নান্দনিকতার মাঝে অনান্দনিকতা
নান্দনিক আর অনান্দনিকের দ্বন্দ্বেই বেড়ে উঠেছে পৃথিবী। যুদ্ধটা এই দুই সহোদরের মাঝেই থেকেছে সীমাবদ্ধ। পৃথিবীর প্রথম মানব আদমপুত্র হাবিল-কাবিল থেকে যার শুরু। থামেনি কোথাও কখনো। চলছে এবং চলবে। সম্ভবত এটাই সূত্র। অনেকে বিষয়টিকে বলে থাকেন দ্বান্দ্বিকতা। বস্তুর বিকাশের জন্য এই দ্বান্দ্বিকতা অপরিহার্য। তবে এ কথাও সত্য যে, পরিশেষে নান্দনিকতার জয় অবধারিত। ইতিহাসে উচ্চারিত শব্দাবলি বারবার সে কথাই বলেছে এবং আমরাও এভাবে বিশ্বাস করতে ভালোবাসি।
প্রশ্ন উঠেছে নেইমারকে নিয়ে। আমরা ফুটবল তারকা নেইমারের কথা বলছি। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, ‘তিনি ফুটবলের নান্দনিক রসায়নকে অনান্দনিক আচরণের মধ্য দিয়ে ক্ষতের উপমা তৈরি করেছেন।’ তিনি একজন তারকা খেলোয়াড়, এ প্রশ্নে কারো দ্বিমত নেই। যার পায়ে বাঁধা ছিল এবারের বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন। অনেকের মতে তিনি ব্রাজিলের সেই স্বপ্ন পূরণে ব্যর্থ হয়েছেন। সম্ভবত খেলার জন্য তিনি সম্পূর্ণ ফিট ছিলেন না। অন্তত মাঠে তার খেলা দেখে এ কথাই মনে হয়েছে। তবে ফিফার প্রধান ডেভেলপমেন্ট কর্মকর্তা হল্যান্ডের সাবেক স্ট্রাইকার ফন বাস্তেন সমালোচনা করেছেন একটু কঠোরভাবেই। তার কন্ঠ থেকে উচ্চারিত শব্দাবলির সঙ্গে অনেকেই একমত না-ও হতে পারেন। সমালোচনার ভাষা নেইমারকে কতটা আঘাত করেছে জানা নেই তবে নান্দনিকতাকে যে ক্ষত-বিক্ষত করেছে সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না।
নেইমার যা করেছেন তা ছিল তার ব্যক্তিগত একটি কৌশল মাত্র। যে কৌশল তাকে ইতিবাচক ফলাফল এনে দিতে পারেনি। তিনি সমালোচিত হয়েছেন। তাকে কোনোভাবেই বোদ্ধা দর্শকরা ভালোভাবে গ্রহণ করতে পারেননি, এ কথাও একাধিকবার সত্য। তবে তার এ কৌশল গ্রহণের পেছনে যে দেশপ্রেমের উদাহরণ তৈরি হয়েছে- তাকে কোনোভাবেই অবহেলা করা যাবে না। এত বড় মাপের একটি প্রতিযোগিতায় সম্পূর্ণ ফিট না থেকেও তিনি অংশ নিয়েছেন এবং দুর্বলতা পুষিয়ে নেওয়ার জন্য যে আচরণ করেছেন, তা ফুটবল বোদ্ধা সমাজে গ্রহণযোগ্য না হলেও এর মধ্য দিয়ে ফুটবল বিশ্ব একটি শিক্ষা অর্জন করেছে। আধুনিক ফুটবলে গতিই হচ্ছে খেলার প্রধান চালিকাশক্তি। আর এই চালিকাশক্তির অন্যতম উপাদান হচ্ছে ফিটনেস, টেকনিক, দলীয় সমঝোতা এবং ব্যক্তি কারিশমা। ব্রাজিল দলের কোথাও ঘাটতি না থাকলেও ঘাটতি ছিল প্রাণভোমরা নেইমারে। তিনি সম্পূর্ণ ফিট না থাকার পরেও মাঠে নেমেছেন। দাঁড়ানোর চেষ্টা করেও দাঁড়াতে পারেননি। বারবার মাটিতে লুটিয়ে পড়তে হয়েছে। অভিনয়ের মধ্যদিয়ে যাকে আড়াল করতে পারেননি।
ফুটবলে এ ধরনের অভিনয় আমরা সবসময়ই দেখে আসছি। এই অভিনয়কেও খেলার একটি অংশ হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। বিশ্ব ফুটবলে আর্জেন্টিনার কিংবদন্তি মেরাডোনার হাত দিয়ে গোল করাটাও ছিল অভিনয়। কিন্তু তাকে কেউ অভিনয় বলেনি। খেলার অংশ হয়েই থেকেছে। সে সময় ফিটনেসের দিক থেকে ম্যারাডোনার অবস্থান ছিল আকাশ ছোঁয়া। হয়েছিলেন সার্থক অভিনেতা। আমরা মাঠে সার্থক অভিনেতাকে চাই। আর এই সার্থক অভিনেতা হওয়ার জন্য চাই শতভাগ ফিটনেস।
"