নৈরাজ্যের অবসান হোক
রাজধানীর গণপরিবহনে চলছে ভয়াবহ নৈরাজ্য। এ নৈরাজ্য নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সিটিং সার্ভিসের নামে চিটিং কারবারিদের দৌরাত্ম্য। পরিবহন খাতের মুনাফালোভীদের এই ফাঁদ থেকে অসহায় যাত্রীদের মুক্তির কোনো উপায় নেই। সমাধানেরও কোনো উদ্যোগ নেই। অতিরিক্ত ভাড়া আদায় এবং যাত্রীবহনে নানা অভিযোগে অভিযুক্ত এই সিটিং সার্ভিস। বিশেষজ্ঞদের মতে, রাজধানীর গণপরিহনে সঠিক নীতিমালা না থাকায় এ নৈরাজ্য দিন দিন বেড়েই চলেছে। যদিও বিআরটিএ বলছে, শিগগিরই নীতিমালা তৈরি করে এ সমস্যার সমাধান করা হবে। কিন্তু তাদের কথা ও কাজের মধ্যে বরাবরই ফারাক থেকে যায়। যে কারণে সিটিং সার্ভিসের নামে কোনো রুট পারমিট না থাকা সত্ত্বেও এরই মধ্যে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছেন গণপরিবহন সংশ্লিষ্টরা।
ঢাকা মহানগরীতে প্রায় ১০ হাজার গণপরিবহনের চাহিদা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে চলছে প্রায় সাত হাজার বাস। আবার এগুলোর মধ্যে নানা সমস্যার কারণে নিয়মিত চলাচল থেকে বিরত থাকছে অনেক বাস। ফলে সংকট আরো বেড়ে যায়। এমন সংকটাপন্ন অবস্থায় সিটিং সার্র্ভিসের নামে যাত্রী পরিবহনের সংখ্যা কমিয়ে ফেলায় জনদুর্ভোগ ক্রমেই বাড়ছে। কোনো সুষ্ঠু তদারকি বা নীতিমালা না থাকায় এ সমস্যা বর্তমানে প্রকট আকার ধারণ করেছে, যা পরিবহন-সংশ্লিষ্টরাও স্বীকার করছেন। অন্যদিকে, সিটিং সার্ভিসের কারণে রাজধানীতে ছোট গাড়ির সংখ্যা বেড়ে গেছে। এ কারণে বেড়ে গেছে যানজটও। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, শুধু যানজটের কারণে রাজধানীতে প্রতি বছর ৩৫ হাজার কোটি টাকা নষ্ট হচ্ছে। আর তাই সবার আগে বাসমালিক, যাত্রী ও নিয়ন্ত্রণ সংস্থার ঐকমত্যের ভিত্তিতেই কেবল সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব বলে মত দেন বিশেষজ্ঞরা। রাজধানীর গণপরিবহন ব্যবস্থাপনায় এই অরাজকতা কোনোভাইে গ্রহণযোগ্য নয়। এর আগে ঢাকার রাজপথে বিভিন্ন রুটে সুদৃশ্য বাস চলাচল করলেও, এখন তা একটি বিরল দৃশ্যে পরিণত হয়েছে। অনেক রুটে তখন এসি বাসও চলাচল করত। কাউন্টারভিত্তিক সেসব বাস সার্ভিসে লোকজন নির্দিষ্ট গন্তব্যের টিকিট সংগ্রহ করে সুশৃঙ্খলভাবে চলাচলের সংস্কৃতিতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিল। যাত্রীরা মোটামুটি নিরাপদ ও নির্বিঘেœ চলাফেরা করতে পারতেন। বর্তমানে এ ব্যবস্থা একেবারেই ভেঙে পড়েছে। পরিবহন খাতের এই অরাজকতার জন্য সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সবার দায়িত্বহীনতা আর নানামুখী দুর্নীতিকেই দায়ী করছেন অনেকে। আর এসব কারণে পরিস্থিতি আজ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। আমরা আর কারো কথা কিংবা প্রতিশ্রুতিতে সন্তুষ্ট থাকতে চাই না। চাই যথাযথ নজরদারি এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি।
আমরা নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য গণপরিবহনব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে সরকার প্রণীত ‘কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা’র দ্রুত বাস্তবায়ন দেখতে চাই। পাশাপাশি সরকার রাজধানীর গণপরিবহনব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনে মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে সচেষ্ট হবেÑএটাই সবার প্রত্যাশা।
"