অনৈতিকতার বিপরীতে...
চিকিৎসক। গুণগত মান বিবেচনায় পেশার শীর্ষে এই পেশাজীবীদের অবস্থান। সেবাই এই পেশার মূলমন্ত্র। যদিও সেই মন্ত্রকে ধারণ করে চিকিৎসকরা আজ আর চলতে আগ্রহী নন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক কিছুই বদলেছে। বদলেছে চিন্তাচেতনাও। বেড়েছে নিপীড়নের মাত্রা। আর বরাবরের মতো এই নিপীড়ন সইতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। সম্ভবত মানুষের সহ্যের সীমাকেও অতিক্রম করেছে এ নিপীড়ন। ডাক্তারদের এই অনৈতিক আচরণের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের সাধারণ মানুষ একাত্ম হয়ে প্রতিবাদ করেছে। তাদের এই প্রতিবাদ আমলে নেয়নি চট্টগ্রামের প্রাইভেট ক্লিনিক ও হাসপাতাল। সেখানকার চিকিৎসকসহ সবাই সাধারণ মানুষের প্রতিবাদের বিপরীতে ধর্মঘটের ডাক দেয়। ফলে তাদের নীতিনৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। আর এই নীতিনৈতিকতার প্রশ্নে আদালত এক যুগান্তকারী মন্তব্য করেন।
আদালতের মতে, দেশে চিকিৎসা এখন দুর্বৃত্তের পেশায় পরিণত হয়েছে। পেশাগত কাজে তাদের ভুল থাকার পরও তা ঢাকতে ধর্মঘটের ডাক দেওয়াটা হয়েছে আরো বড় মাপের অন্যায়। গত সোমবার এ-সংক্রান্ত এক রুলের শুনানিকালে হাইকোর্টের এ মন্তব্য। আদালতের পক্ষ থেকে আরো বলা হয়, কিছু দুর্বৃত্তের কর্মকান্ডের কারণে চিকিৎসাসেবার সুনাম নষ্ট হচ্ছে। আর এই সুনাম বিঘ্নিত হওয়ার কারণেই অনেকে চিকিৎসাসেবা নিতে বাইরে চলে যাচ্ছেন। যদিও এ দেশেই ভালো চিকিৎসার সুযোগ রয়েছে, রয়েছে ভালো চিকিৎসক। সম্ভবত দেশের ষোলো কোটি মানুষ আদালতের এই পর্যবেক্ষণ ও মতামতের সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত। আমরা মনে করি, চিকিৎসকদের এহেন কার্যকলাপকে প্রতিহত করার জন্য সর্বাগ্রে চিকিৎসকদেরই এগিয়ে আসাটা তাদের নৈতিক দায়িত্ব। সমর্থন নয়, বিরোধিতার মধ্য দিয়েই হবে নৈতিকতার জয়।
ধর্মঘট ইতোমধ্যেই প্রত্যাহার করা হয়েছে। তবে প্রত্যাহারই শেষ কথা নয়। শেষ কথা হতে হবে অনৈতিকতা থেকে ফিরে আসা। এখানেই প্রশ্ন। কে ফেরাবে নৈতিকতায়? সম্ভবত সে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের অভাব প্রকট হওয়ার কারণে জনদুর্ভোগ বাড়ছে প্রতিনিয়তই। আমরা সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষেত্রেও একই চিত্র দেখেছি বারংবার। প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনায় গড়ে মারা পড়ছে ১০ জন। চিকিৎসকদের মতো গাড়িচালকদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদমুখরও হয়েছে জনতা। কিন্তু কোনো ইতিবাচক ফল পায়নি তারা। ধর্মঘটের জালে আটকা পড়েছে সব ধরনের নীতিনৈতিকতা। আমরা আর এই নৈতিকতা নিধনের জালে আটকা পড়ে জীবনযাপনে আগ্রহী নই। সুস্থ ও সুন্দর সমাজ জীবনে প্রবেশে আগ্রহী। সমাজ পরিবর্তনের কান্ডারি যারা তারা নিশ্চয়ই আমাদের এই প্রত্যাশার সঙ্গে মিলিত হয়ে বলবেন, খুব বেশি দূরে নয়- ‘অনৈতিকতার বিরুদ্ধে নৈতিকতার জয়’।
"