ইফতেখার আহমেদ টিপু

  ২১ মে, ২০১৮

প্রযুক্তি

স্যাটেলাইটের সর্বোত্তম ব্যবহার

স্যাটেলাইট বা উপগ্রহের যুগে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। মহাকাশেও ঘোষিত হয়েছে বাংলাদেশের অস্তিত্ব। শুক্রবার রাত ২টা ১৪ মিনিটে ঊর্ধ্বাকাশে ডানা মেলেছে দেশের প্রথম স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১। যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে তীব্র আগুনের হলকা ছুটিয়ে স্যাটেলাইটটি মহাকাশের নির্দিষ্ট কক্ষপথের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। এর ফলে স্যাটেলাইটের অভিজাত ক্লাবের ৫৭তম সদস্য হিসেবে যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ।

বহুল আকাক্সিক্ষত ঐতিহাসিক এ ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহাকাশে বাংলাদেশের পতাকা-সংবলিত স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের জন্য দেশবাসীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাতেই বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের কথা ছিল। চমৎকার আবহাওয়া থাকা সত্ত্বেও শেষ মুহূর্তে তা স্থগিত করা হয় কম্পিউটার থেকে সবুজ সংকেত না মেলায়। শুক্রবার রাতে সফলভাবেই সম্পন্ন হয় উৎক্ষেপণ। মহাকাশের নির্ধারিত ১১৯ দশমিক ১ ডিগ্রি দ্রাঘিমাংশের কক্ষপথে বাংলাদেশের অহঙ্কারের প্রতীক বঙ্গবন্ধু-১। এক মাসের মধ্যে পাওয়া যাবে এর পূর্ণাঙ্গ সেবা। কৃত্রিম স্যাটেলাইটটি ভূপৃষ্ঠ থেকে ২২ হাজার মাইল ওপরে অবস্থান করে প্রায় ৪০ ধরনের সেবা দিয়ে যাবে বাংলাদেশসহ এই অঞ্চলের জন্য। ২ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ কক্ষপথে পৌঁছালে বাংলাদেশের দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবিলা ও ব্যবস্থাপনায় নতুন মাত্রা যোগ হবে। স্যাটেলাইটভিত্তিক টেলিভিশন সেবা ও জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কাজেও এ স্যাটেলাইট কাজে লাগানো যাবে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এ স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইন্টারনেট ও টেলিযোগাযোগ সেবার সম্প্রসারণও সম্ভব হবে। শুধু বাংলাদেশ নয়, এ স্যাটেলাইটের আওতায় আসবে সার্কভুক্ত সব দেশ, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, মিয়ানমার, তাজিকিস্তান, কিরগিজস্তান, উজবেকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান ও কাজাখাস্তানের কিছু অংশ। স্যাটেলাইটটি কার্যকরের পর এর নিয়ন্ত্রণ যাবে যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি ও কোরিয়ার তিনটি গ্রাউন্ড স্টেশনে। শিগগিরই বাংলাদেশের হাতে এর নিয়ন্ত্রণ আসবে। আমরা আশা করব, মহাকাশে স্যাটেলাইট নিক্ষেপই শুধু নয়, দেশ ও জনগণের কল্যাণে তার সর্বোত্তম ব্যবহারও নিশ্চিত করা হবে।

স্যাটেলাইটের বাণিজ্যিক দিক প্রসঙ্গে বিটিআরসি জানিয়েছে, দেশে এখন প্রায় ৩০টি স্যাটেলাইট চ্যানেল সম্প্রচারে আছে। এসব চ্যানেল সিঙ্গাপুরসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে স্যাটেলাইট ভাড়া নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। এ জন্য প্রতি মাসে একটি চ্যানেলের ভাড়া বাবদ গুনতে হয় তিন থেকে ছয় হাজার মার্কিন ডলার। সব মিলিয়ে স্যাটেলাইটের ভাড়া বাবদ বছরে চ্যানেলগুলোর খরচ হয় ২০ লাখ ডলার বা প্রায় ১৭ কোটি টাকা। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট চালু হলে এই স্যাটেলাইট ভাড়া কমবে। আবার দেশের টাকা দেশেই থেকে যাবে। শুধু তাই নয়, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের ট্রান্সপন্ডার বা সক্ষমতা অন্য দেশের কাছে ভাড়া দিয়েও বৈদেশিক মুদ্রা আয় করার সুযোগ থাকবে। এই স্যাটেলাইটের ৪০টি ট্রান্সপন্ডারের মধ্যে ২০টি ভাড়া দেওয়ার জন্য রাখা হবে বলে সরকার থেকে বলা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনে এই স্যাটেলাইটের ট্রান্সপন্ডার বিক্রির জন্য সরকারের গঠন করা বঙ্গবন্ধু কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি (বিসিএসবি) লিমিটেড কাজ শুরু করেছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের আরেকটি বিক্রয়যোগ্য পণ্য হবে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথ।

