দিলীপ কুমার আগরওয়ালা

  ১৪ জুলাই, ২০১৮

নিবন্ধ

জয় মানবতার জয়

থাইল্যান্ডে ১০ কিলোমিটারেরও বেশি দীর্ঘ জলমগ্ন অন্ধকার গুহায় শেষ পর্যন্ত ইচ্ছাশক্তিরই জয় হয়েছে। একজন উদ্ধারকারী প্রাণ হারালেও দীর্ঘ ১৯ দিন পর উদ্ধার করা হয়েছে কোচসহ কিশোর ফুটবল দলের ১৩ সদস্যকে। মিয়ানমার সীমান্তবর্তী এই গুহায় কিশোর ফুটবল দলটি ঘুরতে গিয়েছিল গত ২৩ জুন উষ্ণ আবেগ নিয়ে। তারা সেখানে প্রবেশের পরপরই শুরু হয় ভারী বৃষ্টিপাত। সে বৃষ্টিপাত ও ধারে-কাছের এলাকা থেকে আসা স্রোতে জলমগ্ন হয়ে যায় বিশাল গুহা। প্রাণ বাঁচাতে কিশোর দলটি ঠাঁই নেয় শেষ প্রান্তের কিছুটা উঁচু একটি এলাকায়। শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতিতে তাদের দিনের পর দিন কাটাতে হয়। গুহায় ঢোকার আগে কিশোর দলটি তাদের সাইকেল ও জুতা রেখে গিয়েছিল গুহার বাইরে। বাড়িতে না ফেরায় তাদের স্বজনরা শুরু করে খোঁজাখুঁজি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষও অনুসন্ধানে ব্রতী হয়।

বলা যায়, গুহার মুখে রেখে যাওয়া সাইকেলগুলো তাদের প্রাণ বাঁচায়। অনুসন্ধানকারীরা বুঝতে পারেন কিশোর ফুটবল দল ভেতরে আটকা পড়েছে। তবে পানিভর্তি গুহায় তারা বেঁচে আছে কি না, তা নিয়ে দেখা দেয় সংশয়। নিখোঁজ হওয়ার ৯ দিন পর ব্রিটিশ দুই ডুবুরি কিশোর দলটির জীবিত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হন। তারপর শুরু হয় অভিযান। থাইল্যান্ডের ৪০ জন এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশের ৫০ জন ডুবুরি অংশ নেন ঝুঁকিপূর্ণ এই অভিযানে। প্রথম পর্যায়ে চারজন, দ্বিতীয় পর্যায়ে চারজন এবং তৃতীয় পর্যায়ে পাঁচজনকে উদ্ধার করা হয় জীবিত। গাঢ় অন্ধকারের মধ্যে হেঁটে, কাদা মাড়িয়ে, কখনো চড়াইয়ে উঠে, আবার কখনো পানির নিচ দিয়ে সাঁতরে ওই কিশোরদের বের করে আনা হয়। উদ্ধারকাজের জন্য বাইরে থেকে ওই ফুটবল দলের অবস্থানস্থল পর্যন্ত দড়ি বাঁধা হয়। উদ্ধারের সময় প্রত্যেক কিশোরকে অক্সিজেন মাস্ক পরানো হয়, দড়ি দিয়ে বাঁধা হয় সামনে থাকা ডুবুরির সঙ্গে। একজন গুহায় বাঁধা দড়ি এবং অক্সিজেনের বোতল নিয়ে যান খুদে ফুটবলারদের কাছে। কোনো সমস্যা হলে সহায়তার জন্য তাদের পেছনে ছিলেন আরেকজন ডুবুরি। মিয়ানমারের সীমান্তের কাছে ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ থাম লুয়াং গুহা থাইল্যান্ডের দীর্ঘতম গুহা হলেও কম চওড়া আর অনেক প্রকোষ্ঠ থাকায় এর ভেতরে চলাচল করা কঠিন ও ঝুঁকিপূর্ণ। সে ঝুঁকিকে অগ্রাহ্য করে দেশ-বিদেশের উদ্ধারকারী দল মানবতার ডাকে যেভাবে সাড়া দিয়ে উদ্ধারকাজে এগিয়ে এসেছে, তা মনে রাখার মতো ঘটনা। মানুষ মানুষের জন্যÑ এ সত্যটি ফুটে উঠেছে এই উদ্ধারকাজের মধ্য দিয়ে।

৯ দিন পর ব্রিটিশ দুই ডাইভারের অসম সাহসিকতায় খোঁজ মেলার পর শুরু হয় তাদেরকে উদ্ধারের নানা পরিকল্পনা। প্রথমে ভাবা হয়েছিল, পানি না কমা পর্যন্ত অপেক্ষা করা হবে। তাতে অন্তত চার মাস সময়ও লেগে যেতে পারে বলে জানানো হয়েছিল; কিন্তু পরে দেখা গেলো গুহার ভেতর অক্সিজেন কমে যাচ্ছে। তারওপর তুমুল বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। তেমনটি হলে গুহার যে জায়গায় কিশোররা আটকা, সেটাও ডুবে যেতে পারে এবং বিপন্ন হতে পারে তাদের জীবন। সুতরাং, থাই কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ১৮ দেশের বিশেষজ্ঞ উদ্ধারকারীদের নিয়ে অভিযান শুরু করা হয় ৮ জুলাই, রোববার। অবশেষে ১৭ দিনের রুদ্ধশ্বাস পরিস্থিতির অবসান ঘটিয়ে মঙ্গলবার (১০ জুলাই) বিকেল নাগাদ ১২ কিশোর ও তাদের কোচসহ সবাইকে সুস্থভাবে উদ্ধার করা হয়। ১৮টি দেশের মোট ৯০ জন (৬০ জনই বিদেশি) উদ্ধারকারী দল অংশ নিয়েছিল রুদ্ধশ্বাস এই অভিযানে।

থ্যাম লুয়াং গুহায় আটকে পড়া ১৩ কিশোর এবং তাদের কোচের এই ঘটনা থাইল্যান্ডের গহীনে গভীর এক অন্ধকার জগতকে উন্মোচিত করে দিয়েছে সারা বিশ্বের সামনে। চিয়াং রাই প্রদেশে আটকে থাকা ৪ লাখেরও বেশি দেশ-পরিচয়হীন মানুষের গভীর দুর্দশার কথা জানতে পারলো বাকি বিশ্ব। মিডিয়ার সামনে উজ্জ্বল হয়ে গেলো এই এলাকার দেশহীন মানুষগুলোর করুণ অবস্থা। থাইল্যান্ড সরকার এখানকার হাজার হাজার শিশু-কিশোরকে শিক্ষা দিচ্ছে- এটা ঠিক। কিন্তু তাদেরকে নাগরিকত্ব কিংবা ন্যূনতম অধিকার দেওয়ার বিষয়টা এখনো গতি পায়নি। অনেকাংশে না পাওয়ারই মতো। আটকে পড়া শিশুদের এ ঘটনার মধ্য দিয়ে বিষয়টা প্রকাশ পেল বিশ্ব দরবারে। আশা করি, এখানেও জয় হবে মানবতার।

লেখক : পরিচালক, এফবিসিসিআই

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist