দিলীপ কুমার আগরওয়ালা

  ১৯ জুলাই, ২০১৮

বিশ্বকাপ ফুটবল

ফ্রান্সকে অভিনন্দন

১৯৩০ সালে ১৩টি দল নিয়ে শুরু হওয়া বিশ্বকাপ ফুটবল প্রতিযোগিতার ২১তম আসর বসেছিল রাশিয়ায়। গত মাসের ১৪ তারিখে শুরু হওয়া আসরের পর্দা নেমেছে ১৫ জুলাই রাতে মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামে। নানা কারণে এবারের বিশ্বকাপ স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ফুটবলে চারবারের বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন ইতালি এবার বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি। বাদ পড়েছে তিনবারের ফাইনালিস্ট নেদারল্যান্ডস। আফ্রিকার ঝড় তোলা দেশ ক্যামেরুন ছিল না। বাদ পড়ে ২০১৫ ও ২০১৬ সালের কোপা আমেরিকা জেতা দল চিলিও। আফ্রিকার আরেক দেশ আইভরি কোস্ট ছিল না রাশিয়া বিশ্বকাপে। খেলার যোগ্যতা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে ঘানা ও চীন। রাশিয়া বিশ্বকাপের ঢেউ এসে লেগেছিল বাংলাদেশেও।

আমাদের দেশে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার সমর্থকই বেশি। দুই দেশের পতাকার রঙে বাড়ি রং করা হয়েছে। কয়েক কিলোমিটার দীর্ঘ পতাকা তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু ভক্তদের হতাশ করেছে উভয় দেশই। নিজেদের তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছেন মেসি-নেইমার। প্রথম রাউন্ডেই বিদায় নিয়েছে গতবারের চ্যাম্পিয়ন জার্মানি। চেনা তারকাদের অনেকেই জ্বলে উঠতে ব্যর্থ হলেও অনেক নতুন তারকা খুঁজে পেয়েছে ফুটবল বিশ্ব। রাশিয়া বিশ্বকাপে উদীয়মান সেরা খেলোয়াড় হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন ফ্রান্সের কিলিয়ান এমবাপ্পে। তিনি হচ্ছেন বিশ্বে কম বয়সী খেলোয়াড়দের মধ্যে দ্বিতীয়, যিনি বিশ্বকাপের ফাইনালে গোল করেছেন। পুরো বিশ্বকাপে তার গতিময় ফুটবল সবার দৃষ্টি কেড়েছে। এবারের আসরে চারটি গোল করেছেন তিনি। তার সঙ্গে আলোচনায় ছিলেন একই দলের আন্তোনিও গ্রিজম্যান ও পল পগবা। সেরা খেলোয়াড় হিসেবে গোল্ডেন বল জিতেছেন ক্রোয়েশিয়ার লুকা মডরিচ। বেলজিয়ামের তারকা ফরোয়ার্ড এদেন আজার পেয়েছেন সিলভার বল, ফ্রান্সের আন্তোনিও গ্রিজম্যান পেয়েছেন ব্রোঞ্জ বল। সর্বোচ্চ গোলদাতা হিসেবে গোল্ডেন বুট জিতেছেন ইংল্যান্ডের ফরোয়ার্ড হ্যারি কেন। গ্রিজম্যান পেয়েছেন সিলভার বুট, ব্রোঞ্জ বুট পেয়েছেন বেলজিয়ামের লুকাকু।

শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এবারের বিশ্বকাপ ছিল নাটকীয়তা আর উত্তেজনায় ভরা। আমারও সুযোগ হয়েছে সেমিফাইনাল ও ফাইনাল মাঠের গ্যালারিতে বসে খেলা দেখার। আমি মনে করি, সব হিসাব-নিকাশ ওলটপালট করে দেওয়া এমন টুর্নামেন্ট নাকি নিকট অতীতে হয়নি। শুরুতেই বাদ পড়েছে জার্মানি। লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা শেষ ষোলোতে ফ্রান্সের কাছে হেরে বিদায় নেয়। কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিলকে বিদায় করে দেয় ইউরোপের নতুন ফুটবল শক্তি বেলজিয়াম। তারকাসমৃদ্ধ স্পেন রাশিয়ার কাছে হেরে বিদায় নেয়। এবার ফাইনালে গোল হয়েছে ছয়টি। বিশ্বকাপে মোট আত্মঘাতী গোল হয়েছে ১২টি। এর মধ্যে ফাইনালে একটি আত্মঘাতী গোল হয়েছে। গোলরক্ষকের অদ্ভুত ভুলে গোল হয়েছে। যথেষ্ট নিরাপত্তা কড়াকড়ি থাকার পরও মাঠে লোক ঢুকে পড়ার ঘটনা ঘটেছে। লুঝনিকি স্টেডিয়ামে রোববারের ফাইনালটি শুধু অল-ইউরোপিয়ান লড়াই ছিল না। ছিল অল নাইকি লড়াইও। স্পন্সর কোম্পানিগুলোর মধ্যে এবার বিশ্বকাপের ৩২ দলের মধ্যে ১২টির স্পন্সর ছিল অ্যাডিডাস, ১০টির স্পন্সর নাইকি। শেষ পর্যন্ত মাঠে ছিল নাইকি।

