ইফতেখার আহমেদ টিপু

  ২২ জুলাই, ২০১৮

বিশ্লেষণ

আবাসিকে আগ্রাসন

বাণিজ্যিক আগ্রাসনে রাজধানীর আবাসিক এলাকাগুলো বৈশিষ্ট্য হারাচ্ছে। পরিকল্পিত নগরী গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল যে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ তথা রাজউক, তাদের নাকের ডগায় এই অবাঞ্ছিত রূপান্তর ঘটছে জোরেশোরে। রাজউক কর্তারা এ বিষয়ে কুম্ভকর্ণের ঘুমে রত। তাদের মোনাফিকি ভূমিকায় গুলশান, বনানী, ধানমন্ডি, লালমাটিয়া, উত্তরার মতো আবাসিক এলাকা বাণিজ্যিক এলাকায় পরিণত হয়েছে। বাণিজ্যিক বলে পরিচিত রাজধানীর যেসব এলাকা, তার সঙ্গে রাজউকের কথিত আবাসিক এলাকার কোনো পার্থক্যই নেই। এসব দেখভাল করার জন্য জনগণের ট্যাক্সের টাকায় যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে পোষা হয়, তাদের আনুগত্য আইন ভঙ্গকারীদের দিকে। সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে প্রাপ্ত উপার্জনকে তারা এতই গুরুত্ব দেন, নিজেদের দায়িত্ব পালনের বিষয়টি অনায়াসেই ভুলে যান।

নগরবিদদের মতে, রাজধানীর আবাসিক এলাকাকে বাণিজ্যিক এলাকায় পরিণত করার ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে ধানমন্ডি থেকে। দেড় দশক আগে ধানমন্ডিতে চারতলার ওপরে কোনো বাড়ি ছিল না। এখন ইচ্ছামতো উচ্চতায় দালানকোঠা তৈরি হচ্ছে। ভাড়া দেওয়া হচ্ছে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে। ধানমন্ডি থেকেই এই বাণিজ্যিকীকরণের ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে অন্যত্র। পরে গুলশান-বনানী-বারিধারায় এ ভাইরাস সর্বগ্রাসী আকার ধারণ করেছে। গুলশান-বনানী এলাকার নকশায় বাণিজ্যিক প্রয়োজনের জন্য আলাদাভাবে নকশা করা থাকলেও রাজউক পুরো বিষয়টি গোপন করে গুলশানের একটি সড়ককে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে। ধীরে ধীরে ঘিঞ্জিতে পরিণত হতে চলেছে পরিকল্পিত নকশায় গড়ে ওঠা আবাসিক এলাকা গুলশান-বনানী।

একে একে আবাসিক এলাকাগুলো তার চরিত্র হারিয়ে ফেলছে। যেখানে-সেখানে, হোটেল-রেস্টুরেন্ট ও অফিস স্থাপনের অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে। অভিন্ন অবস্থা বিরাজ করছে লালমাটিয়া, উত্তরাসহ অন্যান্য আবাসিক এলাকায়। এসব এলাকার শত শত বাসাবাড়িতে গড়ে উঠেছে অবৈধ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে কয়েকটি ব্র্যান্ড কোম্পানির প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। আছে ডিপার্টমেন্ট স্টোর, বিলাসবহুল পণ্যের দোকান। রাজধানীর আবাসিক এলাকার বাণিজ্যিক রূপান্তর সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দাদের জীবনে ভোগান্তি সৃষ্টি করছে। কোনো সভ্যসমাজে এ ধরনের নৈরাজ্য অকল্পনীয় হলেও বিষয়টির দেখভাল করার দায়িত্ব যাদের, সেই রাজউকের একটি অশুভ চক্রের কারণে আবাসিক এলাকার বাসিন্দাদের নিয়তির লিখনে পরিণত হয়েছে। এ বিষয়ে সরকারের সুদৃষ্টিই নাগরিকদের জন্য শেষ ভরসা।

রাজধানী ঢাকার কোন এলাকা আবাসিক, কোনটি বাণিজ্যিক, তা নির্ণয় করতে হলে নথিপত্র দেখতে হবে। কারণ, বাস্তবে আবাসিক-বাণিজ্যিক সব একাকার হয়ে গেছে। এর ফলে নগরবাসীর জীবনযাপনে নানা ধরনের সমস্যা হয়, যেগুলো থেকে পরিত্রাণের আশা দুরাশা বলে মনে হয়।

এই অবস্থায় ধানমন্ডি, গুলশান, বনানী, উত্তরা ও বারিধারা আবাসিক এলাকার সব অবৈধ ও বাণিজ্যিক স্থাপনা উচ্ছেদ করার যে উদ্যোগ গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় নিয়েছে, তা নতুন আশার সঞ্চার করে।

তবে কাজটা খুব সহজ হবে না। এ জন্য দৃঢ়সংকল্পের পাশাপাশি কার্যকর তৎপরতা ধারাবাহিকভাবে চালিয়ে যাওয়া প্রয়োজন। প্রথমেই প্রয়োজন উচ্ছেদ অভিযান সুসম্পন্ন করার সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা এবং কী প্রক্রিয়ায় সে পরিকল্পনা কতটা সময়ের মধ্যে সম্পূর্ণ করা হবে, তার সুস্পষ্ট রূপরেখা। আবাসিক এলাকাগুলোয় বাণিজ্যিক ও অন্যান্য অবৈধ স্থাপনা যেমন রাতারাতি গড়ে ওঠেনি, তেমনই এগুলো রাতারাতি উচ্ছেদ করাও সম্ভব হবে না। বিশেষভাবে লক্ষ রাখতে হবে আইনি প্রক্রিয়ার দিকে : কোনো অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের ক্ষেত্রে তার মালিক আদালতে মামলা করলে এবং আদালত স্থগিতাদেশ দিলে যে দীর্ঘসূত্রতার সৃষ্টি হতে পারে, তা কীভাবে কাটানো হবে। কারণ, কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করে যারা বাণিজ্যিক স্থাপনা গড়েছেন, তারা উচ্ছেদ এড়ানোর সর্বাত্মক চেষ্টা করবেন। এ রকম মামলার সংখ্যা অনেক হবে, তা সহজেই বোধগম্য।

তবু সব জটিলতা দূর করে উদ্যোগটি বাস্তবায়ন করা অত্যন্ত জরুরি। সরকারি প্রশাসন, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন ও রাজউককে সঙ্গে নিয়ে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সুসমন্বিতভাবে এই জনমুখী উদ্যোগ বাস্তবায়নে তৎপর হোক।

লেখক : চেয়ারম্যান ইফাদ গ্রুপ

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist