স্বপ্নবিলাসী মানবরা
এ কেমন স্বপ্ন! ১০-১২ লাখ টাকা দালালের হাতে তুলে দিয়ে চোরাই পথে বিদেশযাত্রা। এ যাত্রায় সাফল্যের কথা শোনা না গেলেও ব্যর্থতা ভূরি ভূরি। সম্ভবত জাতির পুরোটাই কিছুটা হলেও স্বপ্নবিলাসী। বেশ কিছুটা। কিন্তু কেন এই স্বপ্নবিলাস? কেন আমরা বাস্তবতার কাছাকাছিও পৌঁছাতে পারি না। শহরের যেকোনো একটি চা-পান-বিড়ি-সিগারেটের দোকানের মাসিক আয় ন্যূনতম ২০ হাজার টাকা। আর এই দোকানের বিনিয়োগ ৫০ হাজার টাকার ঊর্ধ্বে নয়। এখানে সবাই যে পান-বিড়ির দোকান দেবেন, সে কথাও কেউ বলছেন না। পুঁজি বিনিয়োগের ওপর নির্ভর করে নতুন উদ্ভাবনী চিন্তার প্রতিফলন ঘটিয়ে অনেকে অনেক কিছুই করতে পারি। এ দেশে ১০-১২ লাখ টাকা পুঁজি খাটিয়ে ৩০-৪০ হাজার টাকা উপার্জন কোনো কঠিন কাজ নয়। বিষয়টি হলো সিদ্ধান্তের। স্বপ্নবিলাসিতার পথ পরিত্যাগ করে আমাদের বাস্তবমুখী হওয়া প্রয়োজন। তা না হলে মানব পাচারকারী চক্রের হাতে পড়ে সর্বস্ব লুট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জীবনটাও চলে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে। সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে বললে কম বলা হবে। প্রকৃতঅর্থে এ যেন ১০-১২ লাখ টাকা খরচ করে মৃত্যুকে ডেকে আনা।
মাঝে কিছুদিন মানব পাচারের কথা শোনা যায়নি। ইদানীং শোনা যাচ্ছে। মানব পাচারকারী চক্র স্বপ্নের দেশে নিয়ে যাওয়ার মুলা ঝুলিয়ে নব উদ্যোগে মাঠে নেমেছে। ইউরোপ-আমেরিকা যাওয়ার প্রত্যাশীরা হচ্ছেন এই চক্রের সহজ শিকার। পাচারের জন্য অনেক ক্ষেত্রেই নতুন রুট ব্যবহার করছে পাচারকারী চক্র। ইউরোপে প্রবেশের জন্য নৌকায় ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেওয়ার সেই পুরাতন বিভৎস খেলায় আবার মেতে উঠেছে কয়েকটি চক্র। সর্বশেষ যোগ হয়েছে মেক্সিকো সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আমেরিকায় অনুপ্রবেশ। মার্কিন ফেডারেল কোর্টের তথ্যানুসারে, মেক্সিকো সীমান্ত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের সময় গত তিন মাসে দেশটির সীমান্তরক্ষীর হাতে ধরা পড়েছে ১৭১ জন বাংলাদেশি। এরা এখন আমেরিকার জেলখানায় অবস্থান করছেন। ভাগ্য পরিবর্তন করার স্বপ্ন দেখিয়ে তাদেরকে ঝুঁকিপূর্ণ সাগর ও সড়কপথে মেক্সিকো নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তাদের প্রতিজনের কাছ থেকে দালাল চক্র ১২ থেকে ১৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এদিকে ইউর হিউম্যান ট্রাফিকিং পরিসংখ্যান বলছে, জাহাজে করে ইউরোপ বিশেষ করে ইতালিতে পাড়ি দেওয়া মানুষের মধ্যে বাংলাদেশের নাগরিকই সবচেয়ে বেশি।
বিষয়টি আমাদের জন্য কোনো সুখবর নয়। আইনসম্মতভাবে বিদেশে গিয়ে ক্ষেত্রবিশেষে প্রবাসী বাংলাদেশিরা যেখানে ভালো থাকতে পারছেন না; সেখানে পাচারজাতদ্রব্য হয়ে কতটা ভালো থাকবেন, তা অবশ্যই আমাদের ভাবার বিষয়। আমরা মনে করি, ১০-১২ লাখ টাকা খরচ করে অবৈধ পথে বিদেশ যাওয়ার পথ পরিহার করে স্বপ্নবিলাসীদের ঘরের মাটিতেই চারা রোপণ করা উচিত এবং তারা এ পথে ফিরে আসবেন- এটাই আমাদের বিশ্বাস।
"