যোগ্য দল হিসেবেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ফ্রান্স। শক্ত রক্ষণভাগ, আক্রমণাত্মক মধ্যমাঠ ও ফরোয়ার্ডদের বোঝাপড়া দলকে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করতে সাহায্য করেছে। ফুটবলে দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বজয় করল ফ্রান্স। ফরাসি সৌরভে ভরে গেল রাশিয়ার লুঝনিকির সবুজ স্টেডিয়াম। বিশ্বকাপের ফুটবলে সমীহ জাগানো দল ক্রোয়েশিয়াকে তারা হারিয়েছে ৪-২ গোলে। হারলেও ক্রোয়েশিয়ার খেলা ফুটবলপ্রেমীদের মুগ্ধ করেছে। ফাইনালে জয়ী হওয়ার দৃঢ় মানসিকতা নিয়ে প্রতিপক্ষকে শক্তভাবে মোকাবিলা করেছে বলকান দেশটি। কিন্তু ভাগ্য সম্ভবত তাদের পক্ষে ছিল না। খেলার পরিসংখ্যানও তাই বলে! উত্তেজনায় ভরপুর ম্যাচের ১৭ মিনিটেই এগিয়ে যায় ফরাসি বীর নেপোলিয়ন বোনাপার্টের উত্তরসূরিরা। ডি-বক্সের অনেকটা বাইরে ফ্রান্সের গ্রিজম্যানকে ফাউল করলে ফ্রি-কিক দেন রেফারি।

গ্রিজম্যানের সে ফ্রি-কিক বিপন্মুক্ত করতে গিয়ে আত্মঘাতী গোল করে বসেন সেমিফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার জয়ের নায়ক মারিও মানসুকিচ। এই গোলও ক্রোয়াটদের মনোবল ভেঙে দিতে পারেনি। একের পর এক পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে তারা ১১ মিনিট পর পেরিসিচের গোলে সমতা ফিরিয়ে আনে। খেলার ৩৮ মিনিটে হ্যান্ডবলের পর পেলান্টি থেকে গোল খাওয়ায় ক্রোয়েশিয়ার ভাগ্য যে প্রসন্ন নয়, তা প্রমাণিত হয়। কর্নার কিক ক্লিয়ার করার সময় হ্যান্ডবল করেন পেরিসিচ। ফলে ক্রোয়াটরা পেনাল্টির শিকার হয়। এক আত্মঘাতী গোল ও এক পেনাল্টি ক্রোয়েশিয়ার ৪২ লাখ মানুষের স্বপ্ন কেড়ে নেয়। তারপরও ক্রোয়েশিয়া নিজেদের অপ্রতিরোধ্য হিসেবে প্রমাণ করে মাঠে। পাল্টা আক্রমণে ব্যতিব্যস্ত রাখে ফ্রান্সকে। ৫৯ মিনিটে পল পগবারের গোল ক্রোয়াটদের স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত করে। ৩-১ গোলে এগিয়ে যায় ফরাসিরা। ৬৫ মিনিটে ডি-বক্সের অনেকটা বাইরে থেকে গোল করেন বিশ্বকাপের সবচেয়ে তরুণ প্রতিভা এমবাপ্পে। ফরাসিরা এগিয়ে যায় ৪-১ গোলে। বিশ্বকাপ যে তাদের তা নিশ্চিত হয়ে যায়। এর ৪ মিনিট পর মাবিও মানজুকিচ ক্রোয়েশিয়ার পক্ষে গোল করে ব্যবধানটা ৪-২-এ কমিয়ে আনেন। লুঝনিকির সবুজ স্টেডিয়ামে এবারের বিশ্বকাপ ফুটবলের শিরোপা খেলার কথা অনেক দিনই দর্শকদের মনে থাকবে। দুই দলই খেলেছে আক্রমণাত্মক খেলা। বিশেষ করে আত্মঘাতী গোল ও পেনাল্টির অবাঞ্ছিত আঘাতে জর্জরিত হওয়ার পরও ক্রোয়েশিয়া যে আক্রমণাত্মক খেলা খেলেছে, তা তাদের মর্যাদাকে উঁচু করেছে। বিশ্ব ফুটবলের নতুন রাজা ফ্রান্সকে আমাদের অভিনন্দন। হার না মানা মনোভাবের জন্য অভিনন্দন ক্রোয়াট ফুটবলারদের। সুন্দর আয়োজনের জন্য অভিনন্দন জার-লেনিন আর নব্যজার পুতিনের দেশ রাশিয়াকে।

লেখক : ব্যবস্থাপনা পরিচালক

ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড লিমিটেড

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist