আবু আফজাল মোহা. সালেহ

  ২০ জুন, ২০১৮

নিবন্ধ

আর কত কাঁদবে

আর কত কাঁদবে? আমরা সচেতন হব কবে? প্রতি বছরই মৃত্যুর মিছিল হচ্ছে! পাহাড়ের কান্না থামানো যাচ্ছে না! ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে মানবতা! ১৩টি কারণে পার্বত্য অঞ্চলে সাম্প্রতিক পাহাড়ধস ঘটেছে বলে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের গত বছরের তদন্ত কমিটির এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। সেই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ কারণগুলোর মধ্যে আটটি মানবসৃষ্ট কারণ এবং পাঁচটি কারণ প্রাকৃতিক। এ কমিটির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, পাহাড়ধসের মানবসৃষ্ট কারণগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কারণ হলোÑনির্বিচারে বন ও গাছপালা ধ্বংস করা। পরিকল্পনার অভাব আরেকটি মূল কারণ। এ ছাড়া আছে অপরিকল্পিতভাবে পাহাড় কেটে বসতি স্থাপন, রাস্তা ও সড়ক নির্মাণ এবং অন্যান্য উন্নয়নমূলক স্থাপনা নির্মাণে বিল্ডিং কোড না মানা। উন্নয়নমূলক সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাবও আরেকটি মূল কারণ। তা ছাড়া আছে পাহাড়ে উন্নয়নের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট নীতিমালার অভাব। মাটি পরীক্ষার ফলাফল যথাযথভাবে অনুসরণ না করে পুরোনো অ্যালাইনমেন্টের ওপর কাজ করাও আরেকটি কারণ। অপরিকল্পিত জুম চাষও পাহাড়ধসের কারণ বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। জুম চাষে আগাছানাশক ওষুধ ব্যবহার করার ফলে পাহাড়ের মাটি দুর্বল হয়ে যায়। এ ছাড়া পাহাড়ের পরিবেশ-প্রতিবেশ অনুযায়ী ফসলাদি চাষ না করে আদা, হলুদের চাষ করায় প্রচুর মাটি ক্ষয় হয়। মানবসৃষ্ট অন্যান্য কারণের মধ্যে আছে পাহাড়ে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ না লাগিয়ে বেশি লাভের আশায় অধিক হারে সেগুনগাছ লাগানো। এসব প্রাকৃতিক স¤পদ বিলুপ্তির পেছনে আমরা নিজেরাই দায়ী। চাষাবাদে আগাছা নাশক যে রাসায়নিক শক্তি বা পদার্থ ব্যবহার করা হচ্ছে, সেটি আরো অধিক ভয়াবহ। সেটি লতাগুল্মসহ বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদকে আরো বিলুপ্ত করে দিচ্ছে। পাশাপাশি সব ধরনের কীটপতঙ্গ ও সরীসৃপ জাতীয় প্রাণীও নির্মূল করে দিচ্ছে। ফলে মাছ, কাঁকড়া, চিংড়ি, শামুকসহ বহু প্রাণীর প্রজন্ম কমে যাচ্ছে।

মন্ত্রণালয়ের তদন্তে পাহাড়ধসের প্রাকৃতিক কারণ হিসেবে পাঁচটি কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। কারণগুলো হলো, অতিবৃষ্টি ও মাটির প্রকৃতি। ওই অঞ্চলের বেলে-দোআঁশ মাটি বৃষ্টির পানিতে সহজে নরম হয়ে যায়। এ ছাড়া দীর্ঘ খরার পর একটানা বৃষ্টি, ভূমিকম্পে পাহাড়ে ফাটল সৃষ্টি হওয়া এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পাহাড়ধসের পেছনে কাজ করেছে। মাটির উপরিভাগে সাধারণত কয়েকটি স্তর থাকে। তার মধ্যে সবচেয়ে উপরি অংশ বা স্তর অনেকটা চামড়ার মতো একটি আবরণ। এটাকে মাটির চামড়াও বলা যেতে পারে। আমাদের মাটির চামড়ার অস্তিত্ব আর নেই। মাটির চামড়াকে শক্ত করে ধরে রাখার অনেক উদ্ভিদ আমরা ধ্বংস করে ফেলেছি। যেগুলোর অস্তিত্ব এখন আর পাওয়া যাচ্ছে না। আমাদের পাহাড়ি অঞ্চলের ওপরের দিকের মাটিতে কঠিন শিলার উপস্থিতি নেই বলা চলে। যার কারণে আমাদের পাহাড়ধসের আশঙ্কা এমনিতেই বেশি। তা ছাড়া এসব স্থানে বসবাস ও চাষাবাদের জন্য পাহাড়ের ওপরের দিকের শক্ত মাটির স্তরও কেটে ফেলা হয়। সংশ্লিষ্ট এলাকার কেউ কেউ বাসের প্রয়োজনে বড় বড় গাছপালা কেটে ফেলে এর ফলে ভারী বৃষ্টিপাত হলেই পাহাড়ের মাটি ধসে পড়ে। এই ধস থেকে বাঁচতে হলে প্রথমত পাহাড় কেটে হাউজিং, শিল্প-কারখানা স্থাপন বন্ধ করতে হবে। প্রচুর বৃক্ষ রোপণ করতে হবে। উন্নত বিশ্বের মতো পাহাড়গুলোয় জলের ধারা প্রবাহের নির্দিষ্ট গতিপথ সিমেন্টের ঢালাইয়ে তৈরি করা যেতে পারে। পাদদেশে বসতবাড়ি নির্মাণে সতর্ক হতে হবে। পার্বত্য অঞ্চলের জন্য আদর্শ বিল্ডিং কোড তৈরি করা যেতে পারে। পরিশেষে বলতে হয়, শুধু আইন করে সরকার পুরোপুরি এ ঘটনা বন্ধ করতে পারবে না। জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। এ ব্যাপারে সর্বাগ্রে সরকার-জনগণ ও এলাকাবাসীর যৌথ প্রচেষ্টা থাকতে হবে।

লেখক : প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist