মো. মাঈন উদ্দিন

  ০৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

মতামত

ফাইভজি

বাংলাদেশে কিছুদিন আগেই চালু হয়েছে মোবাইলের ফোরজি ইন্টারনেট সুবিধা। কিন্তু বিশ্বে এর মধ্যেই আলোচনা শুরু হয়ে গেছে পঞ্চম প্রজন্মের ইন্টারনেট বা ফাইভজি নিয়ে। অনেক দেশে সামনের বছর নাগাদ এই সেবাটি চালু হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে, যেখানে বর্তমানের তুলনায় ১০ থেকে ২০ গুণ বেশি গতির ইন্টারনেট পাওয়া যাবে। কিন্তু আমাদের জীবনে তা কতটা কি পরিবর্তন আনবে? আমাদের কি তখন নতুন মোবাইল ফোন কিনতে হবে? এটা কি প্রত্যন্ত মানুষদের সেবাপ্রাপ্তি বাড়াবে? অনেকের মনে একটি কমন প্রশ্ন জাগতে পারে, তা হলো ফাইভজি আসলে কী? মোবাইল ফোনের পঞ্চম জেনারেশন ইন্টারনেটকে সংক্ষেপে ডাকা হয় ফাইভজি; যেখানে অনেক দ্রুত গতিতে ইন্টারনেট তথ্য ডাউনলোড এবং আপলোড করা যাবে। যার সেবার আওতা হবে ব্যাপক। এটা আসলে রেডিও তরঙ্গের আরো বেশি ব্যবহার নিশ্চিত করবে এবং একই সময় একই স্থানে বেশি মোবাইল ফোন ইন্টারনেটের সুবিধা নিতে পারবে।

এটি আমাদের জন্য কী অর্থ বহন করছে? ফাইভজি চালু হলে আমাদের জীবনপ্রবাহ পাল্টে যাবে দ্রুতলয়ে। এ সম্পর্কে একজন বিশেষজ্ঞের কথা শোনা যাক। মোবাইল তথ্যবিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান ওপেন সিগন্যালের কর্মকর্তা ইয়ান ফগ বিবিসিকে বলেছেন, ‘এখন আমরা আমাদের স্মার্টফোন দিয়ে যাই করি না কেন, ফাইভজি হলে তা আরো দ্রুত গতিতে এবং ভালোভাবে করতে পারব। চিন্তা করুন অগমেন্টেড রিয়েলিটি, মোবাইল ভার্চুয়াল রিয়েলিটি, উন্নত মানের ভিডিওÑযেসব ইন্টারনেট এখনকার শহুরে জীবনকে আরো স্মার্ট করে তুলছে। কিন্তু এমন অনেক নতুন সেবা আসবে, যা আমরা এখনো ভাবতে পারছি না।’ হয়তো ড্রোনের মাধ্যমে গবেষণা এবং উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা হবে, অগ্নিনির্বাপণে সহায়তা করবে। আর সেসবের জন্যই ফাইভজি প্রযুক্তি সহায়ক হবে। অনেকে মনে করেন, চালকবিহীন গাড়ি, লাইভম্যাপ এবং ট্রাফিক তথ্য পড়ার জন্যও ফাইভজি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। মোবাইল গেমাররা আরো বেশি সুবিধা পাবেন। ভিডিও কল আরো পরিষ্কার হবে। সহজেই ও কোনো রকম বাধা ছাড়াই মোবাইলে ভিডিও দেখা যাবে। শরীরে লাগানো ফিটনেস ডিভাইসগুলো নিখুঁত সময়ে সংকেত দিতে পারবে, জরুরি চিকিৎসা বার্তাও পাঠাতে পারবে।

নিশ্চয়ই আপনার মনে প্রশ্ন জাগছে ফাইভজি কীভাবে কাজ করবে? প্রকৃতপক্ষে নতুন কিছু প্রযুক্তি হয়তো প্রয়োগ আসতে যাচ্ছে, কিন্তু ফাইভজি প্রটোকলের মান এখনো নির্ধারিত হয়নি। ৩.৫ গিগাহার্জের থেকে ২৬ গিগাহার্জের মতো হাইয়ার ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ডের অনেক ক্ষমতা রয়েছে, কিন্তু স্বল্প তরঙ্গ দৈর্ঘ্যরে কারণে তাদের আওতা থাকে কম। ফলে সামনে কোনো বাধা পেয়ে সেগুলো সহজেই আটকে যায়। ফোরজির তুলনায় ফোরজি কী অনেক আলাদা, এ প্রশ্নের উত্তরে বলবÑঅবশ্যই। এটা একেবারে নতুন একটি রেডিও প্রযুক্তি। কিন্তু প্রথমেই হয়তো দ্রুত গতির বিষয়টি নজরে আসবে না। কারণ নেটওয়ার্ক অপারেটররা বর্তমান ফোরজি নেটওয়ার্ককে ফাইভজিতে বাড়িয়ে গ্রাহকদের আরো উন্নত সেবা দিতে চাইবেন। দ্রুত গতির বিষয়টি নির্ভর করবে, কোনো স্পেকট্রাম ব্যান্ডে ফাইভজি ব্যবহার করা হচ্ছে এবং মোবাইল কোম্পানিগুলো মাস্ট এবং ট্রান্সমিটারের পেছনে কতটা বিনিয়োগ করছেন।

