মাদক নিয়ন্ত্রণ জরুরি
কোনোভাবেই মাদককে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। এতে সমাজে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে। এ নিয়ে সরকারও উদ্বিগ্ন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা এর উৎকৃষ্ট প্রমাণ। কিন্তু তার পরও অবস্থার কোনো পরিবর্তন নেই। এতে মনে হচ্ছে, কোথাও না কোথাও বড় ধরনের ঘাটতি রয়েছে। নতুবা এত হাঁক-ডাকের পরও সমস্যার সমাধান কেন হবে না? পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, দেশে বর্তমানে প্রায় নয় কোটি মানুষ মাদকের চরম ঝুঁকিতে। এর মধ্যে মাদকাসক্তের সংখ্যা ৭০ লাখ। যার ৬৫ ভাগ তরুণ। আর মাদকসেবীদের ৮০ শতাংশই ইয়াবায় আসক্ত। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, খোলা চোখে যা দেখা যাচ্ছে বাস্তবে মাদকাসক্তের সংখ্যা এর চেয়েও কয়েক গুণ বেশি, যা থেকে রক্ষা পাচ্ছে না নারীরাও। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের অভিযানের পরও মাদকের বিস্তৃতি বাড়ছে। এ নিয়ে জনমনে দেখা দিচ্ছে নানা প্রশ্ন।
বর্তমান বিশ্বের সব দেশের জন্যই মাদক একটি জটিল সমস্যা। কারো জন্য কম, কারো জন্য বেশি। তবে আমাদের দেশে তার ভয়াবহতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বিশেষ ??? ইয়াবা নামের মাদকের কালো থাবা থেকে রেহাই পাচ্ছে না সমাজের কোনো স্তর কিংবা শ্রেণি-পেশার মানুষ। তবে এই নীল আগ্রাসনের সবচেয়ে বেশি শিকার হচ্ছে দেশের তরুণ প্রজন্ম। বিশেষ করে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা। কারণ, ক্যাম্পাসে বসে তারা খুব সহজেই মাদক হাতে পাচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, অনলাইনে অর্ডার করলে ঘরে বসেই তা পেয়ে যাচ্ছে। শিক্ষাজীবন শেষ করে স্বপ্নের দেশ গঠনে ভূমিকা রাখবে যে তরুণরা, সেখানে তারা প্রবেশ করছে স্বপ্নহীন এক অন্ধকার জগতে। যে জীবন ধুঁকে ধুঁকে শেষ করে দিচ্ছে জাতির মেরুদ-। মাদকাসক্ত স্বামীর হাতে স্ত্রী, ভাইয়ের হাতে ভাই, ছাত্রের হাতে শিক্ষক খুন হচ্ছেন। মাদকের কারণে তছনছ হচ্ছে পরিবার, প্রতিদিনই ভাঙছে কোনো না কোনো সংসার। বাড়ছে পারিবারিক দ্বন্দ্ব-বিভেদ, অস্থিরতা। এমনকি মাদকের টাকা সংগ্রহে ব্যর্থ হয়ে আদরের সন্তানকে বিক্রি করে দেওয়ার মতো মর্মস্পর্শী ঘটনাও ঘটেছে। সবকিছু ছাপিয়ে সর্বনাশা মাদক ধ্বংস করছে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম।
আমরা মনে করি, জাতীয় স্বার্থের কথা বিবেচনা না করে যদি কেউ শুধু লোক দেখানোর জন্য তা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে, তাহলে কাজের কাজ কিছুই হবে না। বিপরীতে সমাজে হাহাকার বাড়বে। উল্টো ফলাফল যে তিমিরে থাকার, সেখানেই পড়ে থাকবে। বরং মাদকের বিস্তার ও ভয়াবহতা আরো বাড়বে। গত প্রায় সাড়ে তিন দশকের অভিজ্ঞতা সে কথাই বলে। ইতিহাস-সমাজ-সংস্কৃতি বিবেচনায় না নিলে, সংশ্লিষ্ট সংস্থার কাঠামোতে পরিবর্তন না ঘটালে মাদক সমস্যার কার্যকর কোনো সমাধান মিলবে না। তাই এ বিষয়ে সরকারকে সার্বিক অবস্থার কথা ভেবে নীতি-প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। মাদক নির্মূলের আগে নিরাময়ে মনোনিবেশ করতে হবে। আর সমাজকে রক্ষণশীলতার দৃষ্টিতে নয়, সমস্যা সমাধানের দৃষ্টিতে দেখে সমাধানের উপায় বিবেচনায় নেওয়াটাই এ মুহূর্তে জরুরি।
"