রায়হান আহমেদ তপাদার

  ০১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

পর্যালোচনা

দখলের রাজনীতি ও বিধ্বস্ত মধ্যপ্রাচ্য

মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলের তেল ও প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাচুর্যতা দৃষ্টি কেড়েছে পুরো বিশ্ব সম্প্রদায়ের। তেল আর প্রাকৃতিক সম্পদের জন্য যুগে যুগে বৃহৎ ও আঞ্চলিক শক্তিগুলো তাই মধ্যপ্রাচ্যে প্রভুত্ব ও আধিপত্য বিস্তারের জন্য শীতল যুদ্ধে জড়িয়েছে বা কখনো আবার সরাসরি সশস্ত্র সংঘাতে বা যুদ্ধে জড়িয়েছে এবং কখনো কখনো প্রক্সিযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছে। উল্লেখ্য, প্রাপ্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী ওপেকভুক্ত দেশগুলোর দৈনিক তেল উৎপাদনের ক্ষমতা প্রায় ২৩.২ মিলিয়ন ব্যারেল। এর মধ্যে উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলো উৎপাদন করে সর্বাধিক ১৪.২ বিলিয়ন ব্যারেল। পরিসংখ্যান মতে, বিশ্বের মোট মজুত তেলের ৬২ শতাংশই মজুত রয়েছে উপসাগরীয় দেশগুলোয়। কাজেই তেলের ওপর আধিপত্য স্থাপনজনিত কারণেও এ অঞ্চল উত্তপ্ত রয়েছে বছরের পর বছর ধরে। ধর্মকেন্দ্রিক সাম্প্রদায়িকতা, নৃ-তাত্ত্বিক বিভাজন, শিয়া-সুন্নি বিভাজন, আরব জাতীয়তাবাদ ইত্যাদি আদর্শবাদী ও ধর্মীয় চিন্তাধারা মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে দীর্ঘ মেয়াদের জন্য সংকট ও সংঘাতের ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছিল, সেটি শতাব্দীকাল ধরে এ অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করে রেখেছে এবং মাঝেমধ্যেই রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে যুদ্ধ উসকে দিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, শিয়া-সুন্নি সংকট অমীমাংসিত দীর্ঘকালের একটি সংকট। এটি যেমন সাম্প্রদায়িক সংকট, তেমনি ধর্মীয় আদর্শগত সংকটও বটে। ফলে শিয়া-সুন্নি মতাদর্শগত বিভক্তি কখনো অবসান হবে, তেমনটা মনে হচ্ছে না। এ বিভক্তির অবসান না হলে মুসলমানদের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠিত না হলে মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে না। বরং পরিস্থিতি ভবিষ্যতে আরো সংকটময় হয়ে উঠতে পারে।

ইসলামের বিভক্তিকে কেন্দ্র করে শিয়াপ্রধান ইরান এবং সুন্নিপ্রধান সৌদি আরবের মধ্যকার আঞ্চলিক শক্তি হওয়ার প্রতিযোগিতা পুরো মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলের জন্য বিপজ্জনক সংকট ডেকে এনেছে। এর প্রভাব পড়েছে ইয়েমেন যুদ্ধে। এর প্রভাব রয়েছে সিরিয়া, লেবানন, ইরাক প্রভৃতি রাষ্ট্রগুলোয়। মধ্যপ্রাচ্যের রাষ্ট্রগুলোয় রাষ্ট্রক্ষমতা পরিবর্তনের সুস্পষ্ট গণতান্ত্রিক নির্বাচনের ব্যবস্থা না থাকায় ক্ষমতা পরিবর্তনের জন্য অনেক সময় গৃহযুদ্ধ পর্যন্ত হতে দেখা যায়। অনেক সময় রাজা-বাদশাহকে জোর করে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে ছেলে। আবার অনেক সময় একাধিক ছেলের মধ্যেও লড়াই বেধে যায় ক্ষমতার জন্য। সুলাইমানিয়ার রাফারিন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ আকই এ প্রসঙ্গে বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে রাষ্ট্র ক্ষমতা কার কর্তৃত্বে থাকবে সেটি নিয়ে সমস্যা ও সংকট তৈরি হয়। কে পিতার স্থলাভিষিক্ত হবে, সেটি অনেক সময় সংঘাতের ক্ষেত্র তৈরি করে, এটি বড় ভূমিকা রাখে দেশের রাজনীতিতে। প্রকৃত অর্থে, ক্ষমতা পরিবর্তনের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ কোনো ব্যবস্থা না থাকায় ক্ষমতা দখলের হানাহানি একটি স্থায়ী সংকট হয়ে আছে মধ্যপ্রাচ্যে। আর অন্যদিকে, ওই অঞ্চলের জনগণ তাদের মৌলিক গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য, একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের দাবিতে, ক্ষমতা পরিবর্তনে জনগণের অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করার জন্য মাঝেমধ্যেই বিদ্যমান অবৈধ শাসকদের বিরুদ্ধে গণ-আন্দোলন গড়ে তোলে। এমনই একটি আন্দোলন ছিল ‘আরব বসন্ত’ খ্যাত গণ-আন্দোলন। কাজেই যত দিন পর্যন্ত এ অঞ্চলের রাষ্ট্রগুলোয় গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান এবং রাষ্ট্র ক্ষমতা পরিবর্তনের সুস্পষ্ট, জনগণের সম্মতি ও অংশীদারিত্বের নিশ্চয়তার বিধানসংবলিত ব্যবস্থা ও পদ্ধতি গড়ে না উঠবে, ততোদিন পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্য অস্থিতিশীল ও সংঘাত প্রবণ অঞ্চল হিসেবে বিদ্যমান থাকবে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত।

মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর মৌলিক একটি সমস্যা হলো ওখানকার শাসকগোষ্ঠীর দেশ শাসনের বৈধতার প্রশ্ন আছে। কারণ কোনো শাসকই জনগণ দ্বারা নির্বাচিত নয় এবং জনগণের সম্মতির দ্বারা প্রাপ্ত ক্ষমতা বলে শাসকরা রাষ্ট্রযন্ত্র পরিচালনা করছেন না। যদিওবা কোনো কোনো রাষ্ট্রে ভোটের ব্যবস্থা রয়েছে বলে দাবি করা হয় বা ভোটের আয়োজন করা হয়ে থাকে, কিন্তু ভোটের বিশ্ব স্বীকৃত মানদ-ের বিবেচনায় এগুলোকে সঠিক নির্বাচন বলা যায় না। অর্থাৎ সাজানো নির্বাচনে জনগণের মতামতের প্রতিফলন ঘটে না। তাই এসব শাসকদের জনগণের দ্বারা নির্বাচিত বৈধ সরকার বা বৈধ শাসক বলা যায় না। আবার বেশ কয়েকটি রাষ্ট্রে তো রাজতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা বিদ্যমান রয়েছে। সব মিলে মধ্যপ্রাচ্যের অধিকাংশ রাষ্ট্রের শাসকই জনসম্মতি ছাড়া অবৈধভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলে রেখে জনগণের সব অধিকার অস্বীকার করে চলেছেন। ক্ষমতার পথে যেকোনো বাধা নির্মমভাবে দমন করা হয়ে থাকে। নানাভাবে জনগণের ওপর নির্মম অত্যাচার করা হয়। এসব কর্তৃত্ববাদী স্বৈরশাসকরা নিজের শাসনের স্বার্থে যুদ্ধ, গৃহযুদ্ধ, দ্বন্দ্ব-সংঘাত উসকে দেয় এবং সশস্ত্র বাহিনীকে নিজেদের ক্ষমতার স্বার্থে ব্যবহার করে। জনগণকে অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখার জন্য গণতান্ত্রিক কোনো বৈধ প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠতে দেওয়া হয় না। কুর্দিশ পলিসি ফাউন্ডেশনের সুশাসন ও নিরাপত্তা-সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ সারকাওয়াত সামসুদ্দিন মনে করেন, ‘ধর্মের অপব্যবহার ও ক্ষমতার জন্য ধর্মের ব্যবহার এবং সুশাসনের সংকট মধ্যপ্রাচ্যের রাষ্ট্রগুলোর প্রধান সমস্যা। শাসকরা নানা উপায়ে জনগণের ওপর নির্যাতন করে থাকে। জনগণের মৌলিক মানবাধিকার পদদলিত, নেই গণতন্ত্র, নেই বাক ও ব্যক্তি স্বাধীনতা এবং এমনকি নেই সিভিল সোসাইটি।

