ইফতেখার আহমেদ টিপু

  ১৭ জুলাই, ২০১৮

বিশ্লেষণ

মাদকবিরোধী অভিযান

মাদকের বিরুদ্ধে সরকার সর্বাত্মক লড়াইয়ে নেমেছে। বহুমুখী উদ্দেশ্য পূরণের এ লড়াইয়ে জিততে সরকার যে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, তাতে সন্দেহ নেই। এ লড়াইয়ের প্রধান উদ্দেশ্য দেশের যুবসমাজকে সর্বনাশের শেষসীমা থেকে ফিরিয়ে আনা। দ্বিতীয়ত, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে কাক্সিক্ষতমানে উন্নত করা। মাদক দেশের লাখ লাখ মানুষকে সর্বনাশের অন্ধকারে যেমন ঠেলে দিচ্ছে, তেমন আইনশৃঙ্খলার জন্য ডেকে আনছে বিড়ম্বনা। খুন, ছিনতাই, ডাকাতি অপহরণের যত ঘটনা ঘটছে, তার একটি বড় অংশের সঙ্গে রয়েছে মাদকের সম্পৃক্ততা। মাদক আগ্রাসন বন্ধ করা গেলে এসব অপরাধের রাশ টানা সম্ভব হবে। চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে ৩০ জুন পর্যন্ত সারা দেশে গ্রেফতার হয়েছে ২১ হাজার মাদকসেবী ও ব্যবসায়ী। মামলা হয়েছে ১৫ হাজার। অন্যদিকে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছে ১৫৩ জন; যার মধ্যে পুলিশের সঙ্গে ৮৪, র‌্যাবের সঙ্গে ৩৪ এবং বাকি ৩৫ জন ‘মাদক ব্যবসায়ীদের দুই পক্ষের বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছে। এর পরও মাদক ও ইয়াবা চক্রের শক্ত নেটওয়ার্ক ভাঙা সম্ভব হয়নি। চুনোপুঁটিরা ধরা পড়লেও রাঘববোয়ালরা ধরাছোঁয়ার বাইরেই রয়ে গেছে। মাদকবিরোধী সাঁড়াশি অভিযানের আগে পাঁচটি সংস্থা পৃথকভাবে তালিকা তৈরি করেছিল। এসব তালিকায় সর্বমোট মাদক ব্যবসায়ীর সংখ্যা ছিল চার হাজার। তা যাচাই-বাছাই করে সর্বশেষ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তুত করা তালিকায় শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীর সংখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে ৫৫০। এর মধ্যে প্রায় দেড় শ রয়েছে মদদদাতা। সবচেয়ে বেশি মাদক ব্যবসায়ীর অবস্থান কক্সবাজারে। বর্তমানে রাজধানীতে তালিকাভুক্ত শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীর সংখ্যা ৮২।

মাদকের ভয়াবহ থাবা দেশের তরুণসমাজকে রীতিমতো পঙ্গু করে দিচ্ছে। শহরে তো বটেই, প্রত্যন্ত গ্রামেও ছড়িয়ে পড়েছে ভয়ংকর সব মাদকের নেশা। আর তার অবশ্যম্ভাবী পরিণতি হিসেবে ছড়িয়ে পড়ছে নানামাত্রিক অপরাধ কর্মকা-। ভেঙে পড়ছে সামাজিক শৃঙ্খলাও। এ অবস্থায় ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে যেমন অভিভাবকরা আতঙ্কিত, তেমনি নিরাপদ ও সম্মানজনক জীবনযাত্রা হুমকির মুখে পড়ায় সব মানুষই উদ্বিগ্ন। এমনই প্রেক্ষাপটে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো দেশব্যাপী মাদকবিরোধী যে অভিযান শুরু করেছে, তাকে সবাই স্বাগত জানিয়েছে।

অপরাধবিজ্ঞানীরা মনে করেন, অন্য অনেক অপরাধের সূতিকাগার হচ্ছে মাদকের বিস্তার। অনেক দেশই মাদকের কারণে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। বাংলাদেশের বাস্তবতায়ও আমরা মাদকের বহুমুখী কুফল প্রত্যক্ষ করতে শুরু করেছি। তাই একে যেকোনো মূল্যে রুখতেই হবে। প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, ‘আমরা জঙ্গিবাদ দমন করেছি। এবার মাদকের হাত থেকেও দেশকে উদ্ধার করব।’ প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে যে আন্তরিকতা রয়েছে, আমরা তার গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারছি। সংগত কারণেই আশা করছি, মাদকবিরোধী অভিযান এবার সফলতা খুঁজে পাবে। এই অভিযান সফল করতে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগিতা অত্যন্ত জরুরি। সে কারণে পুলিশের পক্ষ থেকে একই সঙ্গে ‘চলো যাই যুদ্ধে, মাদকের বিরুদ্ধে’ শিরোনামে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রমও শুরু করা হয়েছে। আমরাও আশা করি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর আন্তরিকতা এবং সর্বস্তরের মানুষের সহযোগিতায় এবারের মাদকবিরোধী অভিযান সঠিক পথ ধরেই এগিয়ে যাবে।

মাদক বাণিজ্যে বহু ক্ষমতাশালী ও প্রভাবশালীর জড়িত থাকার তথ্য বহুবার বহুভাবে গণমাধ্যমে এসেছে। রাজনীতিবিদ, জনপ্রতিনিধি, আমলা, এমনকি পুলিশের বড় বড় কর্মকর্তাও জড়িত বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। জানা যায়, বিভিন্ন জায়গায় জমে ওঠা হাটবাজার নিয়ন্ত্রণ করে পুলিশের সোর্স হিসেবে কথিত কিছু ব্যক্তি। অভিযোগ আছে, তাদের মাধ্যমে মাদক ব্যবসার লাভের বড় অংশই চলে যায় পুলিশ কর্মকর্তাসহ হোতাদের পকেটে। সবার আগে এই সিন্ডিকেট ধ্বংস করতে হবে। তা না করে শুধু কিছু খুচরা কারবারিকে শাস্তি দিলে অভিযান সফল হবে না। জানা যায়, দেশে বর্তমান মাদকাসক্তির অর্ধেকেরও বেশি ইয়াবাজনিত। ইয়াবা আসে মূলত মিয়ানমার থেকে, চোরাইপথে। এ পথ বন্ধ করতে হবে। আইনের দুর্বলতা, দ্রুত জামিন পাওয়া এবং বিচারের দীর্ঘসূত্রতা নিয়েও অনেক লেখালেখি হয়েছে। মাদক থেকে মুক্তি পেতে এদিকেও মনোযোগ দিতে হবে। আমরা চাই, এবারের মাদকবিরোধী অভিযান সর্বাঙ্গীণভাবে সফল হোক।

লেখক : চেয়ারম্যান ইফাদ গ্রুপ

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist