মোতাহার হোসেন

  ০২ আগস্ট, ২০১৮

মতামত

প্রযুক্তির জয়যাত্রার আলোকবর্তিকা

চারদিকে যুদ্ধের দামামা বাজছে। পাকিস্তানি শত্রুপক্ষ তথা সেনাবাহিনী রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে নির্বিচারে নিরস্ত্র, নিরীহ মানুষকে হত্যার মহোসৎসবে লিপ্ত। এমনি এক ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ সময়ে তথা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ২৭ জুলাই জন্ম নেন সজীব ওয়াজেদ জয়। তার বাবা ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া, একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতনামা পরমাণুবিজ্ঞানী এবং মা শেখ হাসিনা বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি। ১৯৭৫ সালে নানা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর জয় মায়ের সঙ্গে জার্মানি-লন্ডন হয়ে ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় নেন। ফলে তার শৈশব এবং কৈশোর কেটেছে ভারতেসহ বিদেশবিভুঁইয়ে। ভারতে নৈনিতালের সেন্ট জোসেফ কলেজ থেকে স্নাতক করার পর যুক্তরাষ্ট্রের দ্য ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস অ্যাট আর্লিংটন থেকে কম্পিউটার বিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লোক-প্রশাসন বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি। বর্তমানে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ায় বসবাস করছেন। এর আগে ২০০৮ সালের নির্বাচনে দলের নির্বাচনী মেনিফেস্টো ‘ভিশন-২০২১’ তথা ‘রূপকল্প-২০২১’ প্রণয়নে তার ব্যাপক ভূমিকা ছিল। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মেধাকে কাজে লাগাতে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে শিক্ষায়, প্রশাসনে তথ্যপ্রযুক্তির প্রয়োগে বিশ্বে যে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপিত হলো, তার পুরো কৃতিত্বই বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র বিশ্বের উদীয়মান প্রযুক্তিবিদ সজীব ওয়াজেদ জয়ের। একই সঙ্গে তিনি প্রধানমন্ত্রীর তথ্য, যোগাযোগ ও প্রযুক্তিবিষয়ক অবৈতনিক উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করছেন। ২০১০ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি জয়কে পিতৃভূমি রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্যপদ দেওয়া হয়। ২০০৭ সালের ইয়ং গ্লোবাল লিডার হিসেবে নির্বাচিত হন তিনি।

মূলত, বাংলাদেশ আইসিটি সেক্টরে যে অর্জন, যে প্রসার, যে বিকাশ তার শতভাগ কৃতিত্বই সজীব ওয়াজেদ জয়ের। এক কথায় জয়ের হাত ধরেই বাংলাদেশে প্রযুক্তির ব্যবহারে ঈর্ষণীয় সফলতা আসবে, এর সুফল ভোগ করবে দেশের মানুষ। আর্থিকভাবে আরো গতিশীল হবে দেশের অর্থনীতি, সম্ভাবনাময় যুবসমাজের কর্মসংস্থান হবে। একই সঙ্গে প্রযুক্তির বিশ্বে আলোকিত, উদ্ভাসিত হবে বাংলাদেশ। এটি বলা বেশি বা অপ্রাসঙ্গিক হবে না, যখন দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যক্তিস্বার্থ, গোষ্ঠীস্বার্থ ও পারিবারিক স্বার্থের বেড়াজালে আবিষ্ট মানুষ, নিজেদের লাভক্ষতির হিসাব মেলাতে ব্যস্ত। ঠিক তেমনি, এর উল্টো চিত্র আছে। এমনি ধরনের দেশের একটি ঐহিত্যবাহী সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবার সব ধরনের জাগতিক স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে কেবল দেশের-মানুষের স্বার্থ, কল্যাণ, শান্তি, উন্নয়ন, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধিকে বড় করে দেখেন, দেশ সেবার মহান সাধনায় নিয়োজিত রয়েছেন বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়সহ তাদের পরিবার। দেশের মানুষের মুক্তির মহান ব্রত নিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার মেয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ ‘বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল’। একই সঙ্গে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত, নিরক্ষরমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণে নিরন্তর কাজ করছেন শেখ হাসিনা ও তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়। যে মানুষ নিজের আত্মার মধ্যে অন্যের আত্মাকে ও অন্যের আত্মার মধ্যে নিজের আত্মাকে অনুভব করেন, তিনিই প্রকৃত মানুষ, তিনি সত্যকে জানেন। এ বিবেচনায় বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যরা দেশের ১৬ কোটি মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায় স্থান করে নিয়েছেন। এ অবস্থানে তাদের কেউ দয়া বা করুণা করে স্থান দেননি, স্থান করে নিয়েছেন। অর্থাৎ সত্যের কোনো বিকল্প নেই। সত্যকে আশ্রয় করেই মানুষকে চলতে হয়। সত্যকে এড়িয়ে অসত্যকে আশ্রয় করে যেসব দল বা ব্যক্তির পথচলা, তাদের যাত্রাপথে একদিন বিরতি পড়বেই। কিন্তু লক্ষ্য যার স্থির, অন্তরে যার দেশমাতৃকাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্রত, তিনি যেকোনো বাধাকেই তুচ্ছ জ্ঞান করে এগিয়ে যেতে পারেন। এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যরা। যেমন সব বাধা তুচ্ছ জ্ঞান করে এগিয়ে গিয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তেমনি করে ‘পায়ে পায়ে পাথর’ সরিয়ে, ‘সব কাঁটা ধন্য করে’ এগিয়ে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।

