জাহাঙ্গীর আলম জাবির

  ১৮ মে, ২০১৮

ইসলাম

স্বাগতম মাহে রমজান

মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে তার অশেষ নিয়ামতের মাস ‘মাহে রমজান’ দান করেছেন। এ মাসের প্রতিটি মুহূর্ত আল্লাহর নিয়ামতে সিক্ত। এ মাসে এমন একটি রাত রয়েছে, যা আল্লাহর ঘোষণায় হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম মর্যাদাপূর্ণ রাত ‘লাইলাতুল কদর’। কদরের মহিমান্বি^ত এই রাতে আল্লাহ মানুষকে সত্য পথ দেখানোর জন্য পথ নির্দেশক, হক ও বাতিলের পৃথককরণের জন্য স্পষ্ট প্রমাণাদি রূপে নাজিল করেছেন পবিত্র কোরআন। বরকতপূর্ণ রমজানের নিয়ামতরাজি এখানেই শেষ নয়, রমজানের পুরোটা মাস আমাদের ওপর রোজার জন্য নির্ধারিত করা হয়েছে। আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত তার কালামে পাকে বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে যে এই মাসটি প্রত্যক্ষ করবে সে অবশ্যই এ মাসে রোজা পালন করবে’। মাহে রমজানের শ্রেষ্ঠত্ব এবং বরকতপূর্ণ মর্যাদা এখানেই। এ মাস পবিত্র কোরআন নাজিলের মাস। এ মাস হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম কদরের রাতকে ধারণ করে আছে। সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উম্মতের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে এক বিশেষ দান এ মাস। পবিত্র রমজানের ইবাদত আল্লাহর কাছে মকবুল ইবাদতরূপে গণ্য। আল্লাহর দরবারে এ মাসের ইবাদতের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। বিশেষ করে রমজানের রোজা হলো বান্দার আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের সেতুবন্ধন স্বরূপ।

হাদিস শরীফে এসেছে, ‘রোজা আগুন থেকে রক্ষা পাওয়ার ঢাল বিশেষ।’ এই আগুন আল্লাহর মহাক্রোধের আগুন দোজখ নামক ভয়াবহ নিকৃষ্ঠতম যন্ত্রণার আগুন। রোজাদারদের রোজা ভয়াল এই আগুনের বিরুদ্ধে ঢাল হিসেবে কাজ করে। হাদিস শরীফে আরো এসেছে, ‘রমজান মাসে বেহেশতের যাবতীয় কপাট খুলে দেওয়া হয়, দোজখের দরজাগুলো বন্ধ রাখা হয় এবং শয়তানকে শেকল দিয়ে গলায় বেড়ি পরিয়ে বন্দি করে রাখা হয়।’ তাই রমজান জান্নাত প্রত্যাশিত মুমিন বান্দাদেরই মাস। অভিশপ্ত শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে মুক্ত খোদাভীরু পরহেজগার বান্দাদের জন্যই মাহে রমজান। মুনাফিক ও মুমিনের মধ্যে পৃথক রেখা টেনে দেয় এই মাস। মহান আল্লাহ বলেছেন, আলিফ লাম মিম, ‘লোকেরা কী ধারণা পোষণ করে যে, ঈমান এনেছি বললেই তাদেরকে অব্যাহতি দেওয়া হবে আর তাদেরকে পরীক্ষা করা হবে না? নিশ্চয়ই তাদের পূর্ববর্তীদের পরীক্ষা করেছি।’

