এবার মহাসড়কে যানজট
পাললিক ভূমি বলে কথা। চাষ দিতে হয় না। বীজ বপন করতে হয় না। পড়লেই বৃক্ষ, গুল্ম, লতা তরতরিয়ে বেড়ে ওঠে। যদিও এ দেশে ‘লালন’-এর জন্ম, তবু এদের লালন-পালনের কোনো প্রয়োজন হয় না। অযত্নে-অবহেলায় এরা বেড়ে ওঠে। অনেকটা টোকাইদের মতো। টোকাইদের সংখ্যা বাড়ছে। এতে হা-পিত্যেশ করার কিছু নেই। আগেই বলেছি ভূমিটা উর্বর। মাটিতে বীজ পড়লেই বৃক্ষ হবে। কিন্তু সড়ক-মহাসড়ক তো আর পাললিক নয়। বীজ পড়লেই বৃক্ষের জন্ম হবে না। তবে কেন আজ সড়ক থেকে মহাসড়কে প্রবেশ করেছে এই উর্বরতা? কোন সে অজ্ঞাত কারণে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের উর্বরতা হঠাৎ করেই বেড়ে গেল! আর তারই ফলে আমরা পেলাম যানজটের মহাযজ্ঞ। মির্জাপুর মহাসড়কে গত শুক্রবার ৪০ কিলোমিটার এলাকা ছিল যানজটের মহোৎসব। আর এ মহোৎসবের কারণ সড়ক উন্নয়ন। সড়ক উন্নয়নের নামে রাস্তা আর রাস্তা থাকতে পারেনি, খানাখন্দরে পরিণত হয়েছে। সড়কের দুই পাশে কাঁচা মাটির পাহাড় আর আগাম বৃষ্টিকে দেখানো হয়েছে যানজটের অন্যতম কারণ হিসেবে। কিন্তু আসল কারণ এখানে নিহিত নয়। অন্যত্র। সম্ভবত যারা এ উন্নয়ন পরিকল্পনা ও কর্মকা-ের সঙ্গে সম্পৃক্ত, তাদের মস্তিষ্ক আমাদের পাললিক ভূমির চেয়েও অধিকতর উর্বর(!)। আর সে কারণেই উন্নয়নের সবকিছু থমকে দাঁড়িয়ে পড়ে অথবা পাথরের মূর্তির মতো স্থির দাঁড়িয়ে থাকেÑঅনেকটা মহানগরীর যানজটের মতো। বাড়ছে আমাদের দুর্ভোগ। বছরের পর বছর কলুর বলদের মতো আমরা এ ঘানি টেনেই চলেছি। আরো কত বছর টানতে হবে, তা আমাদের জানা নেই। সম্ভবত এ দেশে যত দিন উন্নয়ন কর্মকা- চলতে থাকবে, তত দিন যেন এই যানজটের হাত থেকে আমাদের মুক্তি নেই।
ঢাকা শহরের যানজটে প্রতিদিন আমরা হারিয়ে ফেলছি লাখ লাখ শ্রমঘণ্টা। এ শ্রমঘণ্টার যেন কোনো মূল্য নেই। অন্তত দেশ ও জাতিকে যারা পরিচালনা করছেন, তাদের কাছে। সবাই কেন জানি উদাসীনতার এক মহাচক্রের মধ্যে আটকে আছি। এই চক্র থেকে বের করে আনার ক্ষমতা কারো আছে বলে মনে করার কোনো যুক্তিসংগত কারণ আছে বলে আমাদের জানা নেই। আমরা এটুকুই জানি, আমাদের স্বদিচ্ছার অভাব রয়েছে। অভাব রয়েছে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের। আমরা মনে করি, একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্তই পারে সবকিছু বদলে দিতে। আমরা সেই রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত পাওয়ার প্রত্যাশায় অপেক্ষায় থাকলাম।
"