নন্দ থেকে নন্দলাল
সাড়ে তিন বছরের সড়কচিত্র দেখে নন্দ’র বাবা বললেন, ‘বাবা তুই নন্দলাল হয়ে যা’। ছেলে বলল কেন? বাবা বললেন, তোকে না রাষ্ট্র, না আমি নিরাপত্তা দিতে পারছি। তাই এর চেয়ে ভালো সমাধান আর খুঁজে পাচ্ছি না। ছেলে বলল, নন্দলাল হলেই নিরাপত্তা আসবে, এর গ্যারান্টি কোথায়! বাবা বললেন, আছে। নন্দলাল গাড়িচাপা পড়ার ভয়ে পণ করেছিল সে আর বাইরে বের হবে না। রাস্তায় নামবে না। তখন কোনো গাড়িও আর তাকে চাপা দিতে পারবে না। তার নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। আমিও তোর নিরাপত্তাকে নিশ্চিত করতে চাইÑতাই এ প্রেসক্রিপশন।
কিন্তু নন্দ তার বাবার কথা রাখেনি। সে এখন রাজপথে। কেন না ইতোমধ্যেই সে জেনে গেছে গত সাড়ে তিন বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে ২৫ হাজার মানুষ। যে মৃত্যুকে স্বাভাবিক বলে মেনে নেওয়া যায় না। মেনে নিচ্ছে না কেউই। এমনকি মানতে পারেনি আমাদের কোমলমতি শিশুসন্তানরাও। সে কারণেই তারা আজ রাজপথে। প্রতিবাদে-প্রতিরোধে। তাদের দাবি, নিরাপদ সড়ক চাই। চাই জাস্টিস। সড়ক দুর্ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষে জড়িতদের বিচার হতে হবে। তাদের এ দাবিকে উপেক্ষা করতে পারেনি কেউ। সরকারি দলের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে, আমাদের কোমলমতি সন্তানদের দাবি শতভাগ যৌক্তিক এবং তাদের দাবি-দাওয়ার সঙ্গে আমরাও একমত। ঘোষণা করা হয়েছে, ‘পর্যায়ক্রমে তোমাদের দাবি-দাওয়া বাস্তবায়ন করা হবে।’
বাস্তবায়ন কবে হবে জানা না থাকলেও আমরা জেনেছি এবং জানছি, গড়ে প্রতিদিন বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাচ্ছে ২০ জন সাধারণ মানুষ। আর গত সাড়ে তিন বছরে সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে ২৫ হাজার ১২০ জন। একই সময় আহতের সংখ্যা ৬২ হাজার ৪৮২। এসব দুর্ঘটনার পেছনের কারণ চালকের বেপরোয়া মনোভাব ও অতিরিক্ত গতি। এসব সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতদের বেশির ভাগই শিশু, তরুণ ও কর্মক্ষম ব্যক্তি। বিশ্লেষকদের মতে, সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে সব সরকারই সব সময় উদাসীন থেকেছে। এরা সড়ক দুর্ঘটনা ও যানজটকে তেমন কোনো সমস্যা বলেই মনে করেনি। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর মানসিকতা ও দক্ষ জনবলের ক্ষেত্রে ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। কেবল আইন পাস করলেই সমস্যার সমাধান হবে না। পুরো প্রক্রিয়ার খোলনলচে পাল্টে ফেলতে হবে।
এটি একটি ক্রনিক ডিজিজ। সহজেই এর সমাধান সম্ভব নয়। বাহ্যিকভাবে সমাধানকে যতটা সহজ ভাবা হচ্ছে, ততটা সহজ নয়। তবে এ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়াটাও অসম্ভব নয়। অসম্ভব না হলেও সার্জারিটা বেশ জটিল। এর জন্য চাই সৎ ও দক্ষ রাজনৈতিক শৈল চিকিৎসক এবং একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। আমরা মনে করি, আমাদের সে রকম একজন দক্ষ এবং সৎ শৈল চিকিৎসক আছেন। যিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধ এবং রাষ্ট্রের প্রধান নির্বাহী। আমরা তার রাজনৈতিক সেই সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় থাকলাম।
"