সাঈদ চৌধুরী

  ২৩ জুলাই, ২০১৮

মতামত

দায়বদ্ধতার জায়গা বাড়াতে হবে

সামাজিক সভ্যতার ক্রমবর্ধমান বিকাশের পর থেকে মানুষ অস্থির হতে শুরু করেছে। যখনই বেশি পরিমাণে তুলনার জায়গা তৈরি হচ্ছে, তখনই আরো ভালো খুঁজতে মন ব্যাকুল! এই ভালো খোঁজার তাড়না মানুষকে এমন করে তুলছে যে, মানুষ খুব সহজেই প্রতিটি বৈশিষ্ট্যের জন্য আলাদা আলাদা তার মনের মতো অবস্থাকে কামনা করে। অস্থিরতার শুরু মূলত এখানেই। সংসারে বর্তমানে অশান্তির যে জায়গাগুলো তৈরি হচ্ছে, তার বড় একটি অংশ তুলনা করা থেকেই শুরু হচ্ছে। তুলনার জায়গা বাড়ার পেছনে যে বিষয়গুলোকে দায়ী করা হবে, তার চেয়ে বড় দায়ীর জায়গা হলো নিজেদের বিবেচনা কমে যাওয়া, একসঙ্গে থাকার চরম আকুতি থেকে বিচ্যুতি ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ কমে যাওয়া। অনেক মানুষের সঙ্গে সংসার নিয়ে কথা বলে জানা গেছে, মন খারাপের শুরু খুব সামান্য কারণ দিয়ে হলেও ফলাফল যে খুব ভয়াবহ, তা বর্তমানে আদালতের দিকে তাকালেই বোঝা যায়।

মামলাগুলোর ক্ষেত্রে পরকীয়ার ব্যাপারটি যেমন উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে অসন্তুষ্টির জায়গা থেকে বিচ্ছেদ। গাজীপুর জজ কোর্টের বিজ্ঞ আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি বলছিলেন, কেস স্টাডি করে সর্বশেষে এমনও দেখা গেছে ঘরে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রথম মন খারাপের শুরু হয়েছে দুজন দুজনকে তুমি বলার অধিকার নিয়ে!

যে শব্দটি ভালোবাসায় আবৃত, সেই শব্দটি হলো ‘তুমি’। অনেক সময় ‘তুমি’ শব্দটি শুরু হওয়ার পর থেকেই বেশি আপন করে পাওয়ার বিষয় মনে হয় পারিবারিক এই সম্পর্কটিতে। আর সেখানে তুমি বলাকে কেন্দ্র করে যদি সংসার বিচ্ছেদের পথে যায়, তবে তুলনার জায়গাটা কোন জায়গায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে! কিছুদিন ধরে দুই সন্তানসহ স্বামী এবং স্ত্রীর বিচ্ছেদের ঘটনাটি খুব আলোড়ন সৃষ্টি করে। সেদিন দেখলাম বিজ্ঞ আইনজীবী বলছেন, তাদের মধ্যে সম্পর্ক আবার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য আদালত যেভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন, সেভাবে তাদের সম্পর্কের বরফও গলতে শুরু করেছে। কিন্তু আদৌ কি তারা আগের মতো করে সংসার শুরু করতে পারবেন? তারা যে কারণে বিচ্ছেদে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, দুটো বাচ্চা থাকার পরও তা থেকে কি তারা বের হয়ে আসতে পারবেন? অনেকগুলো প্রশ্নের মধ্যে আরেকটি বড় প্রশ্ন হলো আদালতের অনুরোধে যদি সম্পর্কই টিকিয়ে রাখতে হবে, সেখানে নিজেদের আস্থারইবা কতটুকু প্রয়োজন? গত কয়েক বছরে তথ্যপ্রযুক্তির বিস্তারের ফলে কিছু অজ্ঞ মানুষ এই তথ্যপ্রযুক্তিকে তাদের নিজেদের ধ্বংসের কারণ হিসেবে ব্যবহার করছে। বেশি সময় ধরে অন্য মানুষকে বিবেচনায় আনতে গিয়ে নিজের ঘরের মানুষটিই কখন যে নিজের কাছে থেকে দূরে সরে যাচ্ছে, তার কোনো যেন তোয়াক্কাই নেই।

কথা হচ্ছিল পঞ্চাষোর্ধ্ব একজন মানুষের সঙ্গে। তার স্ত্রীর কাছে নাকি তিনি মূল্যহীন। আমি বললাম কেন আপনি নিজেকে তার কাছে মূল্যহীন ভাবছেন। তিনি বললেন, তার স্ত্রী তাকে আর আগের মতো মূল্যায়ন করে না। আমি বললাম, উদাহরণ দেন তো। তিনি যে কটা কথা বলেছিলেন তাতে ¯পষ্ট ছিল, এ বিষয়গুলো নিশ্চয়ই তিনি অন্যজনের দেখিয়ে দেওয়া কোনো বিষয় থেকে অবলোকন করেছেন। বাইশ বছরের সংসার জীবনের ইতি টেনে ফেলতে পারেন এই পঞ্চাষোর্ধ্ব মানুষটি যেকোনো সময় আর তার জন্যও দায়ী তুলনা করা। বারবার তুলনা করলে যাকে আপনি তুলনা করছেন, তিনি একসময় আপনার ওপর থেকে আস্থা হারাবেন, এটাই স্বাভাবিক। এই আস্থা হারানো থেকেই একসময় শঙ্কা তারপর সন্দেহ একসময় সংসারে ভাঙন। কী করলে এ থেকে পরিত্রাণ পাব? এই প্রশ্নের সহজ উত্তর জানা না থাকলেও একটা কথা স্পষ্টই বলা যায়, তা হলো এক মানুষের ওপর বিশ্বাস স্থাপন, সংসারে সময় দেওয়া, ভুল থাকলে তা ধরিয়ে দিয়ে সহমর্মিতার ভিত্তিতে একসঙ্গে থাকা ও আইনকে শ্রদ্ধা দেখিয়ে পরস্পরের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করা হতে পারে সমাধান। পরিবার প্রথাকে সঠিকভাবে প্রবাহমান রাখতে গেলে প্রত্যেকটি পরিবারকে আস্থাশীলভাবেই পরিবারপ্রথার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। সচেতনতার বিষয়ে আনতে হবে আইনের বাধ্যবাধকতা ও ধর্মীয় বাধ্যবাধকতা। আইনের বাধ্যবাধকতার মধ্যে সন্তান থাকলে সেপারেশনের ব্যাপারে যে নির্দেশনাগুলো রয়েছে, তার কিছু পরিবর্তন বা পরিবর্ধন করা যায় কি না, তাও চিন্তায় আসতে পারে। আইনের প্রতি শ্রদ্ধা থাকলে ও নিজেদের প্রতি বিশ্বাস সঠিকভাবে স্থাপন করতে পারলেই পারিবারিক প্রথার সবচেয়ে বড় বন্ধন অটুট রাখা সম্ভব হবে এবং এটা এখন একটা বড় চ্যালেঞ্জও বর্তমানে। আসুন নিজেদের ভুলত্রুটিগুলোকে সুধরে নিয়ে আইনকে শ্রদ্ধার জায়গায় রেখে পরিবার প্রথাকে বাঁচিয়ে রেখে সমাজের খুঁটি নির্দেশক পরিবারকে সবাই মিলে বাঁচানোর চেষ্টা করি।

লেখক : সদস্য, উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি

ও রসায়নবিদ, শ্রীপুর, গাজীপুর

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist