বৈরিতা থেকে বন্ধুত্ব
চিন্তা ও চেতনার ঐক্যই বন্ধুত্ব। ন্যূনতম ৫১ শতাংশ একমত হতে পারলে সেখানে ঐক্যের সম্ভাবনা তৈরি হয়। অন্যথায় বৈরিতা। মাঝখানে আরো একটি শব্দের আনাগোনা দেখা যায়। শব্দটি সমঝোতা। অর্থাৎ এক ধরনের আপস। একপক্ষের শর্তসাপেক্ষ সমর্পণ। ক্রীতদাস নয়; অনেকটা ভূমিদাসের মতো। লালগালিচা বিছানো মঞ্চে যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরীয় নেতাকে পরস্পরের দিকে এগিয়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখে মনে হতে পারে কত না আপন দুজন। বহু দিন পর এ যেন দেখা হলো। দুই নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কিম জং উনের এ সাক্ষাৎ ছিল বিশ্ববাসীর আগ্রহের কেন্দ্রে। আগ্রহের অন্যতম প্রধান কারণ ছিল, তারা যেন একটি পারমাণবিক যুদ্ধের হাত থেকে রক্ষা পেল। কিন্তু প্রকৃত সত্য ছিল এর বিপরীত। পারমাণবিক যুদ্ধের আস্ফালন আর যুদ্ধে নেমে পড়া এক কথা নয়। কিম তার হাতে তৈরি এক কাগুজে বাঘের আস্ফালন দেখিয়েছে। সেই আস্ফালনকে বিশ্ব মিডিয়া ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে প্রচার করে উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্টকে এমন একটি অবস্থানে এনে দাঁড় করিয়েছে যেন কিম তার পরিকল্পনার অবশিষ্ট অংশ তার মতো করে শেষ করতে পারেন এবং তিনি তা করতে চলেছেন।
পৃথিবীর তাবৎ কমিউনিস্ট দেশের মতো উত্তর কোরিয়াও সম্ভবত তার এত দিনের চিন্তা-চেতনা থেকে সরে এসে নতুন পথে চলার কথা ভেবেই যুক্তরাষ্ট্রের দিকে হাত বাড়িয়েছে। গত মঙ্গলবার দুই নেতার যৌথ বিবৃতিতে বরফ গলার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে বলে মিডিয়ার বিশ্লেষণে বলা হয়েছে। মিডিয়ার তথ্য মতে, চুক্তিতে কোরীয় উপদ্বীপকে পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত করার প্রতিশ্রুতি রয়েছে। দীর্ঘদিনের মিত্র দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে যৌথ সামরিক মহড়া বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প। ট্রাম্পের বক্তব্য সূত্রে আরো বলা হয়, উত্তর কোরিয়া তার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার স্থাপনা ধ্বংস করার ওয়াদা করেছে। ওয়াদা অটুট থাকলে যুক্তরাষ্ট্র পিয়ং ইয়ংয়ের সার্বিক নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেওয়ার অঙ্গীকার করছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, দুই মেরুতে অবস্থানরত দুই দেশ একে অপরকে কীভাবে রাখিবন্ধনে আবদ্ধ করবে। বিষয়টি বাইরে থেকে যতটা সহজ মনে হচ্ছে, ততটা সরল নয়। সম্ভবত উত্তর কোরিয়া তার এত দিনের লালিত দর্শনকে হত্যা করে নতুন আঙ্গিকে নতুন দর্শনে নিজেকে প্রকাশ করতে চলেছে। যে দর্শন যুক্তরাষ্ট্রের দর্শনের সঙ্গে ন্যূনতম ৫১ শতাংশের মিল খুঁজে পাওয়া যাবে। অথবা বলা যায়, উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং উন যা ভাবছেন, তা প্রকাশ করছেন না। আর যা প্রকাশ করছেন, তা ভাবছেন না। তবে এ বৈঠককে স্বাগত জানিয়েছে চীন, রাশিয়া, জাপান ও ইইউ। আমরাও স্বাগত জানাই। তবে, উত্তর কোরিয়া সমঝোতা করে থাকলে তা তার ভবিষ্যৎ হবে অনেকটা ভূমিদাসের মতো। সে যাই হোক না কেন, সমঝোতাকে স্বাগতম।
"