বিটিআরসির তথ্য অনুযায়ী, বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটে মোট ৪০টি ট্রান্সপন্ডারের মধ্যে ২৬টি কেইউ-ব্যান্ড ও ১৪টি সি-ব্যান্ড। প্রতিটি ট্রান্সপন্ডার থেকে ৪০ মেগাহার্টজ হারে তরঙ্গ বরাদ্দ (ফ্রিকোয়েন্সি) সরবরাহ পাওয়া সম্ভব। এ হিসাবে ৪০টি ট্রান্সপন্ডারের মোট ফ্রিকোয়েন্সি ক্ষমতা হলো ১ হাজার ৬০০ মেগাহার্টজ। কিছু কারিগরি সীমাবদ্ধতার কারণে এই ১ হাজার পুরোটা ব্যবহার করা যাবে না। তবে কমপক্ষে ১ হাজার ৪০০ মেগাহার্টজ ব্যবহার করা সম্ভব হবে।

বিটিআরসি জানিয়েছে, ফাইবার অপটিক দিয়ে সরবরাহ করা ব্যান্ডউইডথের তুলনায় স্যাটেলাইট নিয়ন্ত্রিত ইন্টারনেট ব্যান্ডউইডথের খরচ প্রায় ১০০ গুণ বেশি। দেশের ৭৫০ ইউনিয়নে এখন ফাইবার অপটিক ইন্টারনেটের সংযোগ নেই। ইন্টারনেটবঞ্চিত এমন এলাকার মধ্যে রয়েছে পার্বত্য ও হাওর অঞ্চল। স্যাটেলাইটের মাধ্যমে এসব প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব। ঝড় বা বড় ধরনের দুর্যোগে যোগাযোগব্যবস্থা সচল রাখতেও কার্যকর হবে এ স্যাটেলাইট। এ ধরনের বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোবাইল নেটওয়ার্ক অনেক সময় অচল হয়ে পড়ে। তখন স্যাটেলাইটের মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলের যোগাযোগব্যবস্থা চালু রাখা সম্ভব হবে। সুবিধাবঞ্চিত অঞ্চলের মানুষের ইন্টারনেট ও ব্যাংকিংসেবা, টেলিমেডিসিন ও দূরনিয়ন্ত্রিত শিক্ষাব্যবস্থা প্রসারেও ব্যবহার করা যাবে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট।

এ স্যাটেলাইট থেকে তিন ধরনের সুফল পেতে পারে দেশের মানুষ। প্রথমত, এ স্যাটেলাইটের সক্ষমতা বিক্রি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় ও সাশ্রয় দুটিই করা যাবে। দ্বিতীয়ত, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইন্টারনেট ও টেলিযোগাযোগ সেবার সম্প্রসারণ করা সম্ভব হবে। তৃতীয়ত, দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবিলা ও ব্যবস্থাপনায় দারুণ কার্যকর ভূমিকা রাখবে এই স্যাটেলাইট। এ ছাড়া জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কাজেও এ স্যাটেলাইটকে কাজে লাগানো সম্ভব। তবে এসব সম্ভাবনাকে ছাড়িয়ে যে বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে, সেটি হলো বাংলাদেশের ভাবমূর্তি। বঙ্গবন্ধু-১-এর মাধ্যমে স্যাটেলাইট প্রযুক্তির অভিজাত দেশের ক্লাবে বাংলাদেশ প্রবেশ নিশ্চিতভাবে বাংলাদেশের মর্যাদাকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।

লেখক : চেয়ারম্যান ইফাদ গ্রুপ

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist