ঝুঁকিতে ১২০ কোটি শিশু
কোথায়? কীভাবে এই পৃথিবী আজ সভ্যতার দাবিদার! যেখানে মানুষের মস্তিষ্ক থেকে মানবিক গুণাবলি হারিয়ে গেছে, পালিয়ে গেছে ভালোবাসার অহংকার, বোধের দরোজায় শিকল তুলে দিয়ে মত্ত হয়ে আছে রক্তের হোলিখেলায়। পৃথিবীটা আজ যেন আর সেই পৃথিবী নেই। যা তৈরির উৎসে ছিল মানুষ। যে মানুষের কর্মকা-ে মহিমান্বিত হবে পৃথিবী। হে পৃথিবী; মানুষের কর্মকান্ডে তুমি কতটা মহিমান্বিত হতে পেরেছো, তা আমরা জানি না। তবে এটুকু জেনেছি যে, ঠিক এ মুহূর্তে সংঘাত ও বৈষম্যের ঝুঁকিতে রয়েছে বিশ্বের ১২০ কোটি শিশু; যা বিশ্বের মোট শিশুর ৫০ শতাংশ। যেসব শিশুর শৈশব ও ভবিষ্যতের সম্ভাবনা লুট হয়ে গেছে।
এখনো ২৪ ঘণ্টা পেরোতে পারেনি। গতকাল পালিত হয়েছে বিশ্ব শিশু দিবস। ফি বছরই এ দিবস পালিত হয়। আমরা শুধু দিবসের ফটোসেশন হতেই দেখেছি। দিবসের মধ্য দিয়ে কোনো সুফল আসতে দেখিনি। যদি সুফল আসত, তাহলে বিশ্বের অর্ধেক শিশুকে আজ সংঘাত ও বৈষম্যের ঝুঁকিতে থাকতে হতো না। বস্তুত লুট শব্দটিকে বিশ্বের সব সংঘাত ও বৈষম্য সৃষ্টির মূল কারণ হিসেবে মনে করেন অনেকেই। যার মাঝে সমাজবিজ্ঞানীদের সংখ্যাও কম নয়। ভোগবাদী সমাজব্যবস্থার এটাই চিত্র। এখানে লুটই হচ্ছে অন্যতম দর্শন। এই বিশেষ শব্দটিই অল্প কিছু মানুষকে সম্পদশালী করে আকাশে তুলছে, বিপরীতে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে করেছে পাতালে সমাহিত। আর এই পদ্ধতির জাঁতাকলে পড়ে আজ বিশ্বের ১২০ কোটি শিশু সংঘাত ও বৈষম্যের শিকার।
পরিসংখ্যান বলছে, ১৭৫ দেশের মধ্যে ৯৫টির পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হলেও অবনতি হয়েছে ৪০ দেশে। সূচক অনুসারে সবচেয়ে বেশি উন্নতি হয়েছে সিঙ্গাপুর ও স্লোভেনিয়াতে। এই দুটি দেশ র্যাংকিংয়ের শীর্ষে রয়েছে। একেবারে নিচের দিকে রয়েছে নাইজার, মালি ও সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক। একেবারে নিচের ১০ দেশের মধ্যে আটটিই পশ্চিম ও সেন্ট্রাল আফ্রিকার। এদিকে সেভ দ্য চিলড্রেনের পক্ষ থেকে বলা হয়, বিশ্বে অর্থনীতি ও পরাশক্তি হলেও সূচকে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীন পশ্চিম ইউরোপী দেশসমূহেরও পেছনে রয়েছে। সূচকে এই তিন পরাশক্তির অবস্থান যথাক্রমে ৩৬, ৩৭ ও ৪০। ভোগবাদী সমাজব্যবস্থার অনৈতিক আচরণে বিশ্বে আজ প্রতি মিনিটে ২০ জন মানুষ বাস্তুচ্যুত হচ্ছে। আমরা মনে করি, বিশ্বের সার্বিক কল্যাণে আমরা যেন কখনোই সীমা লঙ্ঘন না করি। লুট করলেও তার মাত্রা যেন সহনশীলতার মধ্যে থাকে। যদিও তার সম্ভাবনা খুবই কম। তবু বলতে হয়, সীমা লঙ্ঘিত হলে সভ্যতা লঙ্ঘিত হবে। সভ্যতা লঙ্ঘিত হলে সংঘাত ও বৈষম্য চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়তেই থাকবে। আর আমরা সভ্যতা থেকে ক্রমেই যোজন যোজন মাইল দূরে সরতে থাকব; যা কখনোই ভবিষ্যৎ পৃথিবীর জন্য মঙ্গল বয়ে আনতে পারবে না। তবে আমরা একটি মঙ্গলময় পৃথিবীর অপেক্ষায় আছি এবং থাকব যেখানে পৃথিবীর অর্ধেক শিশুকে আর সংঘাত ও বৈষম্যের শিকার হতে হবে না।
"