পবিত্র মাহে রমজানের আগমনকে আমাদের মহাপ্রাপ্তি হিসাবে গ্রহণ করা উচিত। আমাদের ওপর ফরজকৃত রমজানের রোজাকে পরিপূর্ণ আদব ও খালিছ ইবাদতের পূর্ণ হকসহ আদায় করতে হবে। হাদিস শরীফে রোজাকে বলা হয়েছে ‘শরীরের জাকাত’ এবং বলা হয়েছে রোজা ধৈর্যের অর্ধেক এবং ধৈর্যের প্রতিদান জান্নাত। আর রোজা ঢাল মানে আল্লাহর আজাব থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায়। আমাদের মনে রাখতে হবে, কেবল পানাহার এবং স্ত্রীসম্ভোগ থেকে মুক্ত থাকার নামই রোজা নয়। বস্তুত, আল্লাহ তায়ালার শরীয়তে রোজার বিধান শুধুমাত্র এই দুই কর্ম থেকে বিরত থাকার জন্য প্রবর্তন করেননি। রোজা প্রবর্তন করা হয়েছে খানাপিনা, স্ত্রীসম্ভোগ এবং একই সঙ্গে সব ধরনের হারাম, নাজায়েয কাজ হতে বিরত থাকার জন্য। রোজাদারের কর্তব্য হলো, নিজের চোখ-কান অথবা রসনা দ্বারা কাউকে কষ্ট না দেওয়া। পবিত্র রমজান ইবাদত ও সন্তুষ্টির মাস। রমজানের রোজাদার, রমজানের নামাজি, ইবাদতকারী, কোরআন তেলাওয়াতকারী বান্দার প্রতি আল্লাহ খোশ খবর প্রদান করেন। তাদেরকে আল্লাহর রহমত এবং সন্তুষ্টির সুসংবাদ দেন। তাদের জন্য চিরসুখের জান্নাত এবং স্থায়ী অবিনাশী নিয়ামতরাজির ঘোষণা দেন। ইমাম বায়হাকির (রা.) বর্ণনায় এসেছে, প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন; ‘রমজান মাসে আল্লাহ আমার উম্মতকে পাঁচটি জিনিস দান করেছেন, যা ইতোপূর্বে কোনো নবীকে দান করা হয়নি। এর প্রথমটি হলো, যখন রমজান মাসের প্রথম রাত আসে, আল্লাহ উম্মতের প্রতি নজর দেন। আর যার প্রতি আল্লাহ দৃষ্টি নিক্ষেপ করেন, তাকে কখনো আজাবে প্রবিষ্ট করবেন না। দ্বিতীয়টি, রোজাদাররা যখন শেষ বেলায় উপনীত হয়, তাদের মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকট মৃগনাভী-কস্তুরী অপেক্ষা অধিক প্রিয় মনে হয়। তৃতীয়টি, ফেরেশতারা তাদের জন্য দিনরাত দোয়া করতে থাকেন। চতুর্থটি, আল্লাহ তায়ালা জান্নাতকে নির্দেশ দিয়ে বলেন, প্রস্তুতি নাও, সজ্জিত হও আমার বান্দাদের জন্য। অচিরেই তারা দুনিয়ার ক্লেশ হতে মুক্ত হয়ে আমার ঘরে আমার সম্মানের পাদদেশে আরাম করার জন্য আসবে। আর পঞ্চমটি, যখন রমজানের শেষ রাত হয় তখন সবাইকে আল্লাহ তায়ালা মাফ করে দেন। উপস্থিত লোকজনের মধ্য হতে একজন বলল; তা কি কদরের রাত? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘না, দেখ না শ্রমিকদের? তাদের কাজ যখন সমাপ্ত করে তখন তাদের পূর্ণ পারিশ্রমিক প্রদান করা হয়।’ ইমাম তিরমিজি (রা.)-এর বর্ণনায় এসেছে, দয়াল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘কউ যদি প্রদত্ত অবকাশ ও অসুস্থতা ব্যতীত একদিনও রমজানের দিনের রোজা ভঙ্গ করে, জীবনভর রোজা রাখলেও তার পরিপূরক হবে না।’ তাই রমজানের রোজাকে বোঝা মনে করে আল্লাহর নিয়ামত থেকে আমরা যেন বঞ্চিত না হই। হে আল্লাহ আমাদেরকে রহমত নিয়ামতে ভরপুর রমজানুল মোবারকে আত্মশুদ্ধি ও নাজাতের উছিলা হিসাবে কবুল করুন।

লেখক : কলামিস্ট ও সাংবাদিক

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist