মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা
এক বন্ধুকে বলতে শুনেছি, মানবতা শব্দটিকে কে বা কারা গুম করে বিশ্ব মানচিত্র থেকে সরিয়ে দিয়েছে। তাই তাকে আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে তাকে যে খুন করা হয়নি, এর নিশ্চয়তা পাওয়া গেছে। মিডিয়ায় পাওয়া খবরে প্রকাশ, ডিকশনারি নামের এক গ্রন্থের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে তাকে দীর্ঘকালীন বিশ্রামে রাখা হয়েছে। তবে কবে এই মহিমান্বিত শব্দটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষের বাইরে এসে তার নিজস্ব মহিমায় উদ্ভাসিত হওয়ার সুযোগ পাবে, তা কারো জানা নেই। এমনকি মিডিয়াও সেই সম্ভাবনার কথা বলতে পারেনি।
রোহিঙ্গাদের সঙ্গে মিয়ানমার সরকার যে আচরণ করেছে, তা স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে বর্বরোচিত ও ঘৃণ্যতম। এখানে মানবতাকে গণধর্ষণ শেষে হত্যার অপচেষ্টাই শুধু করা হয়নি নিজ ভূমি থেকে একসঙ্গে উৎখাত করা হয়েছে ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে। যারা এখন শরণার্থী পরিচয়ে বাংলাদেশে মানবেতর জীবনযাপন করছে। তাদের মানবেতর জীবন চলমান পৃথিবীর জন্য কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। বিশ্বের সর্বত্রই আজ এর ব্যাপকতা। এ যেন মানবতা উৎখাত উৎসবেরই এক মহাযজ্ঞ। আর সেই মহাযজ্ঞের আওতায় আজ মানবতা শব্দটিও নিখোঁজ।
শেষ আশ্রয়ও নিরাপদ থাকল না। মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা এসে পড়ল। গত সোমবার ভারী বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ার মধ্যে পাহাড়ধসের মুখে পড়েছে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা। এই ধসে এখন পর্যন্ত ৬০০ ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। আহতের সংখ্যা পাঁচ শতাধিক এবং মৃত্যুবরণ করেছে শিশুসহ ১২ জন। চলতি বর্ষায় পাহাড়ধস ও বন্যায় কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মারাত্মক বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা হয়েছিল। এ ব্যাপারে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা এবং দেশের বিশেষজ্ঞরা বর্ষার আগেই রোহিঙ্গাদের সরিয়ে নিরাপদ স্থানে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার কার্যক্রমও শুরু হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই পাহাড়ধসের মুখেই পড়তে হলো রোহিঙ্গাদের। সামনে আরো কত দুর্যোগ অপেক্ষা করছে, তা কেবল ভবিষ্যৎই বলতে পারে।
বিত্তবান এবং বিত্তশালীদের চেতনার ভাড়ার থেকে মানবতাকে অন্যত্র পাচার করলেও সাধারণ মানুষের চিন্তা ও চেতনায় তা অনড় থেকেছে। আর সেই সাধারণের পাললিক ভূমি বাংলাদেশ তার আচরণ দিয়ে প্রমাণ করেছে, তারা মিয়ানমারের মতো বর্বর নয়। এ দেশ লালনের, হাসনের আর ১২ আউলিয়ার দেশ। এ দেশের মানুষরা তাদের মতোই মানবিক ও নান্দনিক সুন্দর। তারা যখন রোহিঙ্গাদের মানবিক কারণে আশ্রয় দিতে পেরেছে, লালন করতেও সক্ষম। আমরা বিশ্বাস করি, এ মাটির সাধারণ মানুষের মতো সরকারও সমানভাবে মানবিক। তারা নিশ্চয়ই দ্রুততার সঙ্গে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিরাপত্তাকে নিশ্চিত করে আবারও প্রমাণ করবে, বাংলাদেশ সব সময়ই মানবতার পক্ষে। এ ব্যাপারে বিশ্বের রোল মডেলও আমরা আর এটাই ১৬ কোটি মানুষের প্রত্যাশা।
"