কেমন আছেন বাবা-মা
বাবা-মা যখন সন্তানের কাছে ‘বোঝা’ হয়ে দাঁড়ায়-তখন! অন্ধকারে নিমজ্জিত হয় পৃথিবী। বোধের ভাড়ার থেকে উবে যায় মানবিক গুণাবলি। সমাজ ও প্রকৃতিকে জয় করার মতো আর কোনো অস্ত্র থাকে না মানুষের হাতে। অনেকে বলে থাকেন, পেশিশক্তিই পারে পৃথিবী জয় করতে। বিপরীত চিন্তার মানুষরা বলে, না। পেশিশক্তি যা করে তার স্থায়িত্ব নেই। সবকিছুই সাময়িক। আর ভালোবাসার জয় চিরস্থায়ী। একটি মানুষের মনকে জয় করে, অন্যটি দখল করে মানুষের দেহ। মন জয়ের জন্য প্রয়োজন মানবিক বোধের অনুশীলন আর দেহ জয়ের জন্য প্রয়োজন পাশবিক শক্তি। এখানেই প্রশ্ন। মানবিক হব, না পাশবিক! মানুষ নাকি পশু?
যারা পশুত্বকে বরণ করেছে, তারাই পারে বাবা-মাকে অবহেলা করতে। লায়াবিলিটি মনে করতে। অথচ শিশুকাল থেকে কৈশোর উত্তীর্ণকাল পর্যন্ত এই বাবা-মা কখনো তাদের সন্তানকে ‘বোঝা’ বলে মনে করার কথা ভাবনায়ও আনেননি। মানবিক বোধ থেকে একচুলও সরে আসতে পারেননি তারা। কিন্তু সন্তানরা পেরেছে এবং পারছে। পারছে বলেই আজ সরকারকে এসব বাবা-মাকে নিয়ে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে। নতুন করে প্রণয়ন করতে হচ্ছে বাবা-মায়ের ভরণপোষণের বিধিমালা। যেভাবেই ব্যাখ্যা করা হোক না কেন, বিষয়টি ইতিবাচক একটি সিদ্ধান্ত। এ জন্য সরকারকে সাধুবাদ দেওয়া যেতেই পারে। সন্তানরা যখন তাদের বৃদ্ধ বাবা-মায়ের প্রতি যথাযথ দায়িত্ব পালন করবেন না, তখন কাউকে না কাউকে দায়িত্ব পালনে এগিয়ে আসতেই হবে। এ ক্ষেত্রে সরকার এসেছে। একটি বিধিমালার খসড়া তৈরি করছে সরকার। বিবেক-বোধ হারিয়ে সন্তানরা যখন ভুল পথে পথ পরিক্রমণের চেষ্টা করবে, তাদের সঠিকপথে ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব সরকার স্বেচ্ছায় নিজের হাতে তুলে নিয়ে সমাজকে জাগিয়ে তোলার যে চেষ্টা করেছে-তার জন্য আবারও অভিনন্দন। তবে এ কথাও সত্য, সরকারের একার পক্ষে সমাজের কাঁধ থেকে জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসা এই ভূত তাড়ানো সম্ভব নয়। মানবিক বোধের মানুষগুলোকে যূথবদ্ধভাবে এ কাজে সম্পৃক্ত হতে হবে এবং নতুন সূর্যের মতো নিজেকে আলোকিত করে, সে আলো সমাজের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রত্যয়ে মাজা সোজা করে দাঁড়াতে হবে। সমাজ আলোকিত না হলে পশুদের সমাজব্যবস্থাই এগিয়ে যাবে। আমাদের বাবা-মাও থেকে যাবেন অবহেলিত; যা কখনোই কোনো সভ্য মানুষের কাম্য হতে পারে না।
"