ঢাকার তৃষ্ণা মেটায় পদ্মা
সম্প্রতি সরকারের এক পরিকল্পনা বলছে, ঢাকার আকাশছোঁয়া তৃষ্ণা মেটাতে এগিয়ে আসছে পদ্মা। ২০০৯ সালে ঢাকায় পানির চাহিদা মেটাতে মুন্সীগঞ্জ থেকে পানি এনেছিল সরকার। সে সময় ঢাকায় পানির চাহিদা ছিল ২১২ কোটি লিটার। পানি সরবরাহকারী সরকারি প্রতিষ্ঠান ওয়াসার সরবরাহ ছিল ৮৮ কোটি লিটার। ২০১৫ সালে ওয়াসা সেখান থেকে বেরিয়ে এসে ২২৫ কোটি লিটার পানির সংস্থান করেছে। এ ছাড়া ঢাকার তৃষ্ণা মেটাতে বিভিন্ন সময়ে ব্যবহার করা হয়েছে বুড়িগঙ্গা, ধলেশ্বরী ও শীতলক্ষ্যার পানি। তাতেও মেটেনি তৃষ্ণা। ঢাকার জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে যাচ্ছে পানির চাহিদা। বেড়ে যাওয়াটাও অস্বাভাবিক নয়। আর এই বাড়তি চাহিদা পূরণের জন্য নতুন পরিকল্পনার অধীনে আসছে পদ্মার পানি।
সূত্র মতে, ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের ফলে প্রতি বছর পানির স্তর দুই থেকে তিন মিটার নিচে নেমে যায়। এর ফলে শুধু পরিবেশের জন্য নয়, ভবিষ্যতে খাবার পানির জন্যও হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। এ দিক বিবেচনায় ভূগর্ভস্থ পানিকে নিরাপদ করার লক্ষ্যে সরকারের এ পরিকল্পনাকে সাধুবাদ জানানো যায়। ভূগর্ভস্থ পানির ওপর থেকে চাপ কমিয়ে ভূপৃষ্ঠের পানিকে ব্যবহার করাই এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য। অনেক দেরিতে হলেও পরিকল্পনাটিকে শতভাগ ইতিবাচক বলতেই হয়। তবে, ঢাকা এবং ঢাকাবাসীর প্রাণ হিসেবে চিহ্নিত বুড়িগঙ্গা, ধলেশ্বরী ও শীতলক্ষ্যা নদীর প্রতি যে অবহেলা প্রদর্শিত হয়েছে, তাকে শুধু নেতিবাচক বললে কম বলা হবে। আমরা মনে করি, এই তিন নদীর সঙ্গে সরকার, প্রশাসন এবং ঢাকায় বসবাসরত কিছু মানুষ যে অনৈতিক আচরণ করেছে, তা ক্ষমার অযোগ্য। আমরা এই অনৈতিক আচরণের বিচার দাবি করতেই পারি। একসময়ের পূর্ব-পৃথিবীর ভেনাস হিসেবে পরিচিত এই ঢাকা এখন বিশ্বের নিকৃষ্ট শহরে পরিণত হয়েছে। আমরা আমাদের এই সুন্দর শহরের ওপর শকুনের আচরণ দিয়ে তাকে করেছি রক্তাক্ত, যা কখনোই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধ একজন মানুষের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।
ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে একদিকে যেমন ভূগর্ভস্থ পানি রক্ষার ব্যবস্থায় সরকারের আগ্রহ আমাদের বিমোহিত করে; পাশাপাশি বুড়িগঙ্গা, ধলেশ্বরী আর শীতলক্ষ্যাকে বাঁচাতে না পারার বেদনা আমাদের আহত করে। ভূগর্ভস্থ পানি রক্ষার মতো সরকার বাস্তবতার নিরীখে বুড়িগঙ্গা, ধলেশ্বরী ও শীতলক্ষ্যা রক্ষায় বাস্তব পরিকল্পনাই গ্রহণ করবেÑএটাই প্রত্যাশা এবং সময়ের দাবি।
"