ফুটবল মহাযজ্ঞে কাঁপছে পৃথিবী
সব সময় দেখেছি, কোনো না কোনো নেতিবাচক কর্মকান্ডের সঙ্গে কাঁপন শব্দটির যোগাযোগ পরমাত্মীয়র। কখনো কোনো কিছুকেই কোনো ইতিবাচক কর্মকান্ডের জন্য কাঁপতে দেখিনি। দেখেছি উচ্ছ্বসিত হতে। এবার তার ব্যত্যয় হয়েছে। ফুটবল মহাযজ্ঞে কাঁপছে পৃথিবী। এ যেন অনেকটা আনন্দাশ্রুর মতো। এবারের মহাযজ্ঞ ২১তম ফুটবল বিশ্বকাপ। ভেন্যুÑ দ্য গ্রেট রাশিয়া। পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম দেশ। শৌর্যে-বীর্যে, আয়তন-বৈচিত্র্যে, শিল্প-সংস্কৃতি ও সাহিত্যের চারণভূমিতে পর্দা উঠল এবারের ফুটবল বিশ্বকাপের। বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে এসেছে বাছাই করে তুলে আনা ৩১টি দেশ। এ ছাড়া স্বাগতিক দেশ হিসেবে থাকছে রাশিয়া। অর্থাৎ মোট ৩২টি দেশ মুখেমুখি হচ্ছে সম্মুখ সমরে।
এ এক অদ্ভুত যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা। যুদ্ধ হবে রাশিয়ায়। বোমাহীন গোলাহীন এক যুদ্ধ। আহত-নিহতের আর্তনাদে কাঁদবে না পৃথিবী। তবে বাতাসের সিম্ফনিতে ধ্বনিত হবে বোবাকান্নার সীমিত হাহাকার। শোনা এবং দেখা না গেলেও পদ্মপুকুরের চোখের কোনায় যে জল ছলছল করবে এ কথা অস্বীকার করবে কে? মহাযুদ্ধের মহাযজ্ঞে পৃথিবী দ্বিখন্ডিত হবে। পক্ষে-বিপক্ষে দাঁড়াবে ৭০০ কোটি মানুষ। বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষও ভাসবে একই স্রোতে। ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ছাড়াও রয়েছে জার্মানি, স্পেন ও ফ্রান্সের সমর্থক। তবে গোটা দেশটাই যেন দুই ফুটবল পরাশক্তির দখলে। ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনাকে এরা সব সময়ই জুগিয়েছে বাড়তি কিছু ভালোবাসা। রাশিয়া ফুটবল বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে যে ৩২টি দল তাদের জায়গা করে নিয়েছে, এদের কাউকেই অবহেলা করা যাবে না। এদের মাঝ থেকে যে কেউই যেকোনো ধরনের অঘটন ঘটানোর ক্ষমতা রাখে। অঘটন বলতে শুদ্রের কাছে ব্রাহ্মণের পরাজয়। এমন চিত্র এবারের বিশ্বকাপে একাধিকবার দেখা গেলেও বিস্মিত হওয়ার কিছু থাকবে না। বরং ঘটার সম্ভাবনাই শতভাগ। তবে এবারের বিশ্বকাপে ফেভারিট হিসেবে সবার আগে নাম এসেছে- ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, জার্মানি, স্পেন ও ফ্রান্সের নাম। এরা দীর্ঘ সময় ধরে বিশ্ব ফুটবলের এক একটি ফুটবল জায়েন্ট। বিশ্ব ফুটবলে এদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য অনেক পুরনো।
এবারের বিশ্বকাপে খেলবে ৩২টি দেশের মোট ৭৩৬ জন ফুটবলার। এদের মাঝে একজনের হাতে তুলে দেওয়া হবে গোল্ডেন বুট। কে হবেন সেই ব্যক্তি? এ নিয়েও জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই। নাম শোনা যাচ্ছে মেসি, রোনালদো ও নেইমারের। এর বাইরেও যে দু-একজন নেই, তা নয়। আমরা জানি, পরাশক্তির হাতেই পুঞ্জীভূত হয়ে আছে পৃথিবীর সব সম্পদ এবং শক্তি। ফুটবল বিশ্বেও এর কোনো ব্যত্যয় হয়নি। এবারও যে পরাশক্তির গলায় জয়মাল্য উঠবে সে রকম রবই শোনা যাচ্ছে সর্বত্র। তবে আমাদের ভাবনায় কিছু ব্যতিক্রমী চিন্তা যুক্ত হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। সে চিন্তাই বলে দিচ্ছে, এবারের বিশ্বকাপের মুকুট পরাশক্তির বাইরে কোনো দেশের মাথায় উঠলে অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না এবং এর সম্ভাবনাও কম নয়, ৪৭ শতাংশ।
"