মো. আবু তালহা তারীফ

  ৩১ আগস্ট, ২০১৮

ধর্ম

আধুনিক প্রযুক্তিতে দ্বীনি দাওয়াত

বিজ্ঞানের উন্নতির এই যুগে দাওয়াতের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার। আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে অল্প সময়ে কম কষ্টে অসংখ্য মানুষের নিকট দ্বীনি দাওয়াত দেওয়া খুব সহজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আধুনিক মাধ্যমগুলোতে ইসলামের সহীহ আকিদার মানুষ কম আসায় এ ক্ষেত্রে সুযোগ নিয়ে নিচ্ছে ভ্রান্ত একটি দল বা গোষ্ঠি। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উৎকর্ষের ফলে পৃথিবী এখন হাতের মুঠোয়। বিজ্ঞানের কল্যাণে বিশ্ব এখন একটি গ্রামে পরিণত হয়েছে।

দ্বীনি দাওয়াতের পদ্ধতি একদিকে যুগোপযোগী উন্নত মানের হওয়া দরকার অন্যদিকে সমকালীন বাতিল শক্তির মোকাবিলা করার মতো যোগ্যতা, দক্ষতা ও কৌশল প্রয়োগের সক্ষমতা থাকা জরুরি। তাই চাই মিডিয়ার ব্যবহার। এই মিডিয়া চার ভাগে ভাগ করা যায়Ñ ১. প্রিন্ট মিডিয়া, ২. অডিও মিডিয়া, ৩. ভিডিও মিডিয়া এবং ৪. কম্পিউটার মিডিয়া। আধুনিক বিশ্বে দ্বীনি দাওয়াতের অন্যতম মাধ্যম ওয়েবসাইট, ওয়েব পোর্টাল ও অনলাইনে ফ্রি বই প্রকাশ করে, স্কানিং কপি আপলোড করা বা বিজ্ঞাপনে ইসলামী ছবি ব্যবহারের মাধ্যমে। তাছাড়া আরো রয়েয়েছে ব্লগ; যা দ্বীনি দাওয়াত দেওয়ার জন্য অন্যতম একটি মাধ্যম। বর্তমান সময়ে ইসলামের সুমহান বাণী লিখে দ্বীনি দাওয়াতের ব্যাপক ভূমিকা পালন করা যায় এই ব্লগের মাধ্যমে। তাছাড়া আরো রয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক। ফেসবুকে ইসলামের বিভন্ন তথ্য শেয়ার করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দ্বীনি দাওয়াতের মাধ্যমে সাওয়াব হাসিল করা যায়। দ্বীনি দাওয়াতের ক্ষেত্রে বিশেষ আরো একটি মাধ্যম হলো ইউটিউব বা এর নিজস্ব চ্যালেন তৈরি; যার মাধ্যমে জুমার খুতবা, বিভন্ন স্থানসমূহের দৃশ্য এবং নিজের কিছু ধর্মীয় আলোচনা করে মানুষকে দেখার সুযোগ করে দেওয়া যেতে পারে। প্রযুক্তির এই দুনিয়ায় আরো রয়েছে টেলিভিশন ও রেডিও; এখানে ধর্মীয় আলোচনার মাধ্যমে দ্বীনি দাওয়াত দেওয়া যেতে পারে। অনলাইন পত্রিকা, সমাজ পরিবর্তন ও সমাজের ভালো কিছু প্রচলনের ক্ষেত্রে সর্বপেক্ষা স্থায়ী ভূমিকা রাখতে পারা প্রিন্ট মিডিয়ার মাধ্যমে ইসলামী কলাম লিখে দ্বীনি প্রচারের বিশেষ ভূমিকা পালন করা যায়। বর্তমানে কোরআন ও হাদিস অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে রয়েছে বিভন্ন সফটওয়্যার, যা,যেকোনো বিষয়ে জানতে সহজ করে দেয়। তাছাড়া বর্তমান বিশ্বে দ্বীনি দাওয়াত দেওয়ার জন্য হাতের মুঠোয় গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে কাজ করছে অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল। এই মোবাইলে ইসলামবিষয়ক অ্যাপসমূহ, বিভিন্ন অনুবাদ, মাসয়ালাসহ বিভন্ন তথ্যসমূহ রেখে অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিয়ে দ্বীনি দাওয়াত প্রচারে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। আধুনিক প্রযুক্তিতে ইসলামী দাওয়াত প্রদান করা তথা সৎ কাজের আদেশ প্রদান করা ও অসৎ কাজের নিষেধ প্রদান করা সব মুসলমানের ওপর অবশ্য কর্তব্য। উম্মতে মুহাম্মাদির অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো দাওয়াত, আদেশ-নিষেধ, দ্বীন প্রতিষ্ঠা বা নসিহতের দায়িত্ব। এই দ্বীনি দাওয়াত যে ব্যক্তি পালন করবে, সে সফলতা অর্জন করবে। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর যেন তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল হয়, যারা কল্যাণের প্রতি আহবান করবে, ভালো কাজের আদেশ দিবে এবং মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করবে আর তারাই সফলকাম, (সুরা ইমরান : আয়াত-১০৪)।’

