ঈদ মোবারক
মহান ত্যাগের বার্তা নিয়ে আবার এলো পবিত্র ঈদুল আজহা। আগামীকাল রাত পোহানোর সঙ্গে সঙ্গে সেই বার্তা পৌঁছে যাবে বিশ্ব মুসলিমের ঘরে ঘরে। আনন্দে-উদ্বেলিত হয়ে উঠবে প্রতিটি হৃদয়। মুসলমানদের জন্য পবিত্র এই দিনটি একসঙ্গে পশু কোরবানি এবং উৎসব করারও দিন। কোরবানির উদ্দেশ্য হচ্ছে পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করা। যে সস্তুষ্টি অর্জনের জন্য হজরত ইব্রাহিম (আ.) প্রিয় সন্তান ইসমাইল (আ.)-কে কোরবানি করার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। সেই কঠিন পরীক্ষায় তিনি সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। আর সেদিন হজরত ইব্রাহিম (আ.) ত্যাগের যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন, তা মুসলমানদের জন্য একটি আদর্শ। সেই আদর্শকে তার উম্মতদের জন্য চূড়ান্ত বিধান হিসেবে বাস্তবায়ন করেছিলেন হজরত নবী করিম (সা.)।
মনে রাখতে হবে, ঈদুল আজহার এ দিনটি শুধু পশু কোরবানির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, তার আগে পবিত্র হজকে মুসলমানদের জন্য ফরজ করা হয়েছে। এ উপলক্ষে পবিত্র মক্কায় পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লাখ লাখ মুসলমান সমবেত হন। জিলহজ মাসের ৮ তারিখ থেকে তিন দিন ধরে তারা নির্ধারিত স্থানগুলোয় আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন। আর মহান আল্লাহতায়ালার নৈকট্য লাভের আশায় ‘লাব্বাইক, আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ ধ্বনিতে আকাশ-বাতাস মুখরিত করে তোলেন। শেষে আসে কোরবানির পালা, যাকে কেন্দ্র করে উদ্যাপিত হয় ঈদুল আজহা। দিনটির প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহতায়ালার প্রতি পরিপূর্ণ আনুগত্য ও আত্মত্যাগের শিক্ষা নেওয়া। আমাদের প্রত্যাশা, বাংলাদেশের মুসলমানরাও ধনী-গরিবের ভেদাভেদ ভুলে ঈদুল আজহার আদর্শ ও উদ্দেশ্যকে গভীরভাবে অনুধাবন করবেন এবং বাস্তবায়নের চেষ্টা করবেন। আজ বিশ্ব যে বৈষম্য ও নৈতিক অবক্ষয়ের দিকে ধাবিত হচ্ছে, তা থেকে মানুষকে রক্ষা করতে হবে। আর ঈদুল আজহার শিক্ষাই পারে এই নৈতিকতা বোধ তৈরি করতে, যা আজ মানুষের বড়ই প্রয়োজন।
মানুষ যেকোনো উৎসবই স্বজন-পরিজনদের নিয়ে উদ্যাপন করতে চায়। আর তা যদি ঈদের মতো কোনো উৎসব হয়, তাহলে তো সেখানে এক অন্যরকম আবেগ কাজ করে। যত কষ্টই হোক নাড়ির টানে ঘরে ফিরতে চায় মানুষ। ফলে এ ক্ষেত্রে সবারই থাকে সতর্ক দৃষ্টি। তারপরও ঘটে নানা দুর্ঘটনা। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিশেষ নজর রাখতে হবে। যাতে মানুষ নির্বিঘেœ ঘরে ফিরতে পারে, আবার কর্মস্থলে ফিরে আসতে পারে। প্রতিটি সড়ক-মহাসড়কে বর্ষার বৃষ্টিতে সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য খানাখন্দ। যান চলাচলের জন্য এগুলো অত্যন্ত বিপজ্জনক। সে ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ এগুলো সংস্কারের উদ্যোগ নেবে, পাশাপাশি দুর্ঘটনা প্রতিরোধে বিভিন্ন যানবাহনের চালকদেরও সতর্ক থাকতে হবে। অন্যদিকে ট্রেনের টিকিট কেউ পেয়েছে তো কেউ পায়নি। দীর্ঘ অপেক্ষার পরও খালি হাতে ফিরে গেছে অসংখ্য মানুষ। আবার জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের লাখ লাখ যাত্রীকে নৌপথে ঘরে ফিরতে হয়। আমরা আশা করছি, কোনো ধরনের দুর্ঘটনা যেন মানুষের আনন্দকে মøান করে না দেয়। সবার জন্য ঈদুল আজহা আনন্দপূর্ণ হয়ে উঠবে। পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে প্রতিদিনের সংবাদের সব পাঠক, লেখক, সংবাদদাতা, বিজ্ঞাপনদাতা, এজেন্ট, হকার, শুভানুধ্যায়ীসহ দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক।
"