দিলীপ কুমার আগরওয়ালা
সাফল্য
বিশ্বকাপের জার্সিতে বাংলাদেশ
রাশিয়ায় অনুষ্ঠেয় বিশ্বকাপ ফুটবলের একবিংশতম আসরে সরাসরি অংশগ্রহণ করতে না পারলেও সেখানে নানাভাবে উপস্থিত থাকতে পারছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে অন্যতম উপস্থিতি চোখে পড়বে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক জার্সির মাধ্যমে। এর বাইরেও দেশের অন্যতম বৃহৎ রফতানিমুখী পোশাকশিল্প খাতে বিশ্বকাপ ফুটবলের আরো নানা অনুষঙ্গ যেমন জ্যাকেট, টুপি, মোজা, গ্লাভস ও অন্যান্য। নিঃসন্দেহে এটি দেশের জন্য গৌরবের, পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনের অন্যতম হাতিয়ারও বটে।
বাংলাদেশ থাকছে এবারের ফিফা বিশ্বকাপে। মাঠের লড়াইয়ে লাল-সবুজদের থাকার কথা এখনো কল্পনাতীত। তবে বাংলাদেশের নামটি এবার থাকছে ফুটবলের মহাযজ্ঞে। কারণ, ব্রাজিলের বিশ্বকাপ জার্সি তৈরি করে সরবরাহ করছে বাংলাদেশের পোশাক কারখানা। আর পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের হলুদ জার্সির নিচে লেখা থাকবে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’। জার্সির মাধ্যমে লুইজ ফেলিপ্পে স্কলারির দল এবার জানবে বাংলাদেশের নাম। ব্রাজিল বিশ্বকাপে স্বাগতিক ব্রাজিলসহ প্রায় সব দেশের জার্সি প্রস্তুতের দায়িত্ব পেয়েছে বাংলাদেশের শতাধিক পোশাক কারখানা। তবে ব্রাজিল ছাড়া বাংলাদেশে তৈরি পোশাক অন্য কোনো দেশ পরে মাঠে নামবে কি নাÑসেটা পরিষ্কার করে এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে ডেনমার্ক ও ফ্রান্সও বাংলাদেশের তৈরি জার্সি পরে খেলার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা গেছে।
গত বছর বাংলাদেশের রানা প্লাজা এবং তাজরীন গার্মেন্ট ট্র্যাজেডিতে সহস্রাধিক পোশাককর্মীর মৃত্যুর খবর জানানো হয়েছিল ব্রাজিল ফুটবল ফেডারেশনকে (সিবিএফ)। এসব বিবেচনা করে তারা বাংলাদেশের পোশাক শ্রমিকদের প্রতি সম্মান জানিয়ে জার্সির নিচে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ লেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলে এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশ না থাকলেও আমাদের দেশের নামটি বিশ্বসেরা ফুটবল দলের সঙ্গে যুক্ত থাকছে। ব্রাজিল বাংলাদেশের তৈরি জার্সি পরে খেললে এটা একটা অসামান্য অর্জন হিসেবেই বিবেচিত হবে। প্রতি বছর বিশ্বের সেরা স্পোর্টস ব্র্যান্ড এডিড্যাস, নাইকি, পুমা বাংলাদেশের শতাধিক গার্মেন্ট থেকে জার্সি শর্টস নিয়ে থাকে। ব্রাজিল বিশ্বকাপ উপলক্ষে চলতি বছরও নিয়েছে। বাংলাদেশে তৈরি নাইকির জার্সি পরে ব্রাজিল মাঠে নামলে অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না। মাঠজুড়ে দর্শক-সমর্থকদেরও অনেকেরই গায়ে থাকবে বাংলাদেশে তৈরি জার্সি ও টি-শার্ট। শুধু মাঠ নয়, এই মহাযজ্ঞের সময়ে বিশ্বজুড়ে ফুটবলপ্রেমীরা মেতে উঠবেন নানা ফ্যাশনে, যার বড় অনুষঙ্গ পোশাক।
বিভিন্ন দেশের খেলোয়াড় এবং দর্শক-সমর্থকদের জন্য অন্তত ১৫ আইটেমের এক কোটি পিসের বেশি পোশাক সরবরাহ করছে বাংলাদেশ। এসব পোশাকের বেশির ভাগই নিট বা গেঞ্জি জাতীয়। বিশ্বকাপ উপলক্ষে গত তিন মাসে নিটপণ্যের রফতানি আদেশ বেড়েছে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৩৫ শতাংশ। তবে প্রদীপের নিচে অন্ধকারের মতো এর একটি নেতিবাচক দিকও রয়েছে। ইংল্যান্ডের প্রভাবশালী জনপ্রিয় সংবাদপত্র ডেইলি টেলিগ্রাফের বরাতে জানা যায়, বিশ্বখ্যাত খেলাধুলার সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ‘নাইকি’ ইংল্যান্ড জাতীয় দলের জার্সি স্পন্সর করেছে। তারা নামমাত্র মজুরিতে সেই জার্সি বানিয়ে নিচ্ছে ঢাকার সাভারের পোশাক কারখানা থেকে। বাংলাদেশি পোশাক শ্রমিকদের পারিশ্রমিক প্রতি ঘণ্টার জন্য মাত্র ২১ পেন্স। সেই হিসেবে পুরো মাসের পারিশ্রমিক মাত্র ৪৭ ইউরো। অথচ প্রতিটি জার্সি বিক্রি করা হয় ১৬০ ইউরোতে। রাশিয়া বিশ্বকাপে অংশগ্রহণকারী কয়েকটি দেশের অফিশিয়াল জার্সি এবার তৈরি হয়েছে বাংলাদেশের পোশাক কারখানায়। যার মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রীয় ইংল্যান্ডের জার্সি। থ্রি লায়ন্সদের সাদা রঙের জার্সিতে রয়েছে বঙ্গযোগ। মার্কিন মিডিয়ায় প্রকাশিত খবর অনুয়ায়ী নাইকির এই জার্সি তৈরি হয়েছে বাংলাদেশের ইপিজেড এলাকার বস্ত্র কারখানায়। সেখানকার শ্রমিকদের বেশির ভাগই মহিলা। ২১ পয়সার বিনিময়ে হ্যারি কেন-মার্কাস র্যাশফোর্ডদের বিশ্বকাপের পোশাক তৈরি করেছেন তারা। তার পরও খুশির বিষয় বাংলাদেশের পোশাক শ্রমিকরা বিশ্বকাপ ফুটবলসহ ঠাঁই করে নিয়েছে বিশ্ব দরবারে। এতে দেশের ভাবমূর্তিও উজ্জ্বল হচ্ছে দিন দিন। অন্য কয়েকটি দেশের পাশাপাশি বিশ্বের বৃহৎ দেশ রাশিয়ায়ও এসব জার্সিসহ অন্যবিধ উপকরণ সর্বোপরি পোশাক রফতানির সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে উঠছে বিশ্বকাপ উপলক্ষে।
লেখক : পরিচালক, এফবিসিসিআই
"