এ ছাড়া শাসকরা বিরোধী কোনো রাজনৈতিক দল বা গ্রুপের অস্তিত্ব অস্বীকার করে। এমনকি শাসকরা সামরিক খাত এবং নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানগুলোর পেছনে অত্যধিক অর্থ ব্যয় করে এবং যখনই শাসকদের বিরুদ্ধে জন-অসন্তোষ সংঘটিত হয়, তখন এসব বাহিনীকে বিরোধী মতাদর্শী জনগণকে দমনের কাজে ব্যবহার করে থাকে। যুদ্ধ, গৃহযুদ্ধ, সন্ত্রাসী আক্রমণ-প্রতি আক্রমণ, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক সংঘাতে জর্জরিত মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চল বিশ্বের সবচেয়ে অস্থিতিশীল একটি অঞ্চল। বিগত পঞ্চাশ বছর ধরে এ অঞ্চলের জনগণ যুদ্ধের সাথেই বসবাস করে আসছে। এসব যুদ্ধের মধ্যে উল্লেখযোগ্য যুদ্ধগুলো হলো গালফ যুদ্ধ, আরব, ফিলিস্তিন বনাম ইসরায়েলের মধ্যকার যুদ্ধ, বাহরাইন যুদ্ধ, সিরিয়ার চলমান যুদ্ধ, ইরাক ও লিবিয়ায় বিদ্যমান সরকারগুলোর সঙ্গে আমেরিকান নেতৃত্বাধীন যৌথবাহিনীর যুদ্ধ, কুয়েতের বিরুদ্ধে ইরাকের ঝটিকা আক্রমণ ও দেশটি ইরাকের দখলে নেওয়া, অন্যদিকে গত পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময় ধরে ইসরায়েল কর্তৃক ফিলিস্তিনি মুসলমানদের ওপর সশস্ত্র আক্রমণ অব্যাহত রাখা ইত্যাদি যুদ্ধ, সংঘাত ও গৃহযুদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যের নিত্যসঙ্গী হয়ে আছে। এসব কারণে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে, মধ্যপ্রাচ্য কেন যুদ্ধকবলিত, অস্থিতিশীল এবং সংঘাতপ্রবণ অঞ্চল। একাধিক কারণেই মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চল এত সংঘাত ও যুদ্ধপ্রবণ অঞ্চল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়কালে ওসমানীয় সাম্রাজ্যের অপরিকল্পিত বিভক্তি, ফিলিস্তিনি ভূখ-ে মুসলমানদের বুকের ওপর অগ্রহণযোগ্য একটি ইহুদি রাষ্ট্র অর্থাৎ ইসরায়েল রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা করা, মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলের অবস্থান ও এর প্রাকৃতিক সম্পদের প্রতি বিদেশি আগ্রাসী শক্তিগুলোর লোলুপ দৃষ্টি ওই অঞ্চলের জনগণ ও রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে ধর্মীয় অর্থাৎ শিয়া-সুন্নি বিভাজন ও সংঘাত এবং আঞ্চলিক শক্তির প্রতিযোগিতা ইত্যাদি কারণের পাশাপাশি রাষ্ট্র ক্ষমতা নিয়ে অভ্যন্তরীণ প্রতিযোগিতা ও সংঘাত উল্লেখযোগ্য প্রতিপাদ্য বিষয় এবং এসবের কোনো না কোনো কারণের জন্য মধ্যপ্রাচ্যে অব্যাহতভাবে যুদ্ধ, গৃহযুদ্ধ ও সংঘাত লেগেই আছে।

ভূরাজনৈতিক ও ভূকৌশলগত অবস্থানের কারণে বিশ্বের মধ্যে মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইস্টার্ন ওয়ার্ল্ড এবং ওয়েস্টার্ন ওয়ার্ল্ডের প্রায় মধ্যস্থলে অবস্থিত এ অঞ্চলটির বিস্তৃতি এশিয়া, আফ্রিকা এবং ইউরোপ, এ তিনটি মহাদেশজুড়ে। বহুবিস্তৃত মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে মোট রাষ্ট্রের সংখ্যা ১৭টি এবং জনসংখ্যা প্রায় ৪১১ মিলিয়ন। এর মোট আয়তন প্রায় ২৭৮২৮৬০ বর্গমাইল। পাঁচটি মহাসাগর-ভূমধ্যসাগর, রেড সাগর, আরব সাগর ও দ্য ব্ল্যাক সাগরসমূহের তীরে অবস্থিত মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চল বিশ্বের নৌযোগাযোগের চারটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ প্রণালি অর্থাৎ বসফরাস প্রণালি, দার্দানেলিস প্রণালি, বাবেল মানডেব প্রণালি ও হরমুজ প্রণালির ওপর আধিপত্য স্থাপন করায় এ অঞ্চলটির গুরুত্ব সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য। তাই এ অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তারের প্রতিযোগিতা রয়েছে। শিয়া-সুন্নি বিভক্তির পেছনে যেমন আদর্শবাদিতা রয়েছে, তেমনি আছে ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনৈতিক কারণ। কারবালার বিয়োগান্ত পরিণতি অব্যাহতভাবে জিইয়ে রেখেছে শিয়া-সুন্নির দ্বন্দ্ব ও সংঘাত। আবার শিয়া নাকি সুন্নি সম্প্রদায় মধ্যপ্রাচ্যে নেতৃত্ব দেবে তা নিয়ে আছে ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে রাজনৈতিক ও আদর্শবাদী সংকট। এ কারণে মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে যুদ্ধ, গৃহযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে এবং ভবিষ্যতে যুদ্ধ, গৃহযুদ্ধের ঘটনা ঘটতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। কারণ, বিশ্ব মুসলিমদের নেতৃত্ব কার হাতে থাকবে অথবা মধ্যপ্রাচ্যের আঞ্চলিক শক্তির নেতৃত্ব কোনো রাষ্ট্রের ওপর বর্তাবে, ইরান না সৌদি আরব, সেটির চূড়ান্ত ফয়সালা না হওয়া পর্যন্ত শিয়া-সুন্নির মধ্যকার রাজনৈতিক, সাম্প্রদায়িক ও আদর্শবাদী বিভক্তি ও সংঘাত চলতেই থাকবে। কেননা, একই ধর্মের দুটি বৃহৎ সম্প্রদায় শিয়া ও সুন্নি মুসলমানদের মধ্যে যদি বিভেদ, সংঘাত ও রাজনৈতিক ক্ষমতা অর্জনের জন্য প্রতিযোগিতা এবং এমনকি যুদ্ধ পর্যন্ত সংঘটিত হয়, সে ক্ষেত্রে অত্রাঞ্চলে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা প্রায় অসম্ভব।

ফিলিস্তিনিরা অব্যাহতভাবে ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদ জানাচ্ছে। ইসরায়েলি আগ্রাসন থেকে বাদ যায়নি আরব রাষ্ট্রগুলো। ফলে বড় ধরনের তিনটি আরব ইসরায়েল যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে ওখানটায়। আর সীমান্ত যুদ্ধ হরদমই চলছে। হাজার হাজার মুসলমান নিহত হয়েছে ইসরায়েলি আগ্রাসনে এবং কয়েক লাখ ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তু হয়ে অন্যান্য দেশে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন। আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলকে নেতৃত্ব দেওয়ার প্রতিযোগিতায় রয়েছে পাঁচটি দেশ-সৌদি আরব, ইরান, ইসরায়েল, তুরস্ক এবং মিসর। আর এসব রাষ্ট্রের পেছন থেকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে বৃহৎ শক্তিগুলো। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া এবং চীন নিজেদের স্বার্থের অনুকূল মিত্র রাষ্ট্রগুলোকে নৈতিক, আর্থিক, রাজনৈতিক, সামরিক তথা সর্বপ্রকার সমর্থন জুগিয়ে যাচ্ছে। এসব বৃহৎ শক্তিগুলোর উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য হলো মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের আধিপত্য স্থাপনের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের তেল, প্রাকৃতিক সম্পদ, কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ নৌরুট ও পানির ওপর দখল ও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা। কেননা, ওয়ার্ল্ড পাওয়ার প্রতিযোগিতায় মধ্যপ্রাচ্য নিয়ন্ত্রণ করা অপরিহার্য। এই বৃহৎ শক্তিগুলোর সমর্থনে উপরোক্ত পাঁচটি রাষ্ট্র আঞ্চলিক শক্তি সঞ্চয় করার জন্য বিভিন্ন ধরনের মিলিট্যান্ট গ্রুপ ও অপশক্তির দ্বারা পুরো অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করে রেখেছে, যার চূড়ান্ত কোনো সমাধান এখনো নাগালের মধ্যে নেই। মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘমেয়াদব্যাপী চলে আসা সংঘাত, সংঘর্ষ, যুদ্ধ, অস্থিতিশীলতার জন্য সাম্রাজ্য বাদী চক্রান্ত, ধর্মীয় ও নৃ-তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব, ক্ষমতার দ্বন্দ্ব, বৃহৎশক্তি ও জাতিসংঘের ভূমিকা ইত্যাদি বহুবিধ কারণই দায়ী। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য আরব, ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল সংকটের স্থায়ী সমাধান জরুরি। নতুবা মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীলতা আসবে না।

লেখক : গবেষক ও বিশ্লেষক

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close