আমরা জানি, ইসক্রা থেকে যেমন জ্বলে ওঠে মশাল, যেমনি আজকের দিনের তারুণ্যই আগামী দিনের নেতৃত্বের পথটি দেখিয়ে দিতে পারেন। সজীব ওয়াজেদ জয় এরই প্রকৃষ্ট উদাহরণ। আজকের ডিজিটাল বাংলাদেশ তো তারই স্বপ্ন। ফোর জি ছাড়িয়ে দেশ যে ফাইভজিতে পা রাখতে যাচ্ছে, তার রূপকার তো তিনিই। প্রধানমন্ত্রীর তথ্য, যোগাযোগপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে দেশকে এ খাতে এগিয়ে নেওয়ার স্বপ্ন তার। তিনি দেশের বর্তমান তারুণ্যের রোল মডেল। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির উত্তরাধিকার সূত্রেই এখন রাজনীতির মঞ্চেও তিনি সক্রিয়। এ নিয়ে নিন্দুকদের সমালোচনারও অন্ত নেই। যদিও ভারতীয় উপমহাদেশে রাজনৈতিক উত্তরাধিকার টেনে নিয়ে যাওয়ার ঐতিহ্য রয়েছে। ভারতের রাজনীতির পারিবারিক ধারা পর্যালোচনায় দেখা যায়, ভারতের জওহরলাল নেহরুর মেয়ে ইন্দিরা গান্ধী তার বাবার যোগ্য উত্তরসূরি ছিলেন। জুলফিকার আলী ভুট্টোর মেয়ে বেনজীর ভুট্টো, বেনজীরের স্বামী ও ছেলের রাজনীতিতে সম্পৃক্ততা সম্পর্কে সবাই জ্ঞাত। শ্রীলঙ্কার বন্দরনায়েক পরিবারের রাজনৈতিক পরিচয়ও লক্ষণীয়। ইন্দোনেশিয়ার রাজনীতিতে সুকর্ণ পরিবারের অবদানও তো কম নয়। ঠিক একইভাবে আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতারা ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনাকেই রাজনীতিতে নিয়ে এসেছিলেন। এরই ধারবাহিকতায় বাংলাদেশের রাজনীতিতে সজীব ওয়াজেদ জয়ের অভিষেক। বিভিন্ন সভা-সমাবেশে তার প্রাণময় উপস্থিতি যে কর্মীদের উজ্জীবিত করে, প্রত্যাশা জাগিয়ে তোলে তরুণদের মধ্যে। যেকোনো অনুষ্ঠানেই তিনি সপ্রতিভ, হার্দিক। তার নানা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মা শেখ হাসিনার মতো হৃদ্যতায়, আন্তরিকতায় সাধারণ মানুষকে কাছে টানার অসাধারণ ক্ষমতা রয়েছে সজীব ওয়াজেদ জয়ের।

এটি সত্য, রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হিসেবে জয় রাজনীতিতে আসবেনÑএটাই স্বাভাবিক। রাজনৈতিক কর্মকা-ে যোগদান এই ইঙ্গিত দিচ্ছে যে রাজনীতিতে তার আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। একটু অতীতের দিকে দৃষ্টি দিলে আমরা দেখি সজীব ওয়াজেদ জয় ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হয়ে কিছু কিছু প্রচারে অংশ নিয়েছিলেন। তার সহজ সরল অথচ বস্তুনিষ্ঠ, তথ্যনিষ্ঠ বক্তব্য দেশের মানুষকে আকৃষ্ট করেছে। ২০০৯ সালে রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য পদও গ্রহণ করেন। সজীব ওয়াজেদ জয় তার মেধা, অভিজ্ঞতা, দক্ষতা, আন্তরিকতা ও সততা দিয়ে যে বাংলাদেশের রাজনীতিতে অনিবার্য হয়ে উঠবেন, প্রত্যাশা করছি। এটা প্রমাণিত সত্য এবং ইতিহাস সিদ্ধ যে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে গণতান্ত্রিক ধারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত। রাজনীতির এ ধারা আগামীতে সমানভাবে অনিবার্য, প্রাসঙ্গিক থাকবে। বঙ্গবন্ধুর তৃতীয় প্রজন্মের প্রতিনিধি সজীব ওয়াজেদ জয়ের নেতৃত্বের প্রতি কেন্দ্রীভূত দেশের সিংহভাগ মানুষের দৃষ্টিও। বিপুল পরিমাণ উৎসাহ, আগ্রহ-আকর্ষণের কেন্দ্রেও আছেন তিনি। উচ্চশিক্ষিত এই তরুণ নেতা এবং ‘ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা’ই দেশের ও দলের ভবিষ্যতে যে কোনো দায়িত্ব কাঁধে নেওয়ার পাঠ নিচ্ছেন। তা বলার অপেক্ষা রাখে না, ভবিষ্যতে তিনি তার কর্মদক্ষতা দিয়ে দেশের তথ্যপ্রযুক্তির ভা-ারকে সমৃদ্ধ করার মধ্য দিয়ে সম্ভাবনাময় তরুণ-যুবসমাজের কর্মসংস্থান সৃষ্টির সুযোগ করে দেবেন। একই সঙ্গে দেশে গণতান্ত্রিক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারায় রাজনীতি পরিচালনা করবেন। যাতে দেশ আলোকিত হবে ও মানুষ উপকৃত হবে। দেশের সেবায় বঙ্গবন্ধু পরিবারের সুযোগ্য উত্তরাধিকার হিসেবে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের মশাল তিনি বহন করবেন অনাগত দিনে, সেই প্রত্যাশা থাকল।

লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist