলে রমনা পার্কের চেয়েও অনেক সুন্দর হবে এ পার্ক। প্রকৃতপক্ষে এ পার্কের দায়িত্ব আমাদেরকেই নিতে হবে। সরকার উন্নয়ন করলে কী হবে, সমাজের কিছু নোংরা এবং হীনমন্য মানুষ রয়েছেÑ যারা এখানে এসে উদ্যানটিকে নোংরা এবং ময়লায় ভরপুর করে রাখছেন।

যদি প্রশ্ন করা হয়, এ পার্কটি পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত কার? এটাও কি সরকার কিংবা পার্কের কর্তৃপক্ষ করবে? আমাদের কি কোনো দায়িত্ব ও কর্তব্য নেই? পার্ক সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য আমাদের তো কোনো কাজ করতে হচ্ছে না, কিন্তু আমরা এ সুন্দর স্থানটিকে কেন নোংরা করে রাখব? এর দায় কি সরকারকেও নিতে হবে? আমারা কি এতটাই নিচে নেমে গেছি? এ পার্কটি তৈরি করার জন্য তো চট্টগ্রামের প্রতিটি মানুষ থেকে চাঁদা তোলেনি সরকার। বিনামূল্যে এবং কোনো ধরনের ঝামেলা ছাড়া চট্টগ্রামবাসীকে উপহার দিয়েছে একটি নান্দনিক বিনোদন পার্ক। পার্কটি মূলত শরীরচর্চা ও প্রাকৃতিক পরিবেশে বিশ্রাম বা সময় কাটানোর জন্য গড়ে তোলা হয়েছে। চট্টগ্রামের মানুষের বিনোদনের কথা চিন্তা করেই সরকার এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। এখানে আমরাই সময় কাটাব। আমাদের পরিবার পরিজন বন্ধু-বান্ধবরাই তো ঘুরতে আসবে। তবে কেন এ পার্কটিতে ময়লা ফেলে নোংরা করব আমরা? আমাদের নিজেদের ভেতর কি কোনো সচেতনতা আর নৈতিকতাবোধ নেই। আমরা ভুল করব আর দায় নিতে হবে সরকার কিংবা প্রসাশনকে। আমরা নিজেরা কতটা সচেতন এবং সুশৃঙ্খল সেটা কি আমরা একবারও চিন্তা করব না! আসলে আমাদের নিজেদের বিবেকের কাঠগড়ায় নিজেকে দাঁড় করাতে হবে। আমরা আগে নিজেদের পরিবর্তন করি, তাহলে দেশ ও সমাজ এমনিতেই পরিবর্তন হয়ে আসবে। আমাদের আচরণ, ব্যবহার ও চালচলন এসব বিষয়ে আরো সুন্দর হতে হবে। আমরা যেখানে সেখানে ময়লা, থুথু, এবং আবর্জনা ফেলতেও সংকোচ বোধ করি না। আমাদের এসব নোংরা মানসিকতায় পরিবর্তন আনতে হবে। তারপর আমরা অন্য বিষয় নিয়ে ভাবতে পারব।

লেখক : প্রাবন্ধিক ও ছড়াকার

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close