তাহলে এটি কতটা দ্রুত গতির হতে পারে? বর্তমানের ফোরজি প্রযুক্তির নেটওয়ার্ক গড়ে সর্বোচ্চ ৪৫ এমবিপিএস গতি সুবিধা দিতে পারে। যদিও আশা করা হচ্ছে, এই নেটওয়ার্কেই ১ গিগাবাইট পার সেকেন্ড গতি একসময় দেওয়া যাবে। চিপ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান কোয়ালকম জানিয়েছে, ফাইভজির ১০ থেকে ২০ গুণ গতি দিতে পারে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, একটি ভালো মানের চলচ্চিত্র হয়তো মাত্র এক মিনিটেই ডাউনলোড করা যাবে। অনেকেই হয়তো বলবেন, ফাইভজি কেন দরকার? সত্যি হলো, সারা বিশ্বই এখন মোবাইলনির্ভর হয়ে উঠছে এবং প্রতিদিনই আমরা আরো বেশি তথ্য ব্যবহার করছি। বিশেষ করে ভিডিও এবং সংগীত ব্যবহার অনেক বাড়ছে। বর্তমান নেটওয়ার্কে অনেক সময় এসব সেবা নিতে গিয়ে বাধাপ্রাপ্ত হতে হয়। হয়তো ডাউনলোডের সময় মাঝপথে ভেঙে যায়। বিশেষ করে যখন কোনো একটি এলাকায় একসঙ্গে অনেক মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করেন, তখন বেশি সমস্যা দেখা যায়। এ রকম পরিস্থিতিতে ফাইভজি অনেক ভালো সেবা দিতে পারবে। আরো একটি কথা, পত্রপত্রিকার মাধ্যমে আমরা যে তথ্য পাই তা হলো, বেশির ভাগ দেশ ২০২০ সাল নাগাদ ফাইভজি সেবা চালু করতে চায়। তবে কাতারের ওরেডো কোম্পানি জানিয়েছে, তারা এর মধ্যেই বাণিজ্যিকভাবে সেবাটি চালু করেছে। সামনের বছর ফাইভজি চালু করতে চায় দক্ষিণ কোরিয়া। ২০১৯ সালে এই সেবা চালু করতে চায় চীনও।

ফাইভজি চালাতে আমাদের নতুন ফোন দরকার হবে কি? এ প্রশ্নের উত্তরে বলবÑসম্ভবত। তবে ২০০৯/১০ সালে যখন ফোরজি প্রযুক্তি চালু হয়, তার আগেই মোবাইল কোম্পানিগুলো এর উপযোগী ফোন নিয়ে বাজারে এসে গিয়েছিল। ইয়ান ফগ জানান, এবার হয়তো কোম্পানিগুলো সেই কাজ করবে না। সামনের বছর নাগাদ হয়তো তারা ফাইভজির উপযোগী করেই ফোন বাজারে আনবে, তবে এসব ফোন ফোরজিতেও কাজ করতে পারবে।

এটা কি ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট যুগের সমাপ্তি ঘটিয়ে দেবে? আবাসিক এবং অফিসগুলো আরো অনেক বছর ধরে ফিক্স ব্রডব্যান্ড লাইনের ওপর নির্ভর করবে। কারণ এখনো অনেকই মনে করেন, তারের মাধ্যমে স্থিতিশীল ইন্টারনেট পাওয়া যায়। প্রান্তিক এলাকায় কতটা সহায়ক ভূমিকা রাখবে ফাইভজি? দেখুন, অনেক দেশের প্রান্তিক এলাকায় সিগন্যাল সমস্যা এবং খারাপ গতির ইন্টারনেট একটি সমস্যা, এমনকি যুক্তরাজ্যেও। তবে ফাইভজিতে হয়তো এই সমস্যার এখনি কোনো সমাধান আনতে পারবে না, কারণ এটিও উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সির ব্যান্ডে কাজ করে। এটা একসঙ্গে অনেক মানুষকে সেবা দিতে পারে, কিন্তু এর আওতা ততটা বড় নয়। ফলে আপাতত ফাইভজি শহরে এলাকার মানুষজনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। সত্যি কথা বলতে, অত্যন্ত প্রত্যন্ত এলাকাগুলোয় সরকারি সহায়তা ছাড়া নেটওয়ার্ক অপারেটররা হয়তো যেতেই চাইবে না।

লেখক : কথাসাহিত্যিক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close