আবু আফজাল মোহা. সালেহ
মতামত
ই-পাসপোর্ট যুগে বাংলাদেশ
১৯ জুলাই বহুল প্রতীক্ষিত ই-পাসপোর্ট যুগে বাংলাদেশের প্রবেশ। বাংলাদেশ সরকার ও জার্মান সরকার জিটুজি চুক্তির আওতায় ১১৯তম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ঢুকে যাবে। তবে চলতি বছরের ডিসেম্বর মাস থেকে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির এ পাসপোর্ট বই হাতে পাবেন, যা সংক্ষেপে ই-পাসপোর্ট নামে পরিচিত। যার পূর্ণরূপ হচ্ছে ইলেকট্রনিক পাসপোর্ট (ই-পাসপোর্ট)। এ বইয়ে থাকবে একটা চিপস। যাতে পাসপোর্টধারীর সব তথ্য জমা থাকবে। এতে তিন ধরনের ছবিসহ পাসপোর্টধারীর দশ আঙুলের ছাপ, চোখের মণির ছবি ৪২টি নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য। এতে থাকা পলি কার্বনেটেড ডেটা, যা জাল করা সম্ভব হবে না। ২০০৮ সাল থেকেই যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড, কানাডাসহ ১১৮টি দেশে ই-পাসপোর্ট চালু করেছে।
বাংলাদেশও এখন গৌরবোজ্জ্বল এ যুগে প্রবেশ করল। বিশ্বের অনেক দেশে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) সাপোর্ট করে না। ফলে সংশ্লিষ্ট দেশের ইমিগ্রেশনে বাংলাদেশি নাগরিকদের
হয়রানির শিকার হতে হয়। বহির্বিশ্বের সঙ্গে তাল রাখা, আমাদের পাসপোর্টের নিরাপত্তা বাড়ানো ও সময়োপযোগী করা, ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে বাংলাদেশ ও আগত বিদেশি নাগরিকদের যাওয়া-আসা সহজ ও সুষ্ঠু করার জন্য এ এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত সরকারের। ই-গেট (ইলেকট্রিক প্রবেশপথ) দিয়ে ইমিগ্রেশন চেক হলে পাসপোর্টধারীর সময় ও হয়রানি কম হবে। ই-গেট ব্যবহার করে লাইনে না দাঁড়িয়েই ইমিগ্রেশন শেষ করা সম্ভব হবে ই-পাসপোর্টধারীদের। পত্রিকা মারফত জানা যায়, জার্মান সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের জিটুজি (সরকার টু সরকার) চুক্তির মাধ্যমে প্রকল্পের মাধ্যমে এ কাজ সম্পাদিত হচ্ছে। ই-পাসপোর্টের বাহক কোনো দেশের দূতাবাসে ভিসার আবেদন করলে কর্তৃপক্ষ স্বয়ংক্রিয়ভাবে আবেদনকারীর তথ্যের সঙ্গে ‘পাবলিক কি ডাইরেক্টরি (পিকেডি)’তে সংরক্ষিত তথ্য যাচাই করে নেবে এবং আবেদন গ্রহণ করে ভিসা সিল লাগিয়ে দেবে বা জাল হলে বা সন্দেহ হলে বাতিল সিল দেবে। স্থল ও বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ একই পদ্ধতি ব্যবহার করবে। মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের (এমআরপি) পাশাপাশি ইলেকট্রনিক পাসপোর্ট (ই-পাসপোর্ট) চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বয়সভেদে পাঁচ ও দশ বছর মেয়াদি পাসপোর্ট দেওয়া হবে।
ই-পাসপোর্টে সব তথ্য কেন্দ্রীয়ভাবে সংরক্ষিত থাকবে একটা ইলেকট্রনিক চিপস, যা পলি কার্বনেটেড ডেটা পেজ। এটাকে বলা হচ্ছে ‘পাবলিক কি ডাইরেক্টরি (পিকেডি)’। আন্তর্জাতিক এই তথ্যভা-ার পরিচালনা করবে ‘ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশন’ সংক্ষেপে (আইসিএও)। ইন্টারপোলসহ বিশ্বের সব বিমানবন্দর ও স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ এ তথ্যভা-ারে ঢুকে তথ্য যাচাই করতে পারবে। ই-গেট ব্যবহার ও স্বয়ংক্রিয়ভাবে চেকের জন্য বন্দরে সময় কম লাগবে। অবৈধ অনুপ্রবেশ রুখতে সহজ হবে। এমআরপি (মেশিন রিডেবল পাসপোর্টে) জলছাপার মাধ্যমে লুকায়িত তথ্য নির্দিষ্ট মেশিন ছাড়া সম্ভব হয় না। জার্মনির প্রযুক্তি নিয়ে জিটুজির মাধ্যমে বাংলাদেশে ই-পাসপোর্ট করা হবে। ই-পাসপোর্ট শুরু হলে সেবার মান আরো বাড়বে। এতে জালিয়াতি রোধ করা সম্ভব হবে। এর জন্য উড়োজাহাজ, স্থল ও নৌবন্দরে ই-গেট স্থাপন করা হবে। ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট পেরিয়ে যাওয়া ই-পাসপোর্টধারী ব্যক্তি লাইনে না দাঁড়িয়েই স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইমিগ্রেশন শেষ করতে পারবেন। এতে সময় ও ভোগান্তি কমবে। নিরাপত্তার স্বার্থে এ যুগান্তকারী সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাতেই হয়। যদিও আমরা একটু দেরি করে ফেলেছি।
লেখক : প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট
"