পণ্যমূল্য স্থিতিশীল রাখুন
রমজানকে কেন্দ্র করে নিত্যপণ্যের দাম বাড়বে। এখন এটাই যেন স্বাভাবিক আর পণ্যমূল্য কতটা বাড়বে এ নিয়ে শঙ্কায় থাকে সবাই। এবার অন্যবারের তুলনায় প্রায় এক মাস আগেই প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে, রোজার শুরুর দিকেও বেড়েছে আরেক দফা। যেমন : গত রোববার রাজধানীর কাঁচাবাজারে প্রতি কেজি লম্বা বেগুন বিক্রি হয়েছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা অথচ বুধবার তা বিক্রি হয়েছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়। মাত্র চার দিনের ব্যবধানে প্রতি কেজি বেগুনে বেড়েছে ২৫ থেকে ৪০ টাকা। এ ছাড়া দাম বাড়ার তালিকায় রয়েছে শসা, গাজর, কাঁচামরিচসহ কয়েক ধরনের সবজি। এ ক্ষেত্রেও যথারীতি রয়েছে ব্যবসায়ীদের নানা অজুহাত। কর্তৃপক্ষের দাম কমানোর প্রতিশ্রুতি আর ব্যবসায়ীদের বাড়ানোর প্রতিযোগিতায় ভোক্তাদের প্রাণ ওষ্ঠাগত। পণ্যমূল্যবৃদ্ধির খেসারত প্রতিনিয়ত ক্রেতাদেরই দিতে হয়। দুঃখজনক হলো, বাজার নিয়ন্ত্রণে কারোরই কোনো শক্ত ভূমিকা নেই। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে কথাবার্তা উঠলে পাইকারি ব্যবসায়ী ও খুচরা ব্যবসায়ী পরস্পরকে দায়ী করেন। এটি বস্তুত একে ধরনের বাজার নিয়ন্ত্রণের প্রয়াস, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
অথচ রমজান হলো সংযমের মাস। আত্মশুদ্ধির মাস। আর এ রমজান মাসেই কি না বাড়তি চাহিদার সুযোগ নিয়ে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী অতি মুনাফা লাভের আশায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যমূল্য অস্থিতিশীল করার প্রয়াস চালায়, যা কোনো বিবেকবান মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। গতকাল প্রতিদিনের সংবাদে ‘হঠাৎ বেড়েছে বেগুনের দাম : কেজি ৮০-১০০ টাকা’ শিরোনামে এক বিশেষ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, চলতি মাসের শুরু থেকেই বেগুনের দাম বাড়ছে। এপ্রিল মাসে ৩০-৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া বেগুনের দাম মে মাসের শুরুতেই এক লাফে বেড়ে হয় ৭০ টাকা। আরো কয়েক দফা বেড়ে এখন অনেক বাজারেই ১০০ টাকা কেজি দরে বেগুন বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি একই অবস্থা অন্যান্য সবজিরও। রোজা শুরুর পর থেকেও প্রতিদিনই বাড়ছে প্রায় সব ধরনের সবজির দাম। মাছ-মাংসের বেশি দামের কারণে যারা অন্তত সবজি দিয়ে দিন পার করতেন, এখন ভোগান্তিতে পড়েছেন সেসব স্বল্প আয়ের মানুষও। মাছের দাম রমজানের শুরুতেই বেড়ে গেছে। অন্যদিকে, সিটি করপোরেশন গরুর মাংসের দর কেজিপ্রতি ৪৫০ টাকা বেঁধে দিলেও বিক্রি হচ্ছে ৪৮০ থেকে ৫০০ টাকায়। অন্যান্য দ্রব্যেরও একই অবস্থা।
মূলত কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী উদার-বাণিজ্য ব্যবস্থার সুযোগ নিয়ে বাজারের স্বাভাবিক গতিকে ব্যাহত করার অপপ্রয়াসে লিপ্ত থাকে। অতীতেও আমরা দেখেছি, সময় ও সুযোগ বুঝে বাজারকে অস্থিতিশীল করে তোলার নানা রকম অপপ্রয়াস চালানো হয়েছে। এতে একদিকে যেমন সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়ে, অন্যদিকে দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকা-েও বিরূপ প্রভাব পড়ে। ব্যবসায়ে মুনাফা অর্জন স্বতঃসিদ্ধ ও স্বাভাবিক একটি প্রক্রিয়া। কিন্তু মুনাফা অর্জনের নামে নীতিজ্ঞানহীন কর্মকা- সমর্থনযোগ্য নয়। তাই, রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে সরকারের পাশাপাশি দেশের ব্যবসায়ীরা আন্তরিক হবেনÑএটাই আমাদের প্রত্যাশা।
"