যানজটে তৈরি হচ্ছে জীবনজট
জীবন কখনোই সাদামাঠা ছিল না। কিছুটা, বেশ কিছুটা, অথবা পুরোটাই জটিল। এই জটিলতার মধ্যেই আমাদের বসবাস। যদি মানুষ হিসেবে আমরা প্রকৃত অর্থেই মানব চরিত্রের প্রতিফলন ঘটাতে পারতাম, তাহলে পৃথিবী হয়তো জটিলতামুক্ত পৃথিবী হতে পারত। আমরা সেই প্রতিফলন ঘটাতে পারিনি। পারিনি বলেই আজকের বিশ্ব যেন চরম স্বেচ্ছাচারিতায় নিমজ্জিত এক জটিল পৃথিবী।
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা মহানগর সেই জটিল পৃথিবীর একটি অংশ। যেখানে শুধু যানজটেই প্রতিদিন ৩৮ লাখ কর্মঘণ্টার অপচয় হয়। হিসাবটি বিশ্বব্যাংকের। ২০১৭ সালে বিশ্বব্যাংক তথ্যটি সরবরাহ করে। এক বছর পর অর্থাৎ ২০১৮ সালে বুয়েটের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, অপচয়ের পরিমাণ এখন আর ৩৮-এ নেই। তা এখন ৫০ লাখ কর্মঘণ্টাকেও ছাড়িয়ে গেছে। বুয়েটের পক্ষ থেকে আরো বলা হয়, এ যানজটে বছরে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৩৭ হাজার কোটি টাকা, যা জাতীয় বাজেটের ১১ শতাংশ।
বিশ্লেষকদের মতে, ‘এই যানজট যদি ৬০ শতাংশ কমানো যায়, তাহলে ২২ হাজার কোটি টাকা বাঁচানো সম্ভব।’ বাঁচানো কথাটির ভেতরে কোনো নতুনত্ব নেই। অনেক আগে থেকেই এ দেশের মানুষ তা শুনে আসছে। কিন্তু যার কানে পৌঁছালে এর একটা বিহিত হতে পারে, তিনি বা তারা সম্ভবত কুম্ভকর্ণের মতো ঘুমিয়ে আছেন। তাদের ঘুম ভাঙে না বলেই পিক-আওয়ারে ঢাকা শহরের গণপরিবহনগুলোর গতিবেগ নেমে আসে ওয়ান ডিজিটে (ঘণ্টায় পাঁচ কিলোমিটার)। যেখানে হেঁটে চলার গড় গতিও পাঁচ কিমির কম নয়। এভাবে চলতে থাকলে ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে ঢাকা শহরের কোনো পিক-আওয়ারে গণপরিবহনের এই গতি মাইনাস পাঁচ (-৫) কিমিতে পৌঁছালেও অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না। সুতরাং সময় থাকতে একটি গ্রহণযোগ্য সমাধানে পৌঁছানোই হবে সঠিক কর্ম।
আমরা মনে করি, এ কর্মটি করার জন্য প্রয়োজন একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের। ঢাকা থেকে জনসংখ্যা কমাতে হবে এবং তা ডিসেন্ট্রালাইজেশনের মাধ্যমে। বর্তমানে মহানগর ঢাকার জনসংখ্যা প্রায় দুই কোটি। ৪০ লাখ লোক দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে কাজের উদ্দেশ্যে প্রতিদিন সকালে এ শহরে প্রবেশ করে এবং কাজ শেষে বেরিয়ে যায়। শিল্প-কারখানাগুলোকে মহানগরের বাইরে সরিয়ে দেওয়া হলে এখানে জনসংখ্যার চাপ কমতে পারে। এই মহানগরে ধান গবেষণাগার রাখার কোনো প্রয়োজন আছে কি না অথবা কৃষিখামার রাখার প্রয়োজনীয়তা কতটুকু কিংবা মৎস্য ভবন! এ বিষয়ে নতুন ভাবনা এবং সিদ্ধান্তের প্রয়োজন। বিষয়টি সহজ নয়। তবে অসম্ভবও নয়। সরকার যদি সিদ্ধান্ত নেয় এবং তা বাস্তবায়নে এগিয়ে আসে, তাহলেই বিষয়টির সুরাহা হতে পারে। অন্যথায় আমরা যে অবস্থায় আছি, সেখান থেকে বেরিয়ে আসার কোনো সুযোগ নেই।
"