অবৈধ বাণিজ্যে ভিওআইপি
অবৈধ এবং ব্যর্থ। শব্দদ্বয় আজ যেন পরস্পরের আত্মজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশে সব ধরনের অবৈধের যে রমরমা প্রবাহ, তাকে প্রতিরোধ করার ক্ষমতা যাদের ওপর ন্যস্ত তারাই আজ কম-বেশি ব্যর্থতার সমুদ্রে নিমজ্জিত। টেনে তোলারও কেউ নেই। আমরা জানি, ঘুষ দেওয়া ও নেওয়া একটি অবৈধ কর্ম। কিন্তু বানের পানির লাহান চলছে এই লেনদেন। যিনি বা যারা এর প্রতিরোধে নিয়োজিত, সৌভাগ্য আর দুর্ভাগ্য যাই-ই বলি না কেন, তিনি বা তারাও এই লেনদেনের সঙ্গে যুক্ত। ভেজালও একটি অবৈধ কর্ম। ভেজাল বিষে প্রায় নীল হতে চলেছে বাংলাদেশ। কিন্তু প্রতিরোধ কোথায়!
এভাবে শত শত অবৈধ কাজের উপমা তুলে ধরা যেতে পারে; যার মাঝে ভিওআইপির অবৈধ বাণিজ্য একটি। সংবাদমাধ্যম বলছে, অবৈধ ভিওআইপি (ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রটোকল) ব্যবসা বন্ধে ব্যর্থ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ। দেশজুড়ে চলছে এর রমরমা বাণিজ্য। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নাকের ডগায় বসে চলছে বিধিবহির্ভূত এ কার্যক্রম। কেউ কেউ বলছেন, প্রতিরোধকারী সংস্থার চোখ ফাঁকি দিয়ে কৌশলে চলছে এ বাণিজ্য। আবার অপর এক পক্ষের মতে, জেগে জেগে ঘুমালে তাকে আর জাগানো সম্ভব নয়। প্রতিরোধকারীরা যখন জেগে ঘুমানোর অভ্যাস করেছেন, তখন এ চুরি বন্ধ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। শক্তিশালী সিন্ডিকেট চক্রের কৌশলের কাছে সরকারের নেওয়া সব উদ্যোগ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হচ্ছে। তবে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী বলেছেন, ‘অনেক আগে থেকেই অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা চলে আসছে। দায়িত্বে আসার পর এ অবৈধ কার্যক্রম বন্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি। তবে এটা নির্মূল করার জন্য যে ধরনের পদক্ষেপ দরকার, তা এখনো নেওয়া সম্ভব হয়নি।’ কবে সম্ভব হবে- এ প্রশ্নে তিনি অবশ্য বলেছেন, আগামী ১০ বছরের মধ্যে এ দেশ থেকে অবৈধ এ বাণিজ্য নির্মূল করা সম্ভব হবে।
আমরা তার দেওয়া আশ্বাসে বিশ্বাস রাখতে চাই। কিন্তু ঘর পোড়া গরু যে সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পাবে- এটাই স্বাভাবিক। আমরাও যে সেই ঘর পোড়া গরু। যাদেরকে কাঁটাতারের অবৈধ কর্মকা-ের যন্ত্রণা দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে, তাদের কাছে সব আশ্বাসই দীর্ঘশ্বাসের বহিঃপ্রকাশ ছাড়া অন্য কিছু ভাবার কোনো সুযোগ থাকে না। এ কথা সব সময়ের জন্য সত্য যে, সমাজ অভিধান থেকে ‘অবৈধ’ শব্দটিকে নির্মূল করতে হলে সর্বাগ্রে প্রয়োজন একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। অবৈধ কর্মকা- উচ্ছেদের প্রশ্নে এটাই হতে পারে যোগ্যতম অ্যান্টিবায়োটিক।
"