দাওয়াতি কাজ শুধুমাত্র খানকা, মসজিদে, সংগঠনে, ওয়াজ মাহফিলে ও লেখালেখির কাজে সীমাবদ্ধ রাখলে হবে না। বর্তমানে ডিজিটাল তথ্যপ্রযুক্তির যুগ, তথ্য প্রযুক্তির যুগে অন্য ধর্মাবলম্বীরা যেভাবে তাদের ধর্মীয় কাজ সারা বিশ্বে মুহূর্তে প্রচার করছে, তাদের তুলনায় আমরা মোটেও পারছি না। মুসলমানদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ ব্যাপকহারে প্রচার করার জন্য ইহুদিদের রয়েছে প্রায় সাড়ে আট লাখেরও বেশি ওয়েবসাইট। খ্রিস্টানদের প্রচারণায় রয়েছে প্রায় পাঁচ লাখের বেশি এবং অনান্য অমুসলিমদের রয়েছে প্রায় চার লাখের বেশি ওয়েবসাইট। তারা তাদের ওয়েবসাইট, ফেসবুক, টুইটার, ইন্টারনেটের মাধ্যমে মুসলমানদের নিকট তাদের দাওয়াতি কাজ করছে। অমুসলিমদের নিকটে দ্বীনি দাওয়াতের কারণে অমুসলিম দেশে ক্রমেই মুসলমানদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সুতরাং, বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ মাদ্রাসা ও স্কুল বন্ধ থাকাবস্থায় কিছু বন্ধু মিলে একজন আলেমকে সঙ্গে নিয়ে নিজ এলাকায় সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সরকারি বেসরকারী উচ্চপদমর্যাদার কর্মকর্তাসহ এলাকার মেম্বার, চেয়ারম্যান, এমপি ও মন্ত্রীÑ সবার নিকট দ্বীনি দাওয়াত প্রচার করলে আশা করা যায় যে, মানুষ ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নেবে। যদি দাওয়াত প্রচারকারীদের তারা কোনোরূপ অবহেলা করে কিংবা গালমন্দ করে তবুও মন খারাপ না করে নবী রাসুলদের কাজে এগিয়ে যেতে হবে। মুসলিম অমুসলিম ব্যক্তিকে দাওয়াত দিলে মানুক বা না-ই মানুক, ফায়দা হোক বা না হোকÑ নিজের ফায়দা হবে। অন্যের ঈমান আমল দোরস্ত করার কাজে সহযোগিতা করলে আল্লাহ নিজের আমাল দোরস্ত করে দেন। রাসুল (সা.) বলেন, ‘একজন বান্দা আরেকজন বান্দার সাহায্য করে থাকলে আল্লাহপাকও তার সাহায্য করে থাকবেন। অন্যের ঈমান আমলের কাজে সাহায্য করলে আল্লাহপাক নিজের ঈমান আমলের ফায়সালা করে দেবেন, (মুসলিম শরিফ)।’

দ্বীনি দাওয়াত দেওয়া প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য তার আওতাধীন সক ব্যক্তির ওপর দেওয়া অবশ্যক। পরিবারের কর্তার জন্য তার স্ত্রী, সন্তানদের দ্বীনের দাওয়াত দিয়ে ইসলামের শরিয়া মোতাবেক পরিচালনা করা, বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, মাদ্রাসা ও স্কুলের প্রধানগণ তার সহকারী ও শিক্ষার্র্থদের, মিল ফ্যাক্টরি বা শিল্পপ্রতিষ্ঠানের পরিচালকগণ তার অধীনস্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের, এলাকার শাসকগণ যার যার অধীনস্ত সবাইকে সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ প্রদান করে ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয়ের জন্য দাওয়াত দেবেন। কেননা, রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা প্রত্যেকেই জিম্মাদার এবং তোমাদের প্রত্যেককেই অধীনস্তদের ব্যাপারে জিজ্ঞাস করা হবে, (বুখারি শরিফ)।’

লেখক : প্রাবন্ধিক ও বিশ্